ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় খালে জালের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২২ নভেম্বর ২০১৭

কলাপাড়ায় খালে জালের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২১ নবেম্বর ॥ করমজাতলীর ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি সরকারের। জনসাধরণের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা। কিন্তু এটি প্রভাবশালী কয়েকচক্র ২০টি ভাগে ভাগ করে জাল ঘিরে মাছ শিকার করছে। নির্দিষ্ট ওই চক্রের ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খোলার সাহসও পাচ্ছেন না। এমনকি খালের পানি ব্যবহারেও বিধিনিষেধ রয়েছে। যেন মগের মুল্লুক। চম্পাপুর ও ধানখালী ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত খালটি এখন আর জনগণের কোন কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না। তারা ওই মহলের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। রাজনৈতিক দলের ইতিবাচক কর্মকান্ড- এখানে না থাকলে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় ক্যাডাররা দু’বছর খালটি দখলে নিয়ে দলের নেতিবাচক কর্মকা-ের কুখ্যাতি ছড়িয়েছে। মাছের চাষ করতে সূক্ষ্ম ফাঁসের এক ধরনের ভ্যাসন জালের বেড়া দেয়া রয়েছে। যার ফাঁক দিয়ে মাছ তো দূরের কথা পানি চলাচলও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান- প্রিন্স হাওলাদার, আসমান ঘরামী, সোহাগ ঘরামী, রিয়াজ আকন, বেল্লাল হাওলাদার, সেন্টু প্যাদা, রেজা গাজী, জহিরুল হাওলাদার, সানু হাওলাদার, মহসিন হাওলাদার, রাতুল গাজী, আমিরুল সিকদার, মামুন সিকদার, রুবেল তালুকদার, বারিউল খান, রফিক হাওলাদার, মহিউদ্দিন সিকদার, জাহাঙ্গীর প্যাদা, মোশারফ প্যাদা, খবির মোল্লা, মজনু মোল্লা, বাচ্চু মোল্লাসহ কয়েকজন জালের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করেছে। এই ক্যাডাররা খাল দখল করে রেখেছে। স্থানীয়রা জানান, সরকারী খাল আটকে মাছ চাষ করায় খালের পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালটি সাধারণের জন্য খোলা থাকা উচিত। দখলদাররা আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে সরকারী খাল দখল করেছে। গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, খালটিতে জাল আর জাল। জালের দখলে পুরো খালটি। এক সময় সাধারণ গরিবসহ সকল শ্রেণীর মানুষ এ খালে জাল ফেলে মাছ-পোনা ধরত, এখন বন্ধ হয়ে গেছে। খালটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা জরুরী। সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘ খালটিতে শুধু জাল আর জাল। অন্তত ২০টি স্পটে মাছ চাষ করা হয়েছে। ২০০-২৫০ ফুট করে জালের বেড়া দিয়ে তাতে মাছ চাষ করা হয়েছে। বেড়ার জন্য খালে ভ্যাসন জাল ব্যবহার করা হয়েছে। জালের সঙ্গে বাঁশ আর খুঁটি পোতা হয়েছে। জালের কারণে খালের স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। জনসাধারণের আর কোন কাজে আসছে না। রাতুল গাজী, আইয়ুব হাওলাদার, মোশারফ হাওলাদারসহ কয়েকজনের দাবি, এলাকার বেকার ছেলেরা খাল পরিষ্কার করে মাছ চাষ করেছে। তা ছাড়া খালটি দীর্ঘদিন কচুরিপানায় ভরা ছিল। এতে পরিবেশের ক্ষতি করত। এখন মাছ চাষ করা হয়েছে। এতে ক্ষতির কী? দখলদার আসমান ঘরামী, মহিউদ্দিন সিকদার, রুবেল তালুকদার, মোশারফ প্যাদাসহ অপর কয়েকজন এ নিয়ে কোন কথা বলেননি। চম্পাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার বলেন, খালটির বেশিরভাগ অংশ আমার ইউনিয়নে পড়েছে। গরিব লোকজন আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমি দখলদারদের অনেককেই খাল ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেছি। ধানখালীর চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ গাজী বলেন, লোকজন মিলেমিশে খালে জালের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করছে। এতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, সরকারী খালকে কেউই নিজের খেয়াল-খুশিমতো ব্যবহার করতে পারে না। খালটিতে যারা জালের বেড়া দিয়ে মাছ চাষ করেছে, তাদের জাল সরিয়ে নিতে ওই এলাকার তহশিলদারদের মাধ্যমে বলা হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে জাল সরানো না হলে, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জনস্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কেউ ছাড় পাবে না।
×