বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের নাগরিক সমাবেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালককে উদ্দেশে করে লেখা ধন্যবাদ স্মারকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ কেবল বাংলাদেশের মানুষকেই নয়; বিশে^র দেশে দেশে নির্যাতিত-নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত মানবজাতি-জনগোষ্ঠীকে সুবিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও শান্তির পক্ষে যুগেযুগে অনুপ্রাণিত করবে। সমগ্র পৃথিবীর যারা নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য সংগ্রাম করছেন তাদের যুগে যুগে উৎসাহ দেবে।
শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক কমিটি আয়োজিত ‘নাগরিক সমাবেশ’ থেকে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই ধন্যবাদ স্মারক দেয়া। ধন্যবাদ স্মারকটি সমাবেশে পাঠ করে শোনান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ধন্যবাদ স্মারকটি ইউনেস্কোর মহাপরিচালকের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য তা বাংলাদেশে সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্রিস কালদুলের হাতে তুলে দেন ওবায়দুল কাদের।
ধন্যবাদ স্মারকে বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (প্রাক্তন রেসকোর্স ময়দান) দেশের গণ্যমান্য ও বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের এক বিশাল সমাবেশ হয়। এতে উপস্থিত দেশের অগ্রগামী ব্যক্তিবর্গ আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অনন্য-অসাধারণ ভাষণকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ^ ঐতিহ্যের স্মরণকালের আন্তর্জাতিক প্রামাণিক দলিল’ হিসেবে নিবন্ধিত করায় আপনাকে এবং আপনার পূর্বসূরি ইরিনা বোকোভাকে হৃদয়-উৎসারিত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে।
স্মারকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ সম্ভবত পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ভাষণ, যা একটি জাতি-রাষ্ট্র, বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। তাঁর এ কালজয়ী ভাষণ সে দিনের সাড়ে সাত কোটি বাঙালীকে বিপুলভাবে আলোড়িত ও আন্দোলিত করেছিল এবং দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কৃষ্ণ রাতে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর নিরস্ত্র জনতার ওপর স্মরণাতীতকালের নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে যার যা-কিছু হাতে ছিল তা নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং পরিশেষে অগণিত শহীদের জীবন ও মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমাদের দেশ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করে।
নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে দেয়া স্মারকে আরও বলা হয়, পাকিস্তানী সামরিক জান্তার নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর সশস্ত্র যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বাঙালীর জাতীয় মুক্তির দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে আসেন। তাই ইতিহাসের এই মহানায়কের আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল ১৯৪৮ সালে ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ঘোষিত সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের আদর্শের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ। আমরা আন্তরিকভাবে বিশ^াস করি যে, আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কেবল বাংলাদেশের মানুষকেই নয়; বিশে^র দেশে দেশে নির্যাতিত-নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত মানবজাতি-জনগোষ্ঠীকে সুবিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও শান্তির পক্ষে যুগেযুগে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা, বাংলাদেশের নাগরিকবৃন্দ ইউনেস্কোর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সকল কর্মকা-ের প্রতি জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে আমাদের আন্তরিক সমর্থন জ্ঞাপন করছি, যা পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যরে সেতুবন্ধন তৈরি করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ^াস। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের সুস্থ জীবন ও শান্তি কামনা করেন। পাশাপাশি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে ইউনেস্কো আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন দেশের আরও ৭৭ ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণকেও গত মাসের শেষে ‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করে নেয় ইউনেস্কো।