ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী/রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটকসহ সব প্রবেশপথে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে শতাধিক পুলিশ সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনসহ ছেলেদের আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিরাপত্তাপ্রহরীর পাশাপাশি নিয়োজিত আছে আরও শতাধিক পুলিশ সদস্য। এছাড়া ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় ক্যাম্পাসে টহল দেয় প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশের একাধিক টিম। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো আছে সিসিটিভি। কঠোর এই ‘নিরাপত্তা বেষ্টনী’ ভেদ করে একের পর এক অপরাধ কর্মকা- সংগঠিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে ছাত্র খুনের মতো একাধিক ঘটনার পরেও শুক্রবার ছাত্রী অপহরণের ঘটনায় রাবির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশ-প্রহরীকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে বহিরাগত একটি মাইক্রোবাস ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ছাত্রীকে উঠিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ছাত্রী অপহরণের এই ঘটনায় রাবির নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানায়, রাবির পাঁচটি প্রবেশপথ, দুটি পুলিশ ফাঁড়ি, ১৬টি হল এবং ক্যাম্পাস মিলিয়ে ৫শ’ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র কয়েক শ’ গজ দূরেই রয়েছে মতিহার থানা। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে শিবিরকর্মীরা ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার পর ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বৃদ্ধিকল্পে এসব পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। এর মধ্যেও ক্যাম্পাসে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গত বছর হলের মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু এবং ২০১৪ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দকে হলের মধ্যে হত্যা করা হয়। এছাড়া বিগত এক দশকে শিবিরকর্মীদের হামলায় আহত হয়েছে পঞ্চাশের বেশি ছাত্রলীগ নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী মাঠ, বধ্যভূমি, হবিবুর রহমান হল মাঠে নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যেই সর্বশেষ শুক্রবার সকালে হলের সামনে থেকে অপহৃত হলো বাংলা বিভাগের এক ছাত্রী। পার্শ্ববর্তী ছয় হলে গার্ড মোতায়েন থাকলেও অপহরণ ঠেকাতে তারা কোন ভূমিকায় রাখতে পারেননি। এছাড়া হলের সিসি ফুটেজ থেকেও অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়নি। এদিকে ক্যাম্পাস থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে সহপাঠীদের সামনে ছাত্রীকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যেই। প্রশাসনের উদাসিনতা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের দায়িয়ে অবহেলার কারণে এমন ঘটনা বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমাদের চোখের সামনে সহপাঠীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আজ তাকে নিয়ে গেছে কাল অন্য কাউকে নিয়ে যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। এদিকে ঘটনার পর সারাদিনেও অপহৃত শিক্ষার্থীর খোঁজ না মেলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। রাবি ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক সুমন মোড়ল বলেন, আবাসিক হলের সামনে থেকে একজন শিক্ষার্থীকে এভাবে অপহরণ করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল-হকিকতের অবস্থা বুঝতে বাকি থাকে না। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসের চরম নিরাপত্তাহীনতার প্রকাশ ঘটেছে। এই নিরাপত্তাহীনতার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারবে না। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর। এই ধরনের ঘটনা আমরা আগে কখনও ঘটেনি তাই আমরা বুঝতেও পারিনি। এরপর থেকে আমরা আরও সচেতন থাকব। যোগাযোগ করা হলে নগরীর মতিহার থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, আচকমা এমটি হয়েছে। এছাড়া ছাত্রী অপহরণের বিষয়টি পারিবারিক যোগসূত্র রয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার কোন ঘাটটি নেই। মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে তারা স্বামী-স্ত্রী। তার স্বামীই নাকি তাকে নিয়ে গেছেন। প্রাথমিকভাবে আমাদের বলা হয়েছে তাদের খোঁজাখুঁজি করতে। আমরা সব জায়গায় মেসেজ দিয়ে রেখেছি।
×