ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্পর্শকাতর ও বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার এগারোতম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বুধবার যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, আসামিদের মূল লক্ষ্যই ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবন থেকে ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো সরবরাহ করেন মাওলানা তাজউদ্দিন (পিন্টুর ভাই)। যুক্তিতর্কে মামলার অন্যতম আসামি মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (কুষ্টিয়া), মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ আবু জাফর ও মাওলানা আবদুস সালামের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির আলোকে এ তথ্য তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত অবস্থায় মামলার কার্যক্রম ২০ নবেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। চীফ প্রসিকিটর সৈয়দ রেজাউর রহমানকে যুক্তিতর্কে সহায়তা করেন এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল ও এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা। চীফ প্রসিকিউটর বুধবার পাঁচ আসামির জবানবন্দী যুক্তিতর্কে উপস্থাপন করেছেন। আসামি মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ আবু জাফর ২১ আগস্ট হামলার ঘটনার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জড়িত। আসামি মাওলানা আবদুস সালাম ২১ আগস্ট হামলার ঘটনার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। মাওলানা আবদুস সালাম তার জবানবন্দীতে গ্রেনেড সরবরাহ, সরকার ও প্রশাসন পর্যায়ে ২১ আগস্ট হামলা নির্বিঘœ করতে কারা কারা সহযোগিতায় জড়িত বিভিন্ন সূত্রে তা প্রকাশ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। তার সরকারী বাসভবন থেকে ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো সরবরাহ করেন মাওলানা তাজউদ্দিন (পিন্টুর ভাই)। হামলা নির্বিঘœ করতে প্রশাসনিক সহায়তায় পিন্টুর বাসায় বৈঠকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের উপস্থিতির বিষয় তার জবানবন্দীতে তুলে ধরেন। এছাড়াও তৎকালীন ডিজিএফআই কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার প্রসঙ্গ তিনি তার জবানবন্দীতে উল্লেখ করেন। এছাড়া উপস্থাপিত অন্য চার আসামির জবানবন্দিতে তারা জঙ্গী নেতা মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সীসহ অন্য জঙ্গীদের সম্পৃক্তায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটাতে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন বিষয় উল্লেখ রয়েছে। ২০০৪ সালের ২০ ও ২১ আগস্ট রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় জঙ্গী আহসানউল্লাহ কাজলের ভাড়া বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠক, হামলা বাস্তবায়নে কারা কীভাবে অংশ নেবে ও গ্রেনেড কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটাতে হয় তার প্রস্তুতি সম্পর্কে আসামিদের জবানবন্দীতে উঠে এসেছে। যুক্তিতর্কে চীফ প্রসিকিউটর বলেন, হামলা পরিকল্পনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে মুফতি হান্নানসহ জঙ্গী নেতারা শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশকে টার্গেট করেন। ওইদিন সেখানে শেখ হাসিনা বক্তৃতা করবেন। জঙ্গী কার্যক্রমে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে ২১ আগস্ট হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্য স্থির করে মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গীরা। মুফতি হান্নানসহ ১২ আসামি এ মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী পেশ করেছে। মুফতি হান্নানসহ, মাওলানা মঈনউদ্দিন ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহর জবানবন্দী রাষ্ট্রপক্ষ ইতোপূর্বে যুক্তিতর্কে উপস্থাপন করেছে। বুধবার সাতজনের জবানবন্দী উপস্থাপন করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিকেলে ওই সমাবেশে একটি ট্রাকের উপর অস্থায়ী মঞ্চে যখন শেখ হাসিনা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন আকস্মিক এই হামলা চালানো হয়। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা ও ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে একটি মানব বলয় তৈরি করে নিজেরা আঘাত সহ্য করে দলীয় সভানেত্রীকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। তবে গ্রেনেডের আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তার (শেখ হাসিনা) শ্রবণ শক্তির ক্ষতি হয়। এই বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন, ইসাহাক মিয়া প্রমুখ। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জনের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। আসামি পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন ২০ জন। মোট আসামির সংখ্যা ৪৯ জন। এর মধ্যে কারাগারে আটক আছেন ২৩ জন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক ও জামিনে রয়েছেন ৮ জন।
×