ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে পকেট ভরছে মধ্যস্বত্বভোগীরা

ক্ষেতে সবজির ছড়াছড়ি ॥ দাম পাচ্ছেন না কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

ক্ষেতে সবজির ছড়াছড়ি ॥ দাম পাচ্ছেন না কৃষক

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে সবজি চাষ সম্প্রসারিত হওয়ায় উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। বাজারেও পর্যাপ্ত সবজি থাকলেও ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে আকাশছোঁয়া দামে। অথচ গ্রামের কৃষকরা পাচ্ছেন না ন্যায্যমূল্য। গ্রামের ক্ষেত থেকে শহরের বাজারের দামের বিস্তর ফারাকের কারণে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠলেও সে অনুপাতে কৃষক পাচ্ছে না সবজির দাম। তবে মধ্যস্বত্বভোগীরা লুটে নিচ্ছে অধিক মুনাফা। ক্রেতাদের পটেক কাটা গেলেও কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন দামে আর পকেট ভরছে শুরু মধ্যস্বত্বভোগীদের। বাজার মনিটর না থাকায় শহরে সবজির বাজারে অগ্নিমূল্যের কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী শহর থেকে জেলার পবা উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৬/৭ কিলোমিটার। কিন্তু এই গ্রামেই সবজির দাম শহরের তুলনায় অর্ধেক। সন্তোষপুরের চাষীরা অবশ্য নিজে শহরে সবজি নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন না। ক্ষেত থেকেই তাদের সবজি কিনে আনেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। ফলে শহরে সবজির দাম চড়া থাকলেও সে অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষীরা। রবিবার এ গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা নিজের জমি থেকে শিম উঠাচ্ছিলেন। শিম কেনার জন্য জমির পাশেই অপেক্ষা করছেন পাইকারী ব্যবসায়ী ফুরকান আলী। সেলিম জানালেন, শিম বিক্রি করতে ফুরকানের সঙ্গে তার দর-দামও হয়ে গেছে। প্রতিকেজি ৬০ টাকা। অথচ রাজশাহী মহানগরীতে এখন শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। পাশের ডাঙিপাড়া গ্রামে ক্ষেত থেকে কাঁচা মরিচ তুলছিলেন কয়েকজন নারী। তারা জানালেন, কয়েকদিন আগে তাদের ক্ষেতের মরিচ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। তখন বাজারে মরিচের দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন বাজারে কিছুটা দাম কমেছে। তাদের জমি থেকে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে শীত কিংবা গ্রীষ্মকালীন সবজিতে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে রাজশাহীর পবা মোহনপুর উপজেলায়। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ফসলের মাঠ সবখানেই সবজি আর সবজি। এখন লাউ, মূলা, ফুলকপি, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, পটল, পেঁপে, কলা, বেগুন, করলা, শসাসহ নানান সবজিতে ভরপুর দুই উপজেলা। এখানকার সবজি চাহিদা মেটাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারের। মাঠে পাইকারী ব্যবসায়ীদের দেখা না পেলেও পবা উপজেলার কৃষকরা মোড়ে নিয়ে গিয়ে সবজি বিক্রি করেন। এখান থেকে সবজি পাইকারী দরে কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। তাই প্রতিদিনই বসে সবজির হাট। এসব স্থানীয় বাজারের সবজি বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক দামে। এখানে বেগুন ২৫ টাকা, ঢেঁড়স ২০ টাকা, শসা ২৮ টাকা ও করলা ৩০ টাকা কেজি দরে কিনছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। লেবু কেনা হচ্ছে প্রতি হালি ১২ টাকা। পালংশাক-লালশাক প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা। ফুলকপি প্রতি পিস ২০ টাকায় আর প্রতি হালি কলা বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকায়। এছাড়া প্রতি বস্তা পেঁপে (দুই মণ) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। অথচ এসব সবজির কোন কোনটির দাম শহরে দ্বিগুণেরও বেশি। মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে গ্রাম ও শহরের সবজির দামে সৃষ্টি হয়েছে এমন বড় ফারাক। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি রবি মৌসুমে রাজশাহীতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার হেক্টর জমি। এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৪০০ হেক্টর। চাষীরা বলছেন, এবার সবজির দাম চড়া থাকলেও তারা ভাল দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে নিয়ে বিক্রির আগেই অনেক সবজি নষ্ট হয়। বহন খরচও আছে। এ জন্য চাষীদের সবজির দাম দেয়া হয় কিছুটা কম। কনজ্যুমারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি কাজী গিয়াস বলেন, কৃষকের উৎপাদিত সবজিতে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের যে দৌরাত্ম্য, তাতে কৃষক এবং সাধারণ ক্রেতা- উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই শুধু শহরেই নয়, কৃষকের ক্ষেত থেকে শুরু করে গ্রামের পাইকারী বাজারগুলোতেও জোরদার করতে হবে প্রশাসনের মনিটরিং ব্যবস্থা। জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা শামিমূল হক বলেন, তারা বাজার থেকে পণ্যের মূল্য সংগ্রহ করেন। শহরের সবজি দোকানগুলোতেও মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশ দিয়ে আসেন। তবে জনবলের অভাবে গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে সব সময় যাওয়া হয় না। এই সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীরা সবজির দাম নিয়ে চাষীদের ঠকিয়ে থাকেন।
×