ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে

ভিয়েতনামের দানাংয়ে অনুষ্ঠিত ২১ জাতির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনে অন্যান্য এজেন্ডার পাশাপাশি মিয়ানমার সৃষ্ট রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দীর্ঘদিন একঘরে হয়ে থাকা মিয়ানমার সরকারের উপদেষ্টা তথা স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি নীরবতা ভেঙ্গে যোগ দিয়েছেন এই সম্মেলনে। সম্মেলন চলাকালীন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হত্যাকা- বন্ধসহ তাদের সম্মানজনক পুনর্বাসনে আরও পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সু চির প্রতি। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী গত ২৫ আগস্টের পর থেকে ওই দমন-পীড়ন-হত্যাকা- ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬ লাখ ১১ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুসহ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এখন পর্যন্ত প্রতিদিন নৌকা ও ভেলায় করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এ অবস্থায় এপেক বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুটির উত্থাপন ও সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। এদিকে শনিবার ভারতের দিল্লীতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে অনাবাসী ৭৬ দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফিং করে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছেন। অন্যদিকে নীতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার যে চারটি শর্ত দিয়েছে তাও বিবেচনার সময় এসেছে। এই ৪টি শর্ত হলো, যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে দীর্ঘদিন বসবাসের প্রমাণপত্র দাখিল করতে পারবেন, স্বেচ্ছায় সে দেশে ফিরতে চাইবেন, পরিবারের কেউ রাখাইনে রয়েছেন এমন প্রমাণ দেখাতে পারবেন সর্বোপরি বাংলাদেশে জন্ম নেয়া শিশুর বাবা-মা উভয়েই সে দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে প্রমাণ দিতে পারবেন, কেবল তাদেরই ফেরত নেয়া হবে। যুক্তিসঙ্গত কারণে এসব শর্ত পূরণ করা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কঠিন অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব হবে বলে মনে করেন রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে আসে বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ। কেননা, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পোড়ামাটি নীতির কারণে প্রাণ বাঁচাতে ভিটামাটি ছেড়ে যারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তাদের কাছে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রমাণের কোন নথি বা কাগজপত্র না থাকাই স্বাভাবিক। সে অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘের সহায়তায় এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করতে হবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ ৫টি প্রস্তাবও পেশ করেছে। এগুলো হলো, সে দেশে চিরতরে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন বন্ধ করা; জাতিসংঘ মহাসচিবের অধীনে একটি নিজস্ব অনুসন্ধানী দল প্রেরণ; জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং তা পূরণে সেখানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষাবলয় গড়ে তোলা; রাখাইন রাজ্য থেকে জোর করে বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে, যাদের অধিকাংশ আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে, তাদের নিজ নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; সর্বোপরি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কোফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা নিঃশর্ত, পূর্ণ দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। ওআইসিও রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছে। বলতেই হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবারই প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বেশ জোরেশোরে উপস্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিসরে এবং জাতিসংঘে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত ৫ দফা সমস্যাটির সুদূরপ্রসারী সমাধানে প্রভূত সহায়ক হতে পারে। এখন জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কিভাবে এই সমস্যাটি সমাধানে অগ্রসর হয়, সেটাই দেখার বিষয়। রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় জরুরীভিত্তিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আরও তহবিল চেয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। এই প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত সমস্যার দ্রুত সমাধানের ভারত-ইইউ যৌথ ঘোষণাটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে সমর্থ হবে নিঃসন্দেহে। সর্বশেষ, কানাডা, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেছে বাংলাদেশকে। এ সবই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।
×