ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

মংলার সমস্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১২ নভেম্বর ২০১৭

মংলার সমস্যা

মংলা বন্দরের অগ্রযাত্রার পথে কিছু প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়ে গেছে, যা দূর করা অসম্ভব কিছু নয়। বন্দরটির উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তার কাজও চলছে। তবু কাক্সিক্ষত ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে ওঠার এখনও কিছুটা বাকি। সমুদ্র থেকে জেটিতে জাহাজ চলাচলের চ্যানেলের প্রয়োজনীয় নাব্য না থাকা এবং শুল্কায়ন জটিলতা এই দুই বড় সঙ্কট এখনও রয়ে গেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশাবাদী, নিশ্চয়ই বন্দরের এ বাধা দূর হয়ে যাবে। বিশষ করে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিন হাজার কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্প যথেষ্ট ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে মংলা বন্দরের জন্য। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের ওপর আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের চাপ থাকে বছরজুড়ে। এ চাপ কমাতে মংলা বন্দর কার্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবিদার। এটা ভুল নয় যে, পদ্মা সেতু চালু হলে সড়কপথে রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছাকাছি সমুদ্রবন্দরে পরিণত হবে মংলা বন্দর। তখন এ বন্দর দিয়ে আমদানি ও রফতানি খরচ চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কমে যাবে। সঙ্গত কারণেই ব্যবসায়ীরা অর্থ সাশ্রয়ে এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠবেন, এটা সরল হিসাব। সে চাপ সামলাতে বন্দর উন্নয়নে নানামুখী প্রস্তুতিও চলছে। মংলায় বহির্নোঙ্গর থেকে জেটি পর্যন্ত ১৩১ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় ১৭টি ডুবোজাহাজ বা র‌্যাক। এর মধ্যে পাঁচটি বেশি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মংলা বন্দরকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার উপযোগী করতে ডুবোজাহাজ অপসারণে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। বন্দরের পাঁচটি জেটির সবগুলোরই কার্যক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার প্রত্যাশিত। আগামী দিনের চাপের কথা ভেবে আরও চারটি নতুন জেটি ও দুটি ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নাব্য নিশ্চিত করতে বিশেষ ড্রেজিং প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় এসব উদ্যোগ মংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াবে। দেশের ভবিষ্যত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে এ বন্দর বাড়তি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। মংলা বন্দরের ওপর ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে শুল্কায়নের জটিলতা অবসানেও নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। ব্যবসায়ীবান্ধব বন্দর হিসেবে পরিচিতি অর্জনে বিষয়টি অবশ্যই প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। মংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং এ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পণ্যের কায়িক পরীক্ষার নামে হয়রানি বন্ধ করার কথা বলেছেন জনকণ্ঠের প্রতিবেদকের কাছে। বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে। তাছাড়া মংলা বন্দরে রাজস্ব বোর্ডের আদেশ ‘ত্বরিত খালাস পদ্ধতি’ অমান্য করার যে অভিযোগ ওঠে সেটাও খতিয়ে দেখা জরুরী। চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়মিত জাহাজজট ও বহির্নোঙ্গরে ২৫ দিন অপেক্ষার মতো উদাহরণ আছে। এর পরও আমদানি-রফতানিকারক ও শিপিং কোম্পানিগুলো মংলা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহ কম কেনÑ সেটিও একটি প্রশ্ন। মংলা বন্দরকে অবশ্যই আমদানিকারকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে শুল্ক জটিলতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বলা হচ্ছে হার্ডওয়্যার, ধাতব পণ্য, আসবাবপত্রসহ প্রস্তাবিত ৫০টি পণ্য বাধ্যতামূলক মংলা বন্দর দিয়ে আমদানির নির্দেশ পাওয়া গেলে মংলা বন্দরের পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে। এমনটা ঘটাই যুক্তিযুক্ত। মংলা বন্দরের সঙ্কট কেটে যাক, বন্দর-অর্থনীতিতে সুবাতাস বয়ে যাক এটাই কাম্য।
×