ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ মাসে সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১০ নভেম্বর ২০১৭

এ মাসে সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়

নিখিল মানখিন ॥ কাগজে কলমে চলছে হেমন্তকাল। দিনক্ষণের বিবেচনায় শীতকাল প্রবেশ করতে এখনও এক মাসের বেশি সময় বাকি। তবে দেশে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাম এলাকায় শীতের তীব্রতা যেন একটু বেশি। রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশের সর্বত্র ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়ছে। গ্রামাঞ্চলের নদীর কিনারায়, বিস্তীর্ণ বিল ও বনের ধারে কুয়াশার মাত্রা বেড়েই চলেছে। রাজধানীর নামী-দামী শপিংমল, মার্কেট ও ফুটপাথগুলোতে শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রা অনেক হ্রাস পেয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, নবেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। নবেম্বর মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ল্ডমান্বয়ে হ্রাস পাবে। তবে এ মাসে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা অথবা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এদিকে বিকেল না গড়াতেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লা ও ফুটপাথে শীতের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। বেলা গড়ালেই মলিন আবছা অন্ধকার ঘনিয়ে আসে এখন। খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে সন্ধ্যা। আকাশে জমে ওঠে হালকা কুয়াশার স্তর। গা শিরশির করা হিমেল স্পর্শ বুলিয়ে দেয় মৃদু হাওয়া। এসবই জানিয়ে দিচ্ছে শীতের উপস্থিতি। কার্তিক মাসের ২৬ ফুরিয়ে যাচ্ছে আজ শুক্রবার। দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোতে, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে এখন বেশ শীত। বরাবরই রাজধানীতে শীত আসে একটু দেরিতে। তবে এবার সন্ধ্যার পর হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। এই হালকা শীতে এখনও গরম কাপড়-চোপড় দেখা যাচ্ছে না নগরবাসীর গায়ে। কোট-জাম্পার-চাদরের বাক্সবন্দী দশা ঘুচতে শুরু করেছে, তবে লেপ-কম্বলের আরও অন্তত সপ্তাহ দুয়েক আটক থাকতে হবে। সাধারণত ডিসেম্বরের আধাআধি না যাওয়া পর্যন্ত ঢাকার শীত লোকজনকে লেপ মুড়ি দিতে বাধ্য করার মতো শক্তিমান হয়ে ওঠে না। আবার ফেব্রুয়াারি শুরু হতে না হতেই হাওয়া বদলের রেশ। দাপুটে হোক বা দুর্বল, রাজধানীতে কিন্তু শীত নিয়ে রকমারি আয়োজনের কোন ঘাটতি থাকে না। হেমন্তের শুরু থেকেই পাড়া-মহল্লা, বাজার, অফিস এলাকার ফুটপাথ দিয়ে বসে গেছে পিঠা তৈরির দোকান। বিকেল থেকে ভাপা, চিতই, তেলের পিঠা বিক্রি হচ্ছে দেদার। কাঁচাবাজারে শিম, মুলা, কপি, বরবটি, টমেটোসহ শীতের সবজিগুলো এসেছে শীত আসার আগেই। খেজুরের রস দুর্লভ, তবে চলে এসেছে নতুন পাটালি। রসনায় শীতের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে পুরোপুরি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পড়েছে শীতের সাড়া। নানা ধরনের আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে উঠছে ঢাকার মঞ্চ-মিলনায়তনগুলো। অগ্রহায়ণের পাকা ফসল কৃষিনির্ভর আমাদের জনজীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। শীতকালটি তাই আমাদের দেশে আনন্দময়, উৎসবমুখর হয়ে আছে আবহমানকাল থেকে। আবহাওয়াবিদরা জানান, নবেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। তবে এবার শীতের তীব্রতা কেমন হতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। হিমালয় অঞ্চল থেকে আগত শীতল বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ বায়ু সর্বপ্রথম উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বলে দেশের উত্তর দিকে সবার আগে শীতের তীব্রতা দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে মূলত ডিসেম্বর মাসে শীত বেশি অনুভূত হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। এর আগে অক্টোবর ও নবেম্বর মাসে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে বলে শীত অনুভূত হয়। মৌসুম পরিবর্তনের সময় সাগর অস্থিতিশীল থাকে। আর এ সময়ে সাগরে বিভিন্ন সময়ে লঘুচাপ ও নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে। বছরের এ সময়ের নি¤œচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে দেশে বিরাজ করছে ঠা-া ও গরমের মিশ্র আবহাওয়া। বর্ষা বিদায়ের পর এবং শীতকাল আসার আগে প্রতি বছর দেশে এমন আবহাওয়া বিরাজ করে থাকে। এমন আবহাওয়ায় রাজধানীতে সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নগরীর অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এমন মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় জমাচ্ছে। রোগীর কাশি অনেক সময় রূপ নিচ্ছে শ্বাসকষ্টে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মৌসুমি জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতি বছরই এমন সময় সর্দি-কাশি জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ জ্বরের চিকিৎসা লাগে না। এ জ্বরে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা হতে পারে। তিন দিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর গা হালকা ঠা-া পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার মুছে দিতে হবে। তিন দিন পরও জ্বর না কমলে, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। ছোঁয়াচে হওয়ায় এ ধরনের জ্বর থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
×