ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবাদ সমাবেশ,সাংবাদিককে মারধর

চট্টগ্রামে গৃহকরের উত্তাপ চবিতে, ভিসি অফিস ভাংচুর, শিক্ষক লাঞ্ছিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৮ নভেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামে গৃহকরের উত্তাপ চবিতে, ভিসি অফিস ভাংচুর, শিক্ষক লাঞ্ছিত

চবি সংবাদদাতা ॥ চট্টগ্রাম নগরের গৃহকরের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেই উত্তাপের জেরে মঙ্গলবার চবি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ভাংচুর ও প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগের একটি অংশ। এ সময় এক সাংবাদিককেও মারধর করা হয়। পরবর্তীতে আরেকটি পক্ষ কার্যালয় ভাংচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। তারা ভাংচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। মঙ্গলবার চবি শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক আমির উদ্দিনকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যাপারে ছাত্রলীগের একাংশের দেয়া ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান চবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর টিপুর নেতৃত্বে একটি অংশ। পরে সেখান থেকে বের হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের জানালার কাঁচ, ফুলের টব, রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের ফুলের টব, প্রশাসনিক ভবনের নিচে থাকা দুটি প্রাইভেটকার ও ফুলের টব ভাংচুর করেন। ভাংচুর শেষে একটি মিছিল আলমগীর টিপুর নেতৃত্বে জিরো পয়েন্টে আসে। সেখানে তারা মূল ফটক আটকে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখানে তারা প্রায় এক ঘণ্টা বিক্ষোভ করেন। এ সময় শহরগামী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বাস, শাটল ট্রেন আটকে রাখা হয়। ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ থাকার পর প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা। এ সময় বিক্ষোভ চলাকালীন সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন বাংলাভিশন টেলিভিশন চ্যানেলের চবি প্রতিনিধি মোঃ শাহজাহান। দায়িত্ব পালনের সময় বিক্ষোভ মিছিল থেকে বের হয়ে কয়েকজন শাহজাহানের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এছাড়া তাকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় শাহজাহান চবি প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রসঙ্গত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত গৃহকর বাতিলের দবিতে আন্দোলন করছে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন। সেই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চবি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আমির উদ্দিন। রবিবার ছাত্রলীগ পরিচয়ে তাকে কয়েকজন অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দেয়। হুমকিদাতারা তাকে গৃহকর আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন এবং থানায় জিডি করেন। পরবর্তীতে আমির উদ্দিনের অব্যাহতি দাবি করে সোমবার উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন চবি ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর টিপু ও তার অনুসারীরা। এ সময় তারা প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে আলমগীর টিপু বলেন, আমাদের আল্টিমেটাম শেষ হওয়ায় আমরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যাই। কিন্তু তার কোন সমর্থন না পেয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ ও অবরোধ করি। আমাদের অবরোধের প্রেক্ষিতে প্রশাসন আমাদের আশ^াস দিয়েছে যে আগামী ২২ তারিখ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার আগ পর্যন্ত ওই শিক্ষক (আমির) ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত থাকবে। তাই আমরা অবরোধ তুলে নিই। এদিকে উপাচার্যের কার্যালয় ভাংচুরের প্রতিবাদে ও শিক্ষককে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকিদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন চবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন। সভাপতির অনুসারীরা মূল ফটকের অবরোধ তুলে নিলে সুজনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন তার অনুসরীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি চবি শাহ আমানত হল থেকে শুরু হয়ে কাঁটা পাহাড় সড়ক হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ফজলে রাব্বী সুজন বলেন, ‘যারা শিক্ষককে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দিয়েছে, উপাচার্য, রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ভাংচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ এ সময় তিনি শিক্ষককে হুমকিদানের পরও শিক্ষক সমিতির কোন প্রতিবাদ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসব বিষয়ে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলে আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে পারব। উল্লেখ্য, চবি ছাত্রলীগ মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশ মোঃ আলমগীর টিপুর নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চসিক মেয়র আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অপর অংশ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই অংশটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফজলে রাব্বী সুজন।
×