ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘চোরাচালানে বাধা দেয়ায় ছাত্রলীগ নেতা শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়’

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৪ নভেম্বর ২০১৭

‘চোরাচালানে বাধা  দেয়ায় ছাত্রলীগ নেতা শাওনকে গুলি করে হত্যা করা হয়’

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা, ৩ নবেম্বর ॥ কুমিল্লায় ছাত্রলীগ নেতা আজমীর হোসেন শাওন হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। চোরাচালানে বাধা দেয়া, এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা এবং পথের কাটা দূর করতেই শাওনকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। তাকে বাড়ি থেকে বের করে আনতে শাওনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাসেলসহ ৩ বন্ধুকে ব্যবহার করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পানিয়ারূপ বাসস্ট্যান্ড থেকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। পরে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যার পর লাশ দেবিদ্বার উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সংচাইল এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ডিবি পুলিশ ঘাতক রাসেলকে গ্রেফতারের পর বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লব দেবনাথের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে ঘাতক রাসেল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুমিল্লা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পানিয়ারূপ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের ছেলে আজমীর হোসেন শাওন। তিনি কসবা টি. আলী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় একটি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের ব্যবসায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শাওন। তাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় ওই সিন্ডিকেটটি। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয় শাওনকে। পরদিন হাত-পা বাঁধা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেবিদ্বার উপজেলার সংচাইল এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের রাস্তার পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। ওই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নেয় ৪ ঘাতক। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নিহত শাওনের বন্ধু রাসেল ভূইয়া। সে মুরাদনগর উপজেলার ডালপা গ্রামের রবি ভূইয়ার পুত্র। এদিকে এ হত্যার নেপথ্যে কারা রয়েছে এমন প্রশ্নই এলাকায় ঘুরপাক খায়। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্পর্শকাতর এ মামলাটি কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। মামলার দায়িত্বভার পেয়ে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম এ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া ঘাতক মোঃ রাসেলকে নারায়ণগেঞ্জর সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে রাতভর ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে ওই হত্যাকা-ের প্রকৃত রহস্য। চোরাচালানে বাধা দেয়ায় একটি সিন্ডিকেটের নির্দেশে রাসেলসহ অন্যরা পরিকল্পিতভাবে শাওনকে অপহরণের পর গুলি চালিয়ে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে শুক্রবার আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে বলে আদালত ও ডিবি সূত্রে জানা গেছে।
×