ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে মা আটক

এবার বাড্ডায় খুন হলো বাবা ও মেয়ে

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩ নভেম্বর ২০১৭

এবার বাড্ডায় খুন হলো বাবা ও মেয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার রাজধানীর বাড্ডায় একটি বাসায় নৃশংসভাবে বাবা ও মেয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বাবা জামিল শেখ পেশায় গাড়িচালক। আর নুসরাত নামের দশ বছর বয়সী মেয়েটি দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাবাকে মাথায় আঘাত করে আর মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ মেয়েটির মা আরজিনাকে আটক করেছে। তার তিন বছর বয়সী ছোট্ট ছেলে আলফিও মায়ের সঙ্গে থানা হেফাজতে রয়েছে। পরকীয়ার জেরে হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটে বলে পরিবার ও পুলিশের ধারণা। তবে হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত কিনা সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। শত শত মানুষ ভিড় করেছে বাড়িটিতে। সেখানে রীতিমতো পুলিশ মোতায়েন করে লোকজন সরাতে হচ্ছে। পুরো এলাকায় একই আলোচনা। এমন ঘটনায় এলাকাটিতে রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের কাছে ময়নারবাগের ৩০৬ নম্বর পাঠান ভিলার চার তলা বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে নুসরাতের (১০) লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। উদ্ধারকালে বাবা-মেয়ের লাশ একই খাটের ওপর পড়ে ছিল। জামিলের মাথায় মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত মিলেছে বলে পুলিশ জানায়। জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম বেলায়েত শেখ (মৃত)। আগে জামিল গুলশানে একজনের প্রাইভেটকার চালাতেন। সম্প্রতি তিনি তেজগাঁওয়ের বেসরকারী একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। নিহতের পরিবার, স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জামিল প্রায় ১৮ বছর ধরে বাড্ডা এলাকায় বসবাস করছিলেন। কোরবানির ঈদের পর স্ত্রী আরজিনা (৩০) মেয়ে নুসরাত ও ছেলে আলফিকে নিয়ে ওই বাসায় ওঠেছিলেন জামিল। পুরো বাড়িটিতেই ছোট ছোট ফ্ল্যাট। তৃতীয় তলার দুই কক্ষের একটি ছোট ফ্ল্যাটে ওঠেছিল পরিবারটি। ওঠার কিছু দিন পরই স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরপর ছেলে আলফিকে নিয়ে আরজিনা ঢাকার সাভারে মায়ের কাছে চলে যান। পিতা আর মেয়ে ওই বাসায়ই থাকত। সপ্তাহখানেক আগে আরজিনা ছেলেকে নিয়ে আবার বাসায় ফেরেন। জামিল গাড়ি চালানোর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সুদে টাকা ধার দিতেন। তবে সেই টাকার জেরে কারও সঙ্গে কোন ঝগড়া ছিল কিনা তা জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, মেয়েটি বাড্ডা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। লাশ উদ্ধারের সময় জামিলের স্ত্রী আরজিনা তাদের তিন বছর বয়সী ছেলে আলফিকে নিয়ে সিঁড়িতে বসে ছিলেন । বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ মিয়া জানান, আরজিনা মানসিকভাবে খানিকটা বিপর্যস্ত। কিছুটা স্বাভাবিক হলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওই বাসায় সম্প্রতি এক দম্পতি সাবলেট হিসেবে ভাড়ায় এসেছিল। তাদের খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সকাল থেকেই তারা নিখোঁজ। এদিকে ঘটনার পর পরই বাড়ির মালিক দুলাল পাঠানের স্ত্রী নাসিমা দুলাল আরজিনা বেগমকে জেরা করতে থাকেন। প্রথমদিকে আরজিনা তার স্বামী ও মেয়েকে মুখোশধারী ডাকাতরা হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মেরে ফেলেছে বলে দাবি করতে থাকেন। পরবর্তীতে জনতার কড়া জেরার মুখে আবোলতাবোল বলতে থাকেন তিনি। জামিলের বড় ভাই ইব্রাহিম ইবু ও শামিম হোসেন জানান, তারা পাঁচ ভাই উত্তর বাড্ডার ওই এলাকায় বসবাস করেন। সব ভাইয়েরা নিয়মিত বাসায় যাতায়াত করেন। সবার সুখে দুঃখে তারা পাশে থাকার চেষ্টা করেন। জামিল ১২ বছর আগে আরজিনাকে বিয়ে করেন। চার বছর ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে বলে শুনছি। মাঝে মধ্যেই ঝগড়া হতো। স্ত্রীর পরকীয়া ছিল বলে জামিল তার কাছে দাবি করেছিল। বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। এখন সার্বিক পরিস্থিতি দেখে ভাইয়ের অভিযোগ সত্য বলে মনে হচ্ছে। কারণ ডাকাতরা আরজিনা আর তার ছেলেকে রেখে জামিল ও তার মেয়েকে মেরে ফেলার বিষয়টি রহস্যজনক। হত্যার পেছনে আরজিনার যোগসাজশ থাকতে পারে। ঘটনার একদিন আগে জামিল তার ভাই ইবুর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। ঘটনার পর সেই টাকার কোন হদিস মেলেনি। বাড়ির আলমারি খোলা। সেখানে কোন টাকা নেই। সত্যি সত্যিই ডাকাতরা টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা পেয়ে জামিল ও তার মেয়েকে হত্যা করেছে নাকি পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ডাকাতির নাটক সাজানো হয়েছে। তা স্পষ্ট নয়।
×