ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যু এজেন্ডায় না থাকলেও আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ইস্যু এজেন্ডায় না থাকলেও আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের সিদ্ধান্ত

সংসদ রিপোর্টার ॥ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বহুল প্রত্যাশিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬৩তম সম্মেলন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্মেলনে নির্ধারিত কোন এজেন্ডা না থাকলেও বিষয়টি বিশ্ববাসীকে জানাতে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ৫ নবেম্বর বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে সম্মেলনস্থলে এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবারের সম্মেলনে তরুণ সমাজকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এই জনগোষ্ঠীর নানাবিধি সমস্যা (লিঙ্গ বৈষম্য, মানবাধিকার ও মূল্যবোধ) সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে। পরবর্তী প্রজš§কে গড়ে তোলাই এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ও স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সম্মেলনের কোন নির্ধারিত এজেন্ডা ছিল না। কিন্ত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসার আগেই এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। অধিকাংশ প্রতিনিধিই এ বিষয়ে জানার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। যে কারণে এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে; যেখানে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবেন। জানা গেছে, বুধবার বিকেলে সংসদ ভবনে স্পীকারের দফতরে সিপিএ চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান বৈঠক করেন। সেখানে সম্মেলনের কার্যসূচী নিয়ে আলোচনা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ব্রিফিংয়ের বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়। সম্মেলনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আনুষ্ঠাঙ্গিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। বুধবার থেকে এ সম্মেলন শুরু হলেও প্রথম দিন কোন বৈঠক ছিল না। আজ বৃহস্পতিবার ছোট ছোট বৈঠকের মাধ্যমে এ সম্মেলনের কাজ শুরু হবে। সিপিএ মূল সম্মেলন হবে ৫-৮ নবেম্বর। এদিকে সিপিএ সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিংকালে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক বিষয়। আমার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সংসদ সদস্যরা এই বিষয়ে জানতে খুবই কৌতূহলী। এখানে কোন আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে না। আমাদের এজেন্ডায় ইস্যুটি নেই। আমি মনে করি, সিপিএ চেয়ারপারসন ও স্পীকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী আনুষ্ঠানিক বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের বিষয়টি তুলে ধরবেন। এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরতে পারেন। এর বাইরে বিষয়টি জানার ও প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ থাকবে। এদিকে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরা হবে। ভিডিও চিত্রে গণহত্যার একটি দৃশ্যও দেখানো হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিরীহ বাঙ্গালীর ওপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর চালানো বর্বরতার চিত্র সংসদীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করবেন। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র থাকবে। সূত্র জানায়, গত এপ্রিলে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলনে পাকিস্তান আসেনি। সিপিএ সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী পাকিস্তান প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। আগামী শনিবার তাদের ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে। পাকিস্তানের ৭ সংসদ সদস্য এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন। কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সিপিএ সম্মেলন শুরু করতে পারায় অনেকটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, এতবড় একটি সম্মেলন আয়োজন করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসী কর্মকা- দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ নিউইয়র্কেও হামলা হয়েছে। সেখানে আমরা সুষ্ঠুভাবে সম্মেলন শুরু করতে পেরেছি। আশা করি শেষ করতে পারব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোন সমস্যা হয়নি। এই সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আইপিইউর মতো আবারও প্রমাণ হলো বাংলাদেশ সক্ষম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্মেলনকে সামনে রেখে পুরো রাজধানীতে নিñিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ হাজারের বেশি সদস্য এই নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে। সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি সম্মেলন চলাকালে সংসদ ভবনে দর্শনার্থী প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বিমানবন্দরেও দর্শনার্থীর প্রকেশে কড়াকড়ি আরোপ করা করা হয়েছে। এছাড়া সম্মেলন চলাকালে রাজধানীর কয়েকটি সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক বর্ণিল সাজে সাজানোর পাশাপাশি আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সম্মেলনে যোগ দিতে আজ শতাধিক প্রতিনিধি আসবেন গত দু’দিনে অনেক প্রতিনিধিই ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। এরমধ্যে নিউজিল্যান্ড ও মাল্টাসহ কয়েকটি দেশের স্পীকার রয়েছে। আজ শতাধিক প্রতিনিধির আসার কথা রয়েছে। শনিবারের মধ্যে সকল প্রতিনিধি উপস্থিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে আজ সকাল ১০ টায় হোটেল রেডিসনে ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর কন্ফারেন্সের উদ্বোধন হবে। সিপিএ চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উদ্বোধন করবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা এই দেশগুলোকে নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিতে চায় সিপিএ। টানা তিন দিনের বিশেষ কন্ফারেন্সে সেবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর সমস্যা ভিন্ন। তাদের সঙ্কটও বেশি। যে কারণে তাদের বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এসব বিষয় সম্মেলনের গুরুত্ব পাবে। তিনি জানান, এই কন্ফারেন্সে গৃহীত প্রস্তাবগুলো মূল সম্মেলনে উত্থাপন করা হবে। এছাড়া নারী সংসদ সদস্যদের বৈঠকসহ কয়েকটি কর্মসূচী রয়েছে। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই পৃথক পৃথক বৈঠকে আগামী দিনের কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হবে। সম্মেলনের ৮টি কর্মশালাও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তরুণ সমাজকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে সিপিএ সম্মেলনে তরুণ সমাজকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিপিএ সেক্রেটারি জেনারেল আকবর খান। বুধবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সিপিএভুক্ত ৫২ দেশের ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই তরুণ। এই জনগোষ্ঠীর নানাবিধি সমস্যা (লিঙ্গ বৈষম্য, মানবাধিকার ও মূল্যবোধ) নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৬৩তম সম্মেলনে প্রাধান্য পাবে। পরবর্তী প্রজš§কে গড়ে তোলাই এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য। সিপিএ সেক্রেটারি বলেন, তরুণ সমাজের মধ্যে যাদের বয়স ২৯ এর নিচে তাদের নানাবিধ উদ্বেগ ও সমস্যা এই সম্মেলনে তুলে ধরা হবে। জাতীয় সংসদে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদেরকে এসব তরুণ-তরুণীদের মূল্যবান কথা শুনতে হবে। কারণ তারাই আগামী দিনের নেতা। তাই সম্মান, মূল্যবোধ, আইনের শাসন, লিঙ্গ-সমতা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং মানবাধিকারসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আগামী প্রজš§কে জানাতে হবে। সিপিএ চেয়ারপার্সন নিজেও যুবকদের একটি গোলটেবিলের নেতৃত্ব দিবেন বলে তিনি জানান। সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য এই সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আকবর খান বলেন, এই সংস্থার সদস্য সংখ্যা ১৭ হাজার। কমনওয়েলভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবেন। তিনি বলেন, সংসদে নারী-পুরুষের সমতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা চাই সংসদে সংখ্যালঘুসহ অন্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। বাংলাদেশের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। সম্মেলনে প্রতিবন্ধীদের কিভাবে মূলস্রোত ধারায় নিয়ে আসা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে সিপিএ মহাসচিব বলেন, জাতীয় সংসদে যারা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদেরকে এসব তরুণ-তরণীদের মূল্যবান কথা শুনতে হবে। কারণ তারাই আগামীর নেতা এবং পরবর্তী নেতৃত্ব তারাই দেবেন। তাই সম্মান, মূল্যবোধ, আইনের শাসন, লিঙ্গ-সমতা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, তরুণদের সম্পৃক্ততা এবং মানবাধিকারসহ অন্যান্য মূল্যবোধ সম্পর্কে আগামী প্রজš§কে জানাতে হবে। তিনি বলেন, ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় সম্মেলন এই বিষয়ও গুরুত্ব পাবে। তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার নারী সংসদদের বৈঠক শুরু হবে। এই বৈঠকের নিজস্ব ও নির্বাচিত চেয়ারপার্সন আছেন, যিনি একজন মালয়েশিয়ান। এখানে নারীদের অংশগ্রহণ আরও ফলপ্রসূভাবে বাড়ানো যায় সেটা তুলে ধরা হবে। তিনি জানান, সংসদে নারী-পুরুষের সমতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা চাই সংসদে সংখ্যালঘুসহ অন্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। বাংলাদেশের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। নারীর কথা তুলে ধরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্মেলনে কমনওয়েলথভুক্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে আলোচনা করা হবে। প্রতিবন্ধীদের কিভাবে মূলস্রোতের ধারায় নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে। এসব প্রতিবন্ধীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের অংশ। সিদ্ধান্ত শুধু উচ্চ শ্রেণীর কাছ থেকে এলে হবে না, ওই সব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছ থেকেও আসতে হবে। তাই অন্তর্ভুক্তিতা, বৈচিত্র্যতার প্রতি সম্মান এই আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে।
×