ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখবে

জেলা ব্র্যান্ডিং কৌশল প্রণয়ন ॥ চলছে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

জেলা ব্র্যান্ডিং কৌশল প্রণয়ন ॥ চলছে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ

সমুদ্র হক ॥ দেশের প্রতিটি জেলাকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে পরিচিতি করতে ‘জেলা ব্র্যান্ডিং’ কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ব্র্যান্ডিং রূপকল্পের লক্ষ্য ও জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বড় ভূমিকা রাখবে। দেশের প্রতিটি জেলা তার ঐতিহ্য, নিজস্ব স্বকীয়তা, বিশেষায়িত পণ্য, পর্যটক আকর্ষণ, ঐতিহ্যের সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়গুলো জেলার ব্র্যান্ডিংয়ের আওতায় এসেছে। প্রতিটি জেলার জন্য আলাদা ‘লোগো’ নির্ধারণ করা হচ্ছে। যেমন বগুড়া জেলার ব্র্যান্ড লোগোতে মহাস্থানগড়ের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, বগুড়া ল্যান্ড অব পু-্র সিভিলাইজেশন, নাটোর জেলার ব্র্যান্ড লোগোতে উত্তরা গণভবনের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, নাটোর ল্যান্ড অব কুইন। এভাবে প্রতিটি জেলার ঐতিহ্য বা অন্য পরিচয়ের ছবি দিয়ে ওই জেলার ব্র্যান্ড নামকরণ এবং সার্বিক পরিচিতি তুলে ধরা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ্যাকসেস টু ইনফর্মেশন (এটুআই) কর্মসূচীর আওতায় এ কাজগুলো হচ্ছে। সব জেলা থেকে সার্বিক তথ্য পাওয়ার পর তা পর্যালোচনা করে কোন্ জেলা কোন্ ব্র্যান্ডিংয়ে পরিচিতি পাবে তা প্রকাশ করা হবে। সরকার আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন ও রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে সমন্বিত উদ্যোগ ও দেশের প্রতিটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিকাশ এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিবেচনায় রেখে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে জেলা ব্র্যান্ডিং কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। এভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতর উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এটুআই বড় ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হানা ইসলাম জানান, জেলা ব্র্যান্ডিং করতে কয়েকটি বিশেষ দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দেশের প্রতিটি জেলার কোন না বৈশিষ্ট্য আছে। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির লালন ও বিকাশ, জেলার ভৌগোলিক অবস্থানে নির্দেশক পণ্য, পর্যটন শিল্প, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি সঞ্চারক বিষয়, স্থানীয় ইনোভেশন, জনকল্যাণের উদ্যোগ, জেলার সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক লোকজ ঐতিহ্যসহ জেলাকে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি দিতে পারে এমন সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ ব্র্যান্ডিংয়ের ভেতরে ওই জেলার ব্র্যান্ড বিষয়গুলোর বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে। ইতিহাস বলছে, বাংলাদেশের অনেক পণ্য ও বিষয় দূর অতীতে ঐতিহ্যের খাতায় উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকার মসলিন বস্ত্র এতটাই খ্যাত ছিল, যা আজও বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ লন্ডন মিউজিয়ামে রক্ষিত আছে। এটি বাংলাদেশের পরিচিতি বহন করছে। চতুর্দশ শতকে পরিব্রাজক ইবনে বতুতা বাংলাদেশের সোনারগাঁ এসে মসলিনের প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের খুলনার সুন্দরবন, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ ও নওগাঁর পাহাড়পুর ইতোমধ্যে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য তালিকায় স্থান পেয়েছে। বগুড়ার মহাস্থানগড়, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, নওগাঁর জগদ্দল বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরসহ দশটি ঐতিহ্য বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্যের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পাইপলাইনে আছে। এ ব্র্যান্ডিংয়ে কোন জেলার বিশেষ ধরনের খাবার, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমন বগুড়ার দই, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, যশোরের পাটালি গুড়, গাইবান্ধার রসমঞ্জরি, রাজশাহীর আম ইত্যাদি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গম্ভীরা গান, ময়মনসিংহ গীতিকা, সিলেটের মণিপুরী নাচ, পঞ্চগড়ের গীতসহ ঐতিহ্যের সব বিষয় জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের মধ্যে আসবে। বগুড়া জেলার সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণমুখী দশটি উদ্ভাবনের মধ্যে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়টি আছে। পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইনোভেশন সামিটে বিভিন্ন জেলার সার্বিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে দেশের ৬৪টি জেলাকে ব্র্যান্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিটি জেলার সুধীজন, ইতিহাসবিদ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তা পর্যালোচনা করে জেলা ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। তিনি জানান, বিশ্বের অনেক দেশে জেলা ও রাজ্য ব্র্যান্ডিং আছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক সময় ‘আই লাভ নিউইয়র্ক’ ক্যাম্পেন করা হয়। মালয়েশিয়ায় পর্যটক আকর্ষণে পরিচিতি দিয়েছে ‘ট্রুলি এশিয়া’। ভারতের ব্যাঙ্গালুরু রাজ্যকে ‘আইসিটি সিটি’ নামে পরিচিতি করা হয়। এভাবে বিশ্বের অনেক দেশ রাজ্য, জেলা ব্র্যান্ডিং করেছে। বাংলাদেশও জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের খাতায় নাম লিখতে যাচ্ছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানকে তুলে ধরবে।
×