ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ খালেদা জিয়ার গণসংযোগ কর্মসূচী শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

আজ খালেদা জিয়ার গণসংযোগ কর্মসূচী শুরু

শরীফুল ইসলাম ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আজ শনিবার থেকে দেশব্যাপী গণসংযোগ শুরু করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রথমেই তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৪ দিনব্যাপী গণসংযোগ করছেন। প্রথম সফরের মূল গন্তব্য উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ হলেও সেখানে যাওয়া-আসার পথে তিনি গণসংযোগের কাজ সেরে নেবেন। উখিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে শীঘ্রই অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন জেলা সফরে গিয়ে জনসংযোগ করবেন। ইতোমধ্যেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জেলা নেতাদের এ কথা জানানো হয়েছে। আর কেন্দ্রের নির্দেশ পেয়ে জেলা নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজ ঢাকা থেকে উখিয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়ে পথে পথে গণসংযোগ করবেন খালেদা জিয়া। এদিকে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উখিয়া যাবার পথে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ব্যাপক শোডাউন করে স্বাগত জানাবে দলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশ পেয়ে এ জন্য ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি সভা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন। কুমিল্লার বিএনপি নেতা খলিলুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম যাবার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান করবে। আর এ সুযোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগ করতে পারবেন। কক্সবাজার জেলা বিএনপি নেতা আখতারুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যেই জেলা নেতাদের বৈঠকে খালেদা জিয়াকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সড়ক পথে আসা যাওয়ার সময় জেলার বিভিন্নস্থানে নেতাকর্মীরা অবস্থান করবেন। উল্লেখ্য, সোমবার উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ জন্য ঢাকার গুলশানের বাসা থেকে আজ শনিবার বেলা ১১টায় রওনা দেবেন তিনি। বিকেলে কিছুক্ষণ ফেনী সার্কিট হাউসে যাত্রাবিরতি দিয়ে রাতে তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাত্রি যাপন করবেন। রবিবার তিনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে কক্সবাজারে যাবেন। রবিবার কক্সবাজার সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি উখিযার বালুখালী, বোয়ালমারী ও জামতলি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন এবং পরে কক্সবাজার সার্কিট হাউসে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবেন। সন্ধ্যায় কক্সবাজার থেকে রওনা দিয়ে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থান করবেন তিনি। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে ফেনী সার্কিট হাউসে যাত্রাবিরতি শেষে রাতে ঢাকা ফিরে আসবেন তিনি। খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে ডেমরা, সোনারগাঁও, কুমিল্লার দাউদকান্দি, গৌরীপুর, চান্দিনা, ময়নামতি, কুমিল্লা বিশ্বরোড, ফেনী ও চট্টগ্রাম গেট, পটিয়া, সাতকানিয়া, রামু ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক শোডাউন করবে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। জানা যায়, ২৩ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উখিয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পাশাপাশি সারাদেশে গণসংযোগ করার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। জনসংযোগ কর্মসূচী চলাকালে দলের নেতাকর্মীদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলবেন। আর নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলবেন। উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর থেকেই বিএনপি রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায়। বিশেষ করে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিনের আন্দোলন কর্মসূচী ব্যর্থ হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করে। এরপর একদিকে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও অপরদিকে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নানামুখী তৎপরতা চালাতে থাকে বিএনপি। কিন্তু সরকার কঠোর অবস্থানে থাকায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারছে না বিএনপি। তার ওপরে আবার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো চূড়ান্ত রায়ের দিকে চলে আসছে। এ অবস্থায় বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হলে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চলার পথ মসৃণ হবে না ধরে নিয়েই এ নির্বাচনের এক বছর আগে থেকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে সামনে এগিয়ে যেতে চায় বিএনপি। দলটির সামনে এখন দু’টি পথ। হয় দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করা, না হয় আন্দোলনের প্রস্তুতি জোরদার করে সরকারকে চাপে ফেলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ তৈরি করা। আর এ দুই পথ মাথায় রেখেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, খালেদা জিয়ার জনসংযোগ কর্মসূচীর মাধ্যমে বিএনপি মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। দেশব্যাপী জনসংযোগ শেষে রাজধানীতে একটি বড় ধরনের সমাবেশ করতে চায় দলটি। অনুমতি পেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই সমাবেশ করতে চায়, তা না হলে নয়াপল্টন দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বড় একটি সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার কথা ভাবছে বিএনপি হাইকমান্ড। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি কার্যত: মাঠের রাজনীতিতে নেই। গতবছর ১৯ মার্চ জাঁকজমকভাবে জাতীয় কাউন্সিল করে ৫৯২ সদস্যের ঢাউস কমিটি দিয়েও দলকে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় করতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বরং দলের ভেতর এখন নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে ইস্যুভিত্তিক কিছু ঘরোয়া কর্মসূচী পালন করলেও এসব কর্মসূচীতে দলের নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি ঘটে না। এর ফলে এসব কর্মসূচী সফলও হয় না। এদিকে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি সর্বস্তরে দলের কমিটি পুনর্গঠনের কাজও চালিয়ে যাবে বিএনপি। এ জন্য ইতোমধ্যেই কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তৃণমূলে দল পুনর্গঠনের জন্য দলের কিছু কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও সর্বস্তরে পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় জনসংযোগ করেন। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের একবছর পর রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করে সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার প্রস্তুতি নেন। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে এ কর্মসূচী সফল করতে ২দিন আগে অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি রাতেই তিনি গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। সেখানে থেকেই তিনি ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ৬ জানুয়ারি থেকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থেকেই তিনি টানা ৯২ দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচী পালন করেন। সূত্র মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গণসংযোগ কর্মসূচী শুরুর খবর শুনে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলার নেতারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ের যেসব নেতা এতদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারাও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দেশের বাইরে ছিলেন তাই রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যেতে পারেননি। তাই তিনি সেখানে যাচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক পর তিনি ঢাকার বাইরে কোন কর্মসূচীতে যাচ্ছেন। তাই তার এ সফর নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফেরার পর সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে তিনি অন্যান্য জেলা সফরেও যাবেন।
×