ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

ফেরার সংগ্রাম সেরেনা উইলিয়ামসের

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

ফেরার সংগ্রাম সেরেনা উইলিয়ামসের

টেনিস ইতিহাসে ঝলমল করছে সেরেনা উইলিয়ামসের নাম। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জিতে টেনিস বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। এরপরের দেড়যুগও টেনিস কোর্টে রাজত্ব করেন বিস্ময় বালিকা। অসামান্য সব কীর্তি গড়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। চলতি মৌসুমের শুরুটাও করেছিলেন দুর্দো-প্রতাপে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে ক্যারিয়ারের ২৩তম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পান আমেরিকান টেনিসের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। কিন্তু এখন তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মা হওয়ার পর আবারও টেনিসে ফেরা। পারবেন কী সেরেনা উইলিয়ামস? এ নিয়েই টেনিস দুনিয়ায় চলছে এখন জল্পনা-কল্পনা। লস এঞ্জেলেসের কম্পটন শহরে তার জন্ম। খেলার ক্ষেত্রে বাবা সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে গেছেন তাকে। আর বড় বোন ভেনাস ছিলেন অনুশীলন-সঙ্গী। টেনিসে সেরেনার যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। কিউবেক সিটিতে যখন তার বয়স মাত্র ১৪। তার ঠিক তিন বছর পরই সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। সে সময়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা মার্টিনা হিঙ্গিসকে হারিয়ে ইউএস ওপেনের শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছিলেন। সেরেনাই ছিলেন এলথিয়া গিবসনের পর দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান নারী, যিনি খুব অল্প সময়েই টেনিসের মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান। সেরেনা স্লাম পূরণের অসাধারণ বৃত্ত পূরণ করেন ২০০৩ সালে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তখন দারুণ ফর্মে থাকা বড় বোন ভেনাসকেই হারিয়ে। কিংবদন্তি মার্গারেট কোর্ট, স্টেফি গ্রাফ, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা এবং মৌরিন কনোলির পর সেরেনাই চারটি মেজর শিরোপার প্রত্যেকটি জেতা খেলোয়াড়। টেনিস কোর্টে দুর্দান্তই খেলছিলেন সেরেনা। কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই রেডিটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এ্যালেক্সিস ওহানিয়ানের বাগদান হয় তার। গত জানুয়ারিতে সেরেনা যখন ক্যারিয়ারের ২৩তম গ্র্যান্ডস্লাম জয় করেন তখন তিনি ৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা! কিন্তু তারপরও কোন প্রভাব পড়েনি সেদিনের সেই ফাইনালে। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিনেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ৩৬ বছর বয়সী এই টেনিস কিংবদন্তি। সেরেনার মুখপাত্র কেলি বুশ নোভাক জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের শুরুতেই আবারও খেলায় ফিরবেন উইলিয়ামস পরিবারের ছোট মেয়ে। যে কারণেই সামনে চলে আসে আরেক প্রশ্ন। গত মাসেই ৩৬ বছর পূর্ণ করা সেরেনা কী টেনিস কোর্টে স্বরূপে ফিরতে পারবেন? পারবেন কী ক্যারিয়ারের ২৪তম গ্র্যান্ডস্লামের শিরোপা জয় করতে? তবে এ নিয়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ধরনেরই মন্তব্য করছেন অনেকে। তবে এটা যে তার জীবনের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে এই বয়সে তিনি অন্য খেলোয়াড়দের তুলনায় যা করে দেখিয়েছেন, এই চ্যালেঞ্জ জয় করাটা খুবই স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন ইএসপিএনের অন্যতম ধারাভাষ্যকার পাম শিভার। ১৯৭২ সালে মার্গারিটা কোর্ট, যিনি ২৯ বছর বয়সে তার পুত্র সন্তান ডেনিয়েলের জন্মের পরের বছরই তিনটি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিতেছিলেন। উইলিয়ামস গত দুই দশক ধরে কখনোই কোনো ইনজুরি, বিতর্ক অথবা শোকার্ত হয়ে নিজের চ্যালেঞ্জ থেকে পিছু হটে যাননি। এসবই অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে সেরেনাকে। ২০০৯ ও ২০১০ সালে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন উইম্বলডন শিরোপা জেতার পরেই ফুসফুসের রোগে বিশ্রামে ছিলেন সেরেনা। এরপরেই ধারাবাহিকভাবে ২০১২ সালে উইম্বলডন জিতে কোর্টে ফেরেন তিনি। এর আগে ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে সেরেনার প্রিয় ব্যক্তিগত সহকারী এবং হাফ-সিস্টার খুন হয়ে যান। গুলিতে বোনের মৃত্যুতে অনেকটাই শোকে কাতর হয়ে পড়েন এই আমেরিকান। সেই এই ধাক্কায় খেলা থেকে দূরে ছিলেন আট মাস। কিন্তু ২০০৪ সালে মিয়ামিতে জয়ের মধ্য দিয়েই স্বরূপে ফিরে আসেন তিনি। সেরেনাবিহীন টেনিস কোর্টে আলো ছড়াচ্ছেন ভেনাস উইলিয়ামস। যদিওবা চলতি মৌসুমে মেজর কোন শিরোপা জয়ের স্বাদ পাননি ভেনাস উইলিয়ামস। কিন্তু দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের। শুধু তাই নয়, উইম্বলডনের ফাইনালে উঠে সবচেয়ে বেশি বয়সে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের রেকর্ড গড়ার দ্বারপ্রান্তেও পৌঁছে গিয়েছিলেন আমেরিকান টেনিসের এই জীবন্ত কিংবদন্তি। কিন্তু বারবারই তীরে এসে তরী ডুবেছে ভেনাস উইলিয়ামসের। তারপরও হাল ছাড়েননি বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে এই মুহূর্তে পঞ্চম স্থানে থাকা উইলিয়ামস পরিবারের বড় মেয়ে। তবে সিঙ্গাপুরে চলমান ডব্লিউটিএ ফাইনালসে ভাল খেলতে পারলে র‌্যঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার সুযোগ থাকছে ভেনাসের। শীর্ষে থাকা আটজন খেলোয়াড়কে নিয়েই সিঙ্গাপুরে শুরু হয়েছে ডব্লিউটিএ ফাইনালস। দুটি গ্রুপে হচ্ছে এই আসর। সমান চারজন করে খেলেন প্রতি গ্রুপে। সাতজনেরই সুযোগ রয়েছে এই টুর্নামেন্ট জয়ের। এই মৌসুমে ইতোমধ্যেই পাঁচবার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান বদল হয়েছে। এমনটা হওয়ার মূল কারণ সেরেনা উইলিয়ামসের অনুপস্থিতি। নিষেধাজ্ঞার কারণে টেনিস থেকে নির্বাসনে ছিলেন মারিয়া শারাপোভাও। তবে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো কোন শিরোপার দেখা পেয়েছেন রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্ল। তিয়ানজিন ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। তার একদিন পরই নতুন করে র‌্যাঙ্কিং আপডেট করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়েই চমকে দিয়েছেন মারিয়া শারাপোভা। এক লাফে ২৯ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে তার। এর ফলে ৮৬ থেকে ৫৭ নাম্বারে উঠে এসেছেন ৩০ বছর বয়সী এই রাশিয়ান তারকা। তবে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে কোন পরিবর্তন আসেনি। যে কারণেই শীর্ষে যথারীতি রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ। শীর্ষস্থান ধরে রাখতে মরিয়া এই তারকা। যে কারণেই ডব্লিউটিএ ফাইনালসের প্রতিটি ম্যাচ জয়ের প্রতিজ্ঞা তার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা বিশ্বের শীর্ষ আটজন খেলোয়াড় খেলছি। এখানে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই কোর্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করছে। আমিও চাই এই টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচ জিততে।’ সিমোনা হ্যালেপের পরেই রয়েছেন যথাক্রমে স্প্যানিশ টেনিস তারকা গারবিন মুগুরুজা, চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভা, ইউক্রেনের এলিনা সিতোলিনা।
×