ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রয়েছে বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ অক্টোবর ২০১৭

রয়েছে বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ

স্বনির্ভর বাংলাদেশ জ্বলে উঠছে দিন দিন। পরনির্ভরশীলতার সময় পেরিয়েছি আমরা। তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলা ‘তলাবিহীন দেশ’ এখন সবার চোখে তাক লাগিয়ে অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হয়ে আরও বড় সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ৪৫ বছর আগে পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে বাংলার সাহসী তরুণরা। সেই বিজয়ের ধারাবাহিকতায় এবার অর্থনৈতিক বুনিয়াদে শক্তিশালী হয়ে বিনিয়োগ ক্ষেত্রেও বিজয় এনেছে বাংলাদেশ। একসময় বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অনুরোধ করা হতো। অনেকে তা প্রত্যাহারও করে দিত। সময় বদলে গেছে। এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রস্তাব দিচ্ছে চীন, জাপান, ভারত, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের শিল্পোদ্যোক্তরা। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে এগিয়ে নিতে ভিশন ২০২১ ঘোষণা করেছিল ২০০৯ সালে। সেই আলোকে আগামী ১৫ বছরে দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলও রয়েছে। বাংলাদেশে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল যতই বাড়ছে, সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ প্রস্তাবও ততই বাড়ছে। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দেশী ও বিদেশী কোম্পানিকে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান, পণ্য আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক সুবিধা, আয়কর ছাড়সহ বিভিন্ন প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে বেজা (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ)। এছাড়া রয়েছে গ্যাস, বিদ্যুত ও জমির নিশ্চয়তা এ রকম বিভিন্ন প্রণোদনামূলক প্যাকেজ দেখে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ তৈরি হয়েছে দেশী ও বিদেশী কোম্পানিগুলোর। এছাড়া দেশীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে ইতোমধ্যে কয়েকটি বিদেশী কোম্পানি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন (৪ কোটি টাকা) ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বেজা। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতি গতি পাবে, তেমনি বেকার সমস্যা থেকেও মুক্ত হবে বাংলাদেশ। একসময় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা ছিল স্বপ্ন। এখন তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের এক দরজায় ১৬টি সেবা দেয়ার সুযোগ রেখে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইন, ২০১৭’–এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইনের অধীনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ওয়ান–স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সহজে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, দেশে বিনিয়োগকে উৎসাহ দিতে এবং বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করতে ওয়ান–স্টপ সার্ভিস আইন করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের ডুইং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম। সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০-র নিচে নিয়ে আসতে চায়। এটা করার জন্য বিনিয়োগ পরিবেশ ভাল করতে হবে, বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ‘কেন্দ্র্রীয় ওয়ান–স্টপ সার্ভিস কর্তৃপক্ষের’ কাছ থেকে বিদ্যুত ও গ্যাসের সংযোগ, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের অনুমোদন, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ, পানি–সংযোগ, নাম ছাড়পত্র, নিবাসী ও অনাবাসী ভিসা, অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা, ভূমি অধিগ্রহণ, জমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমতি ইত্যাদি সেবা পাওয়া যাবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেছেন, এসব সেবা দেয়ার সময়সীমা ও অন্যান্য বিষয় বিধিতে উল্লেখ থাকবে। আইন না মানলে আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কৃষি আর গ্রামীণ অর্থনীতির পুরনো বৃত্ত ভেঙে পরিকল্পিত শিল্পায়নের পথেই হাঁটছে দেশ। বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে আইন তৈরি করেছে, তাতে যে কোন দেশ সরকারী পর্যায়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারবে। ব্যবসা করতে পারবে বিদেশী যে কোন প্রতিষ্ঠানও। এ ছাড়া দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্যও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সবার জন্য অবারিত সুযোগ রাখার কারণে প্রতিদিনই তাদের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানি যোগাযোগ করছে। প্রণোদনার প্যাকেজ, আইন-কানুনসহ বিনিয়োগের খুঁটিনাটি বিষয়ে জানতে অনেকে কার্যালয়ে আসছে। ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও। প্রত্যেকের মাঝে লুকিয়ে আছে একজন উদ্যোক্তা। টাকা জমিয়ে তারল্য ফাঁদ সৃষ্টি না করে উৎপাদনশীল কাজে বিনিয়োগ করতে হবে। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। তাই প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে উদ্যামী হতে হবে। কোন কাজই ছোট নয় এই দৃষ্টিকোণ থাকতে হবে। তাহলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও অনেক কমে যেতে পারে। অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক সাফল্যই দারিদ্র্যের কলঙ্ক মোচন করে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে সে দিন আর বেশি দূরে নয়।
×