ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি এখন শুধু খোরপোষের অর্থনীতির নয় ॥ মতিয়া

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

কৃষি এখন শুধু খোরপোষের অর্থনীতির নয় ॥ মতিয়া

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি হলো কৃষি। আবার এ কথাও সত্যি যে আমরা শুধু কৃষির ওপর নির্ভরশীল নই। কৃষির পাশাপাশি আমাদের শিল্পসহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোও বাংলাদেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে। এ কারণেই বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। এর এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুচিন্তিত ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত রয়েছে সমগ্র দেশের উন্নয়ন। আমাদের কৃষি এখন শুধু খোরপোষের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। আমাদের কৃষি এখন লাভজনক কৃষির দিকে পা বাড়াবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কৃষিখাতকে যদি লাভজনক করা না যায়, তাহলে গ্রামের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তরুণ ও উদ্যমীরা কৃষিকে বাদ দিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহর বা অন্যত্র চলে যাবে। অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি কৃষি- এ মন্ত্র কোন অবস্থাতেই তাদের আটকে রাখতে পারবে না। তাই শুধু বৈজ্ঞানিক বা আধুনিকতা নয়, সমস্ত সত্তা দিয়ে কৃষিকে ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক করে তুলতে পারলেই আমরা কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। তিনি আরও বলেন, আত্মতৃপ্তি বা আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই। আবার কোন কিছু করারও শেষ নেই। দায়িত্ব বোধ থেকেই আমরা দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করি। কে ভেবেছিল আমাদের দেশ শিক্ষা দীক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ ও জলবায়ু সচেতনতার জন্য ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ হবেন? এ সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুচিন্তিত ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের কারণে। যেমনিভাবে নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে একটি দেশ এগিয়ে যায়, তেমনিভাবে নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিকে যাতে সারাবিশ্ব শ্রদ্ধার চোখে দেখে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে কাজ করতে হবে। মন্ত্রী শনিবার সারাদেশ থেকে আগত কৃষি বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে গাজীপুরে ছয় দিনব্যাপী বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচী প্রণয়ন কর্মশালা-২০১৭’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি হাইব্রিড ও জিএম খাদ্যের ব্যাপারে সবাইকে আরও উদার ও বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি দেশীয় জাতসমূহের ফলন বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানীদের বলেন এবং ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। এর আগে মন্ত্রী বিভিন্ন প্রদর্শনী ও জাত পরিদর্শন করেন। বিএআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদের সভাপতিত্বে বিএআরআই’র কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ভাগ্যরানী পাল, বিএআরআইয়ের পরিচালক ড. বীরেশ কুমার গোস্বামী এবং ড. পরিতোষ কুমার মালাকার বক্তব্য রাখেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএআরআই’র পরিচালক (গবেষণা) ড. মোঃ লুৎফর রহমান। কর্মশালায় কৃষি প্রযুক্তি ও জাত উদ্ভাবন এবং তা কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্ব দেন বক্তারা। বিএআরআই’র মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০টি ভ্যারাইটি উদ্ভাবনের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে বিএআরআই’র বিজ্ঞানীরা। ইতোমধ্যে ২৮টি ভ্যারাইটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের দেশে মে হতে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ফল পাওয়া যায়। এখানকার বিজ্ঞানীরা মার্চ হতে অক্টোবর পর্যন্ত ফলের উৎপাদনের জন্য কাজ করছেন। আয়োজকরা জানান, গত অর্থবছর যে সকল গবেষণা কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায়ন এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বছরের গবেষণা কর্মসূচী প্রণয়নের উদ্দেশে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এই গবেষণা পর্যালোচনা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা, অভ্যন্তরীণ গবেষণা পর্যালোচনা ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা। প্রথমে আঞ্চলিক পরে অভ্যন্তরীণ ও সবশেষে কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা ও কর্মসূচী প্রণয়ন কর্মশালার মাধ্যমে গত বছরের গবেষণা কার্যাবলীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরবর্তী বছরের গবেষণা কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়ে থাকে যে কারণে এই কর্মশালার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন পর্যায়ের এই কর্মশালা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষক প্রতিনিধি, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় ও আঞ্চলিক কৃষির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সেই আলোকে গবেষণা কার্যক্রম প্রণীত হয়। আঞ্চলিক গবেষণা পর্যালোচনা অঞ্চল ভিত্তিক অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ ও কেন্দ্রীয় গবেষণা পর্যালোচনা বারি সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় বিএআরআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালকবৃন্দ, পরিচালকবৃন্দ, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং সরকারী, বেসরকারী ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠনের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৫০০ জন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ২০৮টিরও বেশি ফসলের ৫১২টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ), রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৪৮২টি অন্যান্য প্রযুক্তিসহ এযাবৎ ৯০০টিরও বেশি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে দেশে গম, তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, সবজি, মসলা এবং ফলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই বাছাই ও দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কর্মসূচী গ্রহণ করাই এ কর্মশালার প্রধান উদ্দেশ্য।
×