ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস হার্ভি ও ইরসার পর এবার ভয়াবহ দাবানলে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ওয়াইন এলাকা। অঞ্চলটি মদ তৈরির জন্য সুখ্যাত। অগ্নিকা-ে বহু মদের দোকান ও কারখানা পুড়ে গেছে। ভস্মীভূত হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩২ একর এলাকার বনভূমি। নিহতের সংখ্যা ১৩, আহত দুই শতাধিক, নিখোঁজ দেড় শতাধিক। তীব্র গরম, হল্কা বাতাস, আর্দ্রতার অভাবের সঙ্গে প্রবল বায়ুর জেরে জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। সেখানকার গভর্নর স্বীকার করে নিয়েছেন যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। অন্য রাজ্যগুলো থেকে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা আনাসহ সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। দাবানলের কারণ এই মুহূর্তে জানা না গেলেও এর পেছনে জলবায়ু ও আবহাওয়ার পরিবর্তন কাজ করছে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে পরিবেশবিদদের কাছ থেকে। চলতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যাচ্ছে। মেক্সিকোয় ভূমিকম্পে প্রাণহানিসহ বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। ভূমিকম্পের পরপরই সেখানে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুবিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিক অতি বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল ও ভয়াবহ বন্যা। চীন থেকে শুরু করে ভারতের ব্যাপক অংশ, নেপাল ও বাংলাদেশ ছিল এই অতিবৃষ্টি এবং বন্যার প্রকোপস্থল। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসম, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ছিল ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এর অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের কারণে ভূম-লের বায়ুস্তরে ওজন হোলের আয়তন বৃদ্ধি, উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরুর ঘন ভারি তুষার স্তূপ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি মহাসাগরীয় স্রোত এল নিনো, লা নিনার প্রতিকূল প্রভাব। এর বাইরেও নির্বিচারে প্রাকৃতিক বন ধ্বংস, বিভিন্ন নদ-নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ, কয়লা ও জীবাশ্ম, জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি। উল্লেখ্য, এসব একদিনে বা কয়েক বছরে হয়নি। বরং দীর্ঘদিন ধরে মানুষ নানাভাবে নানা উপায়ে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতিকে। সেটা বর্তমানে এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, প্রকৃতিও বিরূপ হয়ে ফুঁসে উঠেছে। দেখা দিয়েছে রুদ্ররূপে। আশার কথা এই যে, বিলম্বে হলেও বোধোদয় ঘটেছে মানুষের। অতঃপর ধরিত্রীকে রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনে সর্বস্তরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক ধরিত্রী সম্মেলন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০১৫ সালের ৩০ নবেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। এই সম্মেলনে চুক্তি অনুসারে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে দেশগুলো। এও বলা হয়েছে যে, সবার চেষ্টা থাকবে যাতে এটি দেড় শতাংশের নিচে রাখা যায়। তবে এ বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর সুস্পষ্ট কোন অঙ্গীকার নেই। তদুপরি যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে এই চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তবে ভাগ্যের পরিহাস এই যে, যুক্তরাষ্ট্রই এবার ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও দাবানলসহ একাধিক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত। কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের মতে প্যারিস চুক্তিতে নানা ধরনের ঘাটতি রয়েছে। চুক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ১০ হাজার কোটি ডলারের যে তহবিলের কথা বলা হয়েছে তা খুবই কম। কেননা, এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হলে প্রতিবছর রাষ্ট্রগুলোকে এক ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান হবে কোথা থেকে? যুক্তরাষ্ট্র এতে না থাকায় অর্থ সঙ্কট আরও বাড়বে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের অগ্রগতি সন্তোষজনক এবং একটি সবুজ পৃথিবী গড়ে তোলার জন্য ইতিবাচক। সার্বিকভাবে চুক্তিটিতে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়নের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকলেও এবং কিছু বিষয় দুর্বলভাবে উপস্থাপিত হলেও বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টিতে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে বিশ্বের ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রপ্রধানদের বোধোদয়সহ দায়িত্বশীল ভূমিকা এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যাশিত।
×