ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে এক হাজার বেজ স্টেশন হবে

টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ৬১০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১০ অক্টোবর ২০১৭

টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে ৬১০ কোটি টাকার প্রকল্প

ফিরোজ মান্না ॥ টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য ৬১০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এই টাকায় সারা দেশে এক হাজার বেইজ স্টেশন (বিটিএস) স্থাপন করবে টেলিটক। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটককে অন্য অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে তোলাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। নেটওয়ার্ক দুর্বল বলে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে চলে যাওয়া রোধ হবে। টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে সরকারী মোবাইল অপারেটর টেলিটকের নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিতে কাজ শুরু হয়েছে। নেটওয়ার্ক উন্নয়নে সরকারের কাছে ৬১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা পেলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ টাকা পাওয়া যাবে সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করে। মন্ত্রণালয় যখনই টাকা ছাড় করবে তখনই টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে হাত দিতে পারি। অন্য অপারেটররা প্রতিনিয়ত তাদের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু টেলিটকের কোন বিনিয়োগ নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। দেশের অনেক জায়গায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক নেই। টেলিটকের থ্রিজি নেটওয়ার্কেরও একই অবস্থা। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমরা টেলিটক ব্যবহার করছি। পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়া, বিদ্যুত, টেলিফোন বিল, ওয়াসার বিলসহ নানা রকম সেবার কাজে টেলিটক ব্যবহার হলেও টেলিটকের উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি। টেলিটককে অন্য অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিতে হলে এখানে বিনিয়োগ করতেই হবে। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নিজেই নির্দেশ দিয়েছেন। টেলিটকের চাওয়া ৬১০ কোটি টাকা দুই দফায় একনেকে পাস হয়েছে। এরপরও টাকা ছাড় না হওয়ায় কাজে কিছুটা সময় লাগছে। অর্থ মন্ত্রণালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোন টাকাই ছাড় করেনি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করা হলেও এখন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় কোন টাকাই ছাড় করেনি। টেলিটকের এমডি কাজী মোঃ গোলাম কুদ্দুস বলেন, টেলিটক হচ্ছে দেশের কোম্পানি। এই কোম্পানির ফোন অনেকেই ব্যবহার করতে চান। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নেটওয়ার্কের। আমরা সরকারের কাছে নেটওয়ার্ক উন্নয়নের টাকা চেয়েছি। টাকা পেলে সারা দেশে নতুন করে এক হাজার বিটিএস (বেইজ স্টেশন) স্থাপন করব। আগের বেইজ স্টেশনগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো গেলে অন্য যে কোন আপারেটরের মতো টেলিটকের নেটওয়ার্ক দেশের সব জায়গায় পাওয়া যাবে। নেটওয়ার্ক না পেলে মানুষ তো বিমুখ হবেই। বর্তমানে টেলিটকের প্রতি গ্রাহক তাই হচ্ছে। দেশের মানুষ টেলিটকের যতই ভাল চাক না কেন। আসল কথা সেবা। সেবা না পেলে মানুষ তো অন্যদিকে যাবেই। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে টেলিটক দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে যায়। মানুষ শুরুতে টেলিটকের প্রতি যে গভীর ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল তা ফিরিয়ে আনতে। হাতে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ টেলিটক ব্যবহার করতে আগ্রহী। কিন্ত সেবার মান ও নেটওয়ার্ক দুর্বলতার কারণে মানুষ অন্য অপারেটর বেছে নিচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে টেলিটকের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই কয়েক ধাপে টেলিটককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। টেলিটকের জন্য একাধিক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা একে একে সবকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ে থ্রিজি সেবা পৌঁছে দেয়া যাবে। এমন কি ভবিষ্যতে ফোর জি সেবার বিষয়টি চলে আসলে তখন টেলিটক ফোর জি সেবাও দিতে পারবে। টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ বেশ আগে থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। বিটিসিএলের টাওয়ারগুলো শেয়ার করার জন্যও বিটিসিএলের সঙ্গে চুক্তিও হয়েছে। এ ছাড়া গ্রাহকরা যেন সারাদেশেই টেলি রিচার্জ করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও নেয়া হযেছে। টেলি রিচার্জ অনেক জায়গায পাওয়া যেত না। এখন বেশিরভাগ জায়গায় টেলি রিচার্জ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন পোস্ট অফিসে টেলিটকের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং করা হচ্ছে। টেলিটক যেন কোন বেসরকারী মোবাইল কোম্পানির চেয়ে পিছিয়ে না থাকে সেটাই হবে মূল কাজ। সারা দেশে টেলিটকের মাত্র ৩ হাজার ৭০০ বিটিএস বা টাওয়ার রয়েছে। অন্য মোবাইল কোম্পানির কয়েক গুণ বেশি টাওয়ার থাকায় তারা গ্রাহককে নেটওয়ার্ক সুবিধা বেশি দিতে পারছে। টেলিটক যদি বিটিসিএলের টাওয়ার ব্যবহার করতে পারে তাহলে সারাদেশে নেটওয়ার্ক সুবিধা অনেক বাড়বে। টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ১২ লাখ। গ্রামীণফোনের গ্রাহক সাড়ে ৫ কোটির ওপরে। বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৬ কোটির বেশি। দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক বর্তমানে প্রায় ১৩ কোটি। সূত্র জানিয়েছে, গ্রাম পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে সরকারী মালিকানাধীন মোবাইল আপারেটর টেলিটক থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের) নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রায় ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে।
×