ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচর্যা ছাড়াই বাম্পার ফলন ॥ চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি

রফতানি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সুপারি

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১০ অক্টোবর ২০১৭

রফতানি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সুপারি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠা দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সুপারি গাছে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করা হচ্ছে দখিনের সুপারি; যা দীর্ঘদিন থেকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলছে। কয়েকদিন থেকে বরিশালের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সুপারি কেনাবেচার হাট বেশ জমে উঠেছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ঝালকাঠির বাগড়ি, সাতুরিয়া, রাজাপুর, লেবুবুনিয়া, বাদুরতলা ও মীরেরহাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন স্থানীয় শত শত কৃষক ও জেলার বাইরে থেকে আসা পাইকাররা ভিড় করছেন সুপারি বিকিকিনির জন্য। এসব হাটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার সুপারি কেনাবেচা হচ্ছে। বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলায় এবার সুপারির বাম্পার ফলনের পর স্থানীয় বাজারে দাম ভাল পাওয়ায় বেজায় খুশি স্থানীয় সুপারি চাষীরা। এসব এলাকার সুপারি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বস্তায় প্যাকিং করে ট্রাকে করে পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্নপ্রান্তে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের সুপারি দীর্ঘদিন থেকে বিদেশেও রফতানি করা হয় বলে জানিয়েছেন পাইকাররা। বিভিন্ন হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চলের সুপারি হাটে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে শত শত কৃষক ও পাইকার বিকিকিনির জন্য ভিড় করছেন। পাইকাররা এখান থেকে সুপারি ক্রয়ের পর মজুদদারদের কাছে চড়ামূল্যে বিক্রি করে থাকেন। এক সময় ফিলিপিন্স ও নিকোবর থেকে আমদানিকৃত এশীয় এরিকা কাটচু জাতের সুপারি গাছ বাংলাদেশের প্রায় সব জেলায় রোপণ করা হলেও বরিশাল ও খুলনা বিভাগে এ গাছ বেশি জন্মে। একবার এ গাছ লাগালে তেমন কোন পরিচর্যা ছাড়াই ৩০ থেকে ৩৫বছর ফলন পাওয়া যায়। কৃষকরা জানান, ধানের চেয়ে সুপারি গাছে প্রায় তিণগুন বেশি আয় হয়। ফলে এ অঞ্চলের কৃষক সুপারি চাষের দিকে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাছাড়া সুপারি বাগানে অনায়াশে লেবু, হলুদসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা যায়। রাজাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজাপুর উপজেলার ৫৪টি গ্রামের প্রায় তিন শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সুপারির বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকে বাড়ির পাশে সুপারি গাছ লাগিয়েও ভাল ফলন পেয়েছেন। এক যুগের মধ্যে চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে বলেও দাবি করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। স্থানীয় হিসেব মতে, প্রতি কুড়ি (২১০টি সুপারিতে এককুড়ি) সুপারির মূল্য ৩৫০ থেকে চার শ’ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজার ও সুপারির বাগান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা সুপারি ক্রয় করে নিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থানের চাহিদা মিটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বড়জাতের সুপারি বিদেশে রফতানি করা হয়। রাজাপুরের চাড়াখালি এলাকার সুপারির বাগান মালিক কিসমত ফরাজী বলেন, গত কয়েকটি বছরের চেয়ে এ বছর ফলন হয়েছে তিণগুন। আর সুপারির আকারও হয়েছে অনেক বড়। চলতি মৌসুমে তিনি এক লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারবেন বলেও উল্লেখ করেন। একই গ্রামের রাসেল বেপারি বলেন, আমার দুই একর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এবছর সুপারির ফলন ভাল হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করা হয়েছে। বাগানে আরও যে পরিমাণ সুপারি রয়েছে তাও প্রায় এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। মীরেরহাট গ্রামের মোসলেম আলী বলেন, আমার বাপ-দাদার আমলের সুপারির বাগান। এ বছরের মতো এত ফলন আগে কখনও দেখিনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের বাগানের সুপারি বাজারে বিক্রির জন্য নেয়ার প্রয়োজন হয় না। পাইকাররা বাগান থেকেই সুপারি ক্রয় করে নিয়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে রাজাপুর হাটে সুপারি ক্রয় করতে আসা পাইকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমরা এখান থেকে সুপারি ক্রয় করে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আড়তে সুপারির আকার নির্ধারণ করে বড় সাইজের সুপারি বিদেশে রফতানির জন্য মজুদ করি। অন্যান্য সুপারি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করা হয়। রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, এবছর সুপারি চাষের জন্য অনুকূল আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। যা দেখে এলাকার মানুষ সুপারি চাষে আরও উৎসাহিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুপারি বাগানের মালিকরা প্রতিবছরই সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ আবু বকর সিদ্দিক জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে পাঁচ শ’ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানির মাধ্যমে সুপারি দীর্ঘদিন থেকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখে চলছে।
×