ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-ইইউ ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১০ অক্টোবর ২০১৭

ভারত-ইইউ ঘোষণা

ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত ১৪তম ভারত-ইইউ যৌথ ঘোষণাটি সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। ঘোষণায় অজ্ঞাত কারণে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহৃত না হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে মিয়ানমারের প্রতি এই আহ্বানকে মূলত সেদিকেই নির্দেশ করে বৈকি। একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকারকে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী নতুন করে জাতিগত রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান শুরু করে। ফলে সে দেশ থেকে ইতোমধ্যে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। উল্লেখ্য, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কয়েকটি হঠকারী হামলার পর শুরু হয় এই সহিংসতা। অবশ্য আরসা ইতোমধ্যে যুদ্ধবিরতিসহ শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে মিয়ানমার সরকারকে। অন্যদিকে, উদ্ভূত রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে ২০ দিনের সফর শেষে বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তাও সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। মূলত বাংলাদেশের ভূমিকার কারণেই মিয়ানমার সরকার সৃষ্ট রোহিঙ্গা সঙ্কট জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে সীমিত সম্পদ ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অসহায় শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। তদুপরি প্রতিবেশী দেশটির যুদ্ধসহ শত উস্কানি সত্ত্বেও অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ধৈর্য ধরে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের কিছু হঠকারী ব্যক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ইন্ধন থাকাও বিচিত্র নয়। সম্প্রতি লন্ডনে এ ধরনের গোপন বৈঠকের খবর মিলেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রদত্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবিশেষ প্রশংসিত হয়েছে। এতে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উদ্ভূত রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সহিংসতা ও জাতিগত নিধন নিঃশর্তভাবে বন্ধ করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে একই সঙ্গে তিনি পাঁচটি প্রস্তাবও পেশ করেছেন। বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ, বিপুল জনগোষ্ঠী ও স্বল্প পরিসরে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে সমর্থ নয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উদারতা, মানবিকতা ও সহানুভূতির কারণে বাংলাদেশ তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সহায়সম্বলহীন শরণার্থীদের জন্য। স্বভাবতই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের এই ঔদার্য ও মানবিকতা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণেও সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম কূটনৈতিক সাফল্য। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, ভারত, চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে এবং পাঠাচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেসহ অন্য রাষ্ট্রপ্রধানরা আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া, চীন ও ভারত এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে খোলাখুলি কিছু না বললেও প্রবলভাবে বিরোধিতা করেনি। বরং ভারত ও চীন ত্রাণ পাঠিয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য। ওআইসিও রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করেছে। বলতেই হয় যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবারই প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যাটি বেশ জোরেশোরে উপস্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিসরে এবং জাতিসংঘে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত ৫ দফা সমস্যাটির সুদূরপ্রসারী সমাধানে প্রভূত সহায়ক হতে পারে। এখন জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় কিভাবে এই সমস্যাটি সমাধানে অগ্রসর হয় সেটাই দেখার বিষয়। রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় জরুরী ভিত্তিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আরও তহবিল চেয়েছে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। এই প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত সমস্যার দ্রুত সমাধানে ভারত-ইইউ যৌথ ঘোষণাটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে সমর্থ হবে নিঃসন্দেহে। সর্বশেষ কানাডা, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশসহ রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেছে বাংলাদেশকে। এ সবই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।
×