ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেস তোপেই বিধ্বস্ত মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৯ অক্টোবর ২০১৭

পেস তোপেই বিধ্বস্ত মুশফিকরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আলোচনায় ছিল পেস আক্রমণ। এখানকার কন্ডিশনে সাধারণত পেসাররাই সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের শুরু থেকেই মূল আলোচনা ছিল স্বাগতিকদের পেস আক্রমণকে মোকাবেলা করার কৌশল তৈরি করা। কিন্তু সেই কৌশলে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রথম টেস্টে পেসারদের পাশাপাশি স্পিনার কেশভ মহারাজের ঘূর্ণিতেও ভেঙ্গে পড়েছিল বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু ব্লুমফন্টেইনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পুরোটাই ছিল পেসারদের দাপট। কাগিসো রাবাদা একাই দুই ইনিংসে ধসিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি ৫ উইকেট শিকার করেন। ক্যারিয়ারের ২২তম টেস্টে ১০০ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান রাবাদা আর তৃতীয়বারের মতো নেন ম্যাচে ১০ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলে এবার অন্যতম দুই পেসার ডেল স্টেইন ও ভারনন ফিল্যান্ডার নেই। এটা যেন একটা সুসংবাদ হয়ে এসেছিল বাংলাদেশ শিবিরে। তাই দেশ ছাড়ার আগে টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা আমাদের জন্য বাড়তি সুবিধার। এবার হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকায় কোন মাইলফলক অর্জন করব আমরা।’ কিন্তু প্রথম টেস্টে নামার পর সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। দুই পেসার রাবাদা ও মরনে মরকেলের গতির কাছে দিশেহারা হয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। পোচেফস্ট্রুমে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে প্রোটিয়া পেসাররা বাংলাদেশের ১১ উইকেট দখল করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে মরকেল প্রথম ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তবে ইনজুরিতে পড়ে ইনিংসের ১১তম ওভারেই তিনি মাঠের বাইরে চলে যান। তবে তার অভাবটা বুঝতেই দেননি রাবাদা। পরদিন তিনি নেন ৩ উইকেট। তার সঙ্গে তরুণ ডুয়ান অলিভিয়েরও দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কোণঠাসা করেন। আর তাদের গতির সঙ্গে বলের ওপর দারুণ নিয়ন্ত্রণ, সুইং ও বাউন্সের বিরুদ্ধে পুরোপুরি অসহায় হয়ে একের পর এক আত্মসমর্পণ করেন তারা। গত ১০ বছরে টেস্টে নিজেদের সবচেয়ে খারাপ ব্যাটিংয়ের চিত্রটা দেখা যায়। মাত্র ৯০ রানে দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৬২ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল। তারপর এটিই ১০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার ঘটনা মুশফিকুর রহীমদের। এবার ইনজুরির কারণে বাংলাদেশের অন্যতম ওপেনার তামিম ইকবাল দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারেননি। প্রথম টেস্টে পুরোপুরি ফিট না হয়েও খেলতে নামেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি ফিটনেসের কারণেই। ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হারের লজ্জার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১১ টেস্ট খেলার ইতিহাসে সর্বনিম্ন সংগ্রহে গুটিয়ে যাওয়ার কলঙ্ক যোগ হয়। তবে ব্লুমফন্টেইন টেস্টে ভীতি কাটিয়ে ওঠার প্রত্যয় এবং ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাসী কথা শুনিয়েছিলেন মুশফিক। সেটা হয়তো সম্ভবও ছিল। কারণ প্রোটিয়া পেসার মরকেলও ইনজুরির কারণে এই টেস্টে খেলতে পারেননি। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। মাত্র দুই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার হলেও রাবাদা ২১ টেস্ট খেলে দলের পেস আক্রমণে সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তারসঙ্গে তরুণ অলিভিয়ের এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ পুরনো কিন্তু টেস্টে কম অভিজ্ঞ ওয়েন পারনেলকে নিয়ে আক্রমণ সাজায় প্রোটিয়ারা। এরপরও পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা কতটা অসহায় সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় প্রথম ইনিংসেই। পোচেফস্ট্রুমের মতোই ব্যাটিংস্বর্গ ছিল ব্লুমফন্টেইনে। দক্ষিণ আফ্রিকা ওভারপ্রতি ৪.৭৭ রান করে মাত্র দেড়দিনে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান তোলার পর সেটা সঠিক প্রমাণিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতাটা বেশ ভালভাবেই জেনে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটেও প্রোটিয়া পেসারদের সুইং, বাউন্স আর শর্ট লেন্থের বলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন ব্যাটসম্যানরা। আর এর পুরো কৃতিত্বই দেখিয়েছেন রাবাদা। প্রথম ইনিংসে তিনি শিকার করেন ৫ উইকেট, অলিভিয়েরের ঝুলিতে আসে ৩টি এবং পারনেল নেন ১টি উইকেট। পেসারদের দাপটে মাথানত করে বাংলাদেশ ৯ উইকেট খুইয়ে অলআউট হয় মাত্র ১৪৭ রানে। পেসারদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও করুণ আর্তনাদ দেখা গেছে ব্যাটসম্যানদের। শর্ট অব লেন্থের বলে শুরু থেকেই ব্যাটসম্যানরা উল্টাপাল্টা খেলেছেন। তাদের ব্যাটিংয়েই পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে পেসভীতি। এমনকি অভিজ্ঞ মুশফিকও ঠিকমতো গতি ও বাউন্স বুঝতে ব্যর্থ হয়ে রাবাদার বলে হেলমেটে আঘাত পান। চার পেসার দিয়েই অবিরাম বোলিং চালিয়ে গেছে প্রোটিয়ারা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের অসহায়ত্ব দেখে। রাবাদা, আন্দিলে ফেহলুকোয়ায়ো মিলে সাঁড়াশির মতো চেপে ধরেন। শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৭২ রানেই দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। আবার ৫ উইকেট রাবাদার, ফেহলুকোয়ায়োর ৩ এবং পারনেল ও অলিভিয়ের নেন বাকি দুই উইকেট। স্পিনার মহারাজ মাত্র ৬ ওভার বোলিং করেছেন। বাকি ৩৬.৪ ওভার বোলিং করে বাংলাদেশের ১০ উইকেট তুলে নিয়েছেন প্রোটিয়া পেসাররা। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ম্যাচে ১০ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান রাবাদা। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উইকেট শিকারের মাধ্যমে তিনি ১০০ উইকেটের মাইলফলফ ছুঁয়ে ফেলেন টেস্ট ক্যারিয়ারে। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ২০ উইকেটের ১১টি নিয়েছিলেন পেসাররা। আর ব্লুমফন্টেইনে দুর্বলতর আক্রমণ বিভাগ নিয়েও পেসাররা শিকার করেন ১৯ উইকেট। এতেই স্পষ্ট হয়ে গেছে পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে অসহায় এবং ভয়ে ভীত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
×