ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মানসম্মত শিক্ষার জন্য

প্রকাশিত: ০৩:১৭, ৮ অক্টোবর ২০১৭

মানসম্মত শিক্ষার জন্য

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ অনেকখানি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। প্রাইভেট ট্যুইশনির দাপট, বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার ঝোঁক, শূন্য শিক্ষক পদ, শিক্ষকম-লীরও আন্তরিকতার অভাব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষিকার শিক্ষণ পরিবেশের অভাব এবং এ কারণে গুণমানের অভাব থাকলে শিক্ষিত হবার ক্ষেত্রটি থেকে যায় সঙ্কুচিত। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড হয়, তবে শিক্ষকরা সে মেরুদন্ডের স্রষ্টা। গোটা মনুষ্য সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত ও শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা আর একটিও নেই। শিক্ষকরা সমাজের প্রাণ। দেশ-জাতি-সমাজ-রাষ্ট্রের দুঃসময়ে সবার চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে জাতিমুক্তির কান্ডারি হিসেবে শিক্ষক সমাজ গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে। তাই পৃথিবীতে যত সম্মানজনক পেশা আছে, তার মধ্যে শিক্ষকতা সর্বোচ্চ সম্মানিত পেশা। মানুষের মধ্যে যারা কৃতজ্ঞ শ্রেণীর, তারা সার্বিকভাবে না হলেও ব্যক্তিগতভাবে কোন না কোন শিক্ষকের কাছে ঋণী। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও শিক্ষকতা একটি মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানসম্মত শিক্ষা। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল পাসের আধিক্য থাকলেও গুণগত মান নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষক দ্বারা সব শিক্ষা দান নিশ্চিত করা জরুরী। মানসম্মত শিক্ষার মূল উপাদান হচ্ছে, মানসম্মত শিক্ষক, মানসম্মত শিক্ষার উপকরণ ও মানসম্মত পরিবেশ। শিক্ষক-শিক্ষিকারাই শিক্ষার্থীদের রোল মডেল। তাই শিক্ষকদের ‘আউট ফিট’; হওয়া উচিত সেরকমই। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভাল না হলে সেদিকে শিক্ষকদের নজর দেয়া সম্ভব হয় না। সরকার ইতোমধ্যে কিছুটা পদক্ষেপ নিয়েছে, এতে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা বাড়লেও তা যথেষ্ট নয়। শিক্ষকরা জাতি গঠনে ভূমিকা রাখেন। আর এ কারণে এ পেশায় আরও মেধাবীদের আসা উচিত। কিন্তু মেধাবীরা তো সচ্ছল জীবনযাপন করতে চায়। পেশায় এসে যদি সেটা না পায়, তাহলে আসবে কেন? শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত জরুরী। যোগ্যতা ও অবদান অনুযায়ী শিক্ষকদের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। তা না হলে যতই বেতন বাড়াক বা কারিকুলাম বদল করা হোক, কোন লাভ হবে না। প্রতিবছর বই বদল হচ্ছে, ভুল বই বের হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার লক্ষ্যটা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। শিক্ষকদের প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। কিন্তু প্রশিক্ষণের নামে উপহাস প্রশিক্ষণই হচ্ছে, তাতে যোগ্য শিক্ষক তৈরি হয় না। অথচ শিক্ষা ও শিক্ষকের উন্নয়নে যোগ্য শিক্ষক দরকার। সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিক্ষকদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা। শিক্ষকদের জ্ঞানের ভা-ার থাকা দরকার সমৃদ্ধ। মর্যাদা ও বেতন স্কেল থাকা উচিত উচ্চস্তরে। যাতে শিক্ষকদের কোন কিছুর জন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়। শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকের সম্পর্ক থাকবে বন্ধু, দার্শনিক ও পথ প্রদর্শকের মতো। ইউনেস্কোর নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সব কমিটির প্রধান থাকবেন শিক্ষক। শিক্ষকরা সমাজ, রাষ্ট্রের আলোকবর্তিকার মতো কাজ করেন। দক্ষ শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদান সম্ভব নয়। মানসম্মত শিক্ষা সবার মৌলিক ও মানবিক অধিকার তাই মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষক ছাত্র-অভিভাবক, বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সরকারের মধ্যে ঐক্য গড়ার মধ্য দিয়ে এ শিক্ষা নিশ্চিত করা দরকার। শিক্ষকরা কোন অবৈধ বা অন্যায় কাজে সম্পৃক্ত হয়ে নিজেকে সন্তানতুল্য ছাত্র ও নিজ সম্প্রদায়কে কলুষিত করতে পারেন না। বর্তমান অবস্থায় সর্বস্তরে শিক্ষক সঙ্কট দূর করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে আনা সঙ্গত। শিক্ষকরা বেতন-ভাতার জন্য রাজপথে নেমে আসবেন, এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো। দেশের সব মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠুক, তেমনই পদক্ষেপ নিতে হবে এখন থেকেই।
×