ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুয়ারে হেমন্ত, প্রকৃতি যেন ঋতুর সময়কাল ভুলে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৬ অক্টোবর ২০১৭

দুয়ারে হেমন্ত, প্রকৃতি যেন ঋতুর সময়কাল ভুলে যাচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ ছাতিম তলায় ম ম গন্ধ জানান দিচ্ছে দুয়ারে হেমন্ত। তবুও গরম কমছে না। শরত যাই যাই করছে। তবু গরম। দাবদাহে মনে হয় এখন গ্রীষ্মকাল। প্রকৃতিও যেন ঋতুর সময়কাল ভুলতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর পরিবর্তন। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। আবহাওয়াবিদগণের কথা- অক্টোবরের প্রথমেই বঙ্গীয় এই ব-দ্বীপে মৌসুমি বায়ু ফিরে আসার কথা। কিন্তু আসছে না। আর তাড়াতাড়ি না আসা মানেই তাপের আধিক্য আরও কিছুটা সময় থাকা। দিন কয়েক আগে দেশে মুষলধারায় বৃষ্টি নেমেছিল। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে হালকা ও মাঝারি। থেমে যায়নি। মাঝে মধ্যেই আকাশে ঘন কালো মেঘের আনাগোনা। বিজলির ঝলকানিতে মেঘ ডেকে ওঠে। ফের বৃষ্টি নামে। আবহাওয়া বিভাগের কথাÑ যে পরিমাণ বৃষ্টি দরকার তা হয়নি। এই সময়টায় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সর্বনি¤œ ২৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বগুড়ায় গত বছর এই সময়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এবার একই সময়ে তা ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ওয়ার্ল্ড মেটিরিওলজিক্যাল অর্গানাইজেশন বলছে-চলতি বছর পৃথিবীজুড়ে উষ্ণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন! সহজ সমীকরণ। সাধারণত শরতের শেষের বেলায় শিশির ঝরার পালা শুরু হয়। মধ্যরাতেই শিশিরে ভিজে সিক্ত হয়ে মানুষ ঘরে ফেরে। এবার তা নেই। দেশের সর্ব উত্তরে পঞ্চগড়ে দিন কয়েক আগে রাতে শিশির ঝরার পালা শুরু হয়। ধারণা করা হয়েছিল হিমালয় পাদদেশীয় এই অঞ্চলে শীঘ্রই হিমবায়ু নামবে। তা আর হলো না। বলা হচ্ছে শীতল বায়ু এবার দেরিতে বইবে। তার অর্থ শীতও দেরিতে এসে দ্রুত চলে যাবে। গত মৌসুমেও তাই হয়েছিল। শীতের সময়কাল ছিল কম। এবার হয়তো শীত আরও কম সময় থাকবে। বিশ্বের আবহাওয়াবিদগণের কথা- তাপমাত্রার যে হিসাব তা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যার ধাক্কা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও লেগেছে। হিমালয়ের ভূগর্ভের প্লেটের পরিবর্তনে সময়ে অসময়ে বরফ গলে প্রকৃতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ভূমিকম্পের শঙ্কা বেড়েছে। প্রতিনিয়ত মৃদু ও মাঝারি ভূকম্পন অনুভূত হচ্ছে বাংলাদেশসহ পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে। ভূকম্পনের পর তাপমাত্রার হেরফের ঘটছে। বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। বাংলার ষড়ঋতুর সবই ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে হেমন্তের মধ্যভাগে নবান্নের পালায় গরম কতটা থাকবে তা নিয়ে কৃষককুল চিন্তিত। হিমেল পরশ থাকলে স্বস্তির সঙ্গে ধান মাড়াই কাটাই করা যায়। যদিও বর্তমানে কৃষির যাবতীয় কাজ হচ্ছে যন্ত্রে। কৃষির যন্ত্র সভ্যতায় কায়িক শ্রম কমেছে। তারপরও ভরদুপুর গরমের জ্বালা সওয়া বেশ কঠিন। প্রবীণ কৃষকগণ বলছেন, এবার রোদের তেজ বেশি। এখনকার গরমের ধরন অন্যরকম। গরমে গা জ্বলছে ঘাম ঝরে কম। ইতোমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। বগুড়া অঞ্চলের কৃষক বলছেন ‘একনি যে গরম বা, ভিঁউত যায়া হাঁসফাঁস করা লাগিচ্চে। কাতিক আগন মাসত ইঙ্কে থাকলে টেকা যাবি ন্য (এখনই যে গরম জমিতে গিয়ে হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে এ রকম থাকলে টেকা যাবে না)।’ শহরের মানুষের গরমের যন্ত্রণা কিছুটা বেশি। গাছগাছালি নেই। বাতাসও নেই। এরই মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হলে তো হয়েছে। যারা তাপানুকূল ঘরে থাকেন তাদের কথা আলাদা। অসহনীয় জ্বালা সইতে হয় আমপাবলিকের। তারা অপেক্ষায় হেমন্তের শীতল পরশের। দেখা যাক কতদিনে আসে।
×