ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালিজ টাইমস ॥ শেখ হাসিনা প্রাচ্যের নতুন তারকা

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ১ অক্টোবর ২০১৭

খালিজ টাইমস ॥ শেখ হাসিনা প্রাচ্যের নতুন তারকা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বহুল প্রচারিত দৈনিক খালিজ টাইমস্ রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি মানবিক আবেদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তাকে প্রাচ্যের নতুন তারকা হিসেবে অভিহিত করেছে। আমিরাতে ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত সর্বাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা খালিজ টাইমসে প্রকাশিত কলামিস্ট এ্যালন জ্যাকবের লেখা এক নিবন্ধে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাচ্যের নতুন তারকা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবন রক্ষায় সীমান্ত খুলে দিয়ে শেখ হাসিনা তার যে সহমর্মিতা ও সমানুভূতি দেখিয়েছেন, সে জন্য এ সপ্তাহে তার চেয়ে বড় কোন হিরো দেখছি না। বাসস জানায়, ‘শেখ হাসিনা জানেন সহমর্মিতার নৈপুণ্য’ শিরোনামের এক কলামে জ্যাকব স্বীকার করেন, স্বৈরাচারী, ঘৃণিত গুরু এবং নামগোত্রহীন লোকদের নিয়ে লেখার আগেই আমাদের উচিত ছিল শেখ হাসিনাকে এই পাতায় উপস্থাপন করা। জ্যাকব তার কলামে লেখেন, লেখার বিষয় নির্বাচনের আগে সব সময় আমাকে কোন বিষয় এবং ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে ভাবতে হয়, এখানে স্বীকার করতেই হয় যে, এ সপ্তাহে আমার লেখার বিষয় দক্ষিণ ভারতের একজন অভিনেতা এবং রাজনৈতিক মাঠে তার আশাবাদী কর্মকা- নিয়ে লেখার বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিন্তু আমি যখন বুঝতে পারলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন প্রাচ্যের নতুন তারকা তখন আমার সিদ্ধান্ত বদলালাম। তিনি বলেন, হ্যাঁ, মিয়ানমারে একজন নোবেল বিজয়ীর উজ্জ্বলতা হারানোর বিষয় নিয়ে মিডিয়া অধিক ব্যস্ত থাকায় আমরা এই মহৎ সুযোগটি হারিয়েছি। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক আবেদনটি অবজ্ঞা করায় একটি অপরাধের বোঝা আমাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। শেখ হাসিনা তার ভাষণে বলেছেন, এতে তার হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। জ্যাকব বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো নেতারা যখন কর্ণধার হন তখন অভিবাসন সমস্যা নিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত বিশ্বে আশার আলো জ্বলে ওঠে। তার কর্মকা- প্রথমে ক্ষীণ মনে হয়েছিল, তবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা সমস্যা প্রত্যক্ষ করতে খালিজ টাইমস্ যখন একজন রিপোর্টার পাঠাল তখনি প্রকৃত সমস্যাটি সামনে চলে আসে। রিপোর্টারের বর্ণনায় উঠে এসেছে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবর্ণনীয় দুর্দশার চিত্র। ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা খাদ্যের জন্য অপেক্ষা করছে, জীর্ণ কুটিরে বসবাস করছে। এ ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে। জ্যাকব লিখেছেন, বিশ্ব গণমাধ্যম রোহিঙ্গা সঙ্কটকে সুচির চোখে দেখার জন্য অপরাধী। দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বারা দেশছাড়া হওয়া রোহিঙ্গাদের রক্ষা করতে সুচিকে অসহায় মনে হয়েছে। অনেকেই অনুধাবন করতে পারেনি যে, দুই বছর আগে তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি নির্বাচনে বিজয়ী হলেও এখন পর্যন্ত দেশটির সামরিক জান্তাই মূল ক্ষমতায় রয়েছে। জ্যাকব বলেন, যখন তার সবচেয়ে বেশি উচ্চকণ্ঠ হওয়ার দরকার ছিল তখন তিনি সোচ্চার হতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তথাকথিত এই আইকনের জন্য আমার সহমর্মিতা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র যখন পছন্দসই সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে যায় তখন এটি ত্রুটিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। আর জান্তা ও একনায়কদের সঙ্গে সন্ধি করা সহজ হয়ে যায়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে সুচির সুচিন্তিত নীরবতা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আমাদের একটি সম্পাদকীয়তে আমি একথা বলেছি। আরও বলব। যখন মানবতার জন্য চিৎকার করে কথা বলা উচিত তখন কারও নিশ্চুপ থাকাটা আমার অপছন্দ। জ্যাকব বলেন, সুচি কণ্ঠস্বর যখন হারিয়েছেন এমন সময় শেখ হাসিনার সোচ্চার হয়ে ওঠা এক বিরাট স্বস্তি। সুচি ও শেখ হাসিনা তাদের নিজ নিজ দেশের মুক্তি সংগ্রামের মহানায়কের কন্যা। দু’জনই খুব কাছ থেকে ট্র্যাজেডি দেখেছেন। যদিও ফারাকটা বিশাল। মানবতা যখন বিপন্ন তখন একজন নিছক দর্শক হয়ে থাকার পথ বেছে নিলেন, অপরজন দেখালেন অমায়িক দয়া। শেখ হাসিনার প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছোট্ট দেশটিতে একবারে ৪ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে অধিবেশন চলাকালে শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যে তিন লাখ শরণার্থী পেয়েছি, কিন্তু আমাদের স্থান সংকুলানের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আরও বেশি শরণার্থী গ্রহণের বিশাল হৃদয় আমাদের রয়েছে। জ্যাকব লিখেছেন, এটা ¯্রফে কোন অনুকম্পার বিষয় নয়, এতে ট্র্যাজিক পরিস্থিতিতে সাহস প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি বলেন, জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে ১২ লাখ শরণার্থী গ্রহণের সাহস দেখিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যতিক্রম, এর সম্পদ সীমিত। এটি বাংলাদেশ সরকারের কারণে সৃষ্ট কোন জন¯্রােত নয়, তথাপি শেখ হাসিনা তার মানবিকতার জায়গা থেকে সরে যাননি।
×