ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দর বৃদ্ধির দাপট দেখাচ্ছে কাগজ ও প্রকাশনা খাতের লোকসানী দুই প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ১ অক্টোবর ২০১৭

দর বৃদ্ধির দাপট দেখাচ্ছে কাগজ ও প্রকাশনা খাতের লোকসানী দুই প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে কাগজ ও প্রকাশনা খাতের তালিকাভুক্তির সংখ্যা দুটি। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই আর্থিক অবস্থা নাজুক। কিন্তু তারপর দর বৃদ্ধির ঝলক দেখাচ্ছে এই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। বাজার সংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে খোদ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কেউই বলতে পারছেন এই দর বৃদ্ধির কারণ। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে হাক্কানী পাল্প ও খুলনা প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং। প্রাপ্ত তথ্যমতে তিন মাসের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত হাক্কানী পাল্পের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি। তিন মাস আগে এই শেয়ারের দর ছিল ৫২ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমান যে শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৮২ টাকা থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। বাজারে গুজব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি খুব শীঘ্র একটি নতুন প্রজেক্ট চালু করবে। তবে এর কোন ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের ভাষ্য গুজব কাজে লাগিয়ে একটি শ্রেণী ফাইদা লুটছে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের সচিব মোহাম্মদ মুসা শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কেন বাড়ছে সেটা বলতে পারছি না। তবে আমাদের কাছে দর বৃদ্ধির কোন সংবেদনশীল তথ্য নেই। বিষয়টি ইতিমধ্যে স্টক এক্সচেজ্ঞ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আগামীতে নতুন টিস্যুর প্রজেক্ট চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের একটি প্রজেক্ট চালুর কথা রয়েছে তবে এর জন্য সময়ের প্রয়োজন। ফলে এর সঙ্গে দর বৃদ্ধির কোন যোগসূত্র রয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিদেনে দেখা যায় ব্যবসা মন্দা থাকার কারণে লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে এ প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছিল ৮৫ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে লাভের বদলে ১ কোটি ৩৭ লাখ লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন থেকে শেয়ার হোল্ডার ৫ শতাংশ শেয়ার প্রদান করে কোন রকম বি ক্যটাগরি টিকিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের মধ্যে পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫৫.৫২ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া ৩৬.১৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাকি ৮.৩২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। ২০১৬ এর ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের কাছে শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৫৭.২৯ শতাংশ। পরবর্তীতে তারা ১.৭৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে তিন মাসের ব্যবধানে লোকসানী প্রতিষ্ঠান খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারের দর বাড়ে ২৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা প্রিন্টিং ২০১৫ সালে কোটি ২৩ লাখ টাকা মুনাফা করে। পরের বছরই প্রতিষ্ঠানির মুনাফায় ধস দেখা যায়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের আর্থিক হিসাবে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা প্রায় ৮ কোটি টাকা কমে গেছে। এ বছর প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা কমে হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠাটি প্রথম বছর (২০১৪) শেয়ার হোল্ডারদের ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। এর পরের বছর জটিলতার কারণে জেড ক্যাটাগরিতে চলে যায় কোম্পানিটি। জানা যায়, নির্দিষ্ট সময়ে লভ্যাংশ বণ্টন সংকান্ত জটিলতার কারণে এ থেকে জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে খুলনা প্রিন্টিং। ২০১৫ সালের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। যা টাকার অঙ্কে ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ ডিভিডেন্ড কোম্পানিটির শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বিনিয়োগকারীরা ঘোষিত ডিভিডেন্ডের অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু এজিএম সম্পন্ন হওয়ার পর প্রায় ৩০ কার্যদিবস পেরিয়ে গেলেও লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশনের ২৯ ধারা অনুযায়ী ডিভিডেন্ড পরিশোধ সংক্রান্ত কমপ্লায়েন্স প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে ডিএসই এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিতে হয়। সেটি করতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান হয় জেড ক্যাটাগরিতে। এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন খুলনা প্রিন্টিং তালিকাভুক্তি আগে থেকেই বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রত্যরনা করে আসছে। হাক্কানী পাল্পের অবস্থাও ভাল নয়। প্রতিষ্ঠান দুটি নিয়ে কারসাজির গঠনা ঘটছে প্রায় এমন খবরও পাওয়া যায়।
×