ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় কিশোর শ্রমিকের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বগুড়ায় কিশোর শ্রমিকের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার কাহালুতে শুক্রবার দুপুরে একটি টাইলস কারখানার কিশোর শ্রমিকের পায়ুপথে উচ্চশক্তির কমপ্রেসার ব্লোয়িং যন্ত্রের পাইপের হাওয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শ্রমিকের নাম রাসেল (১৮)। সে কাহালুর বিরকেদার গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে। এর আগে খুলনাসহ দেশের কয়েকটি স্থানে পায়ুপথে হাওয়া দিয়ে হতাহতের ঘটনায় ব্যবহার হয়েছিল মোটর গাড়ি ও সাইকেলের হাওয়া দেয়া মেশিনে। দেশে এই প্রথম কোন টাইলস কারখানার উচ্চ ক্ষমতার কমপ্রেসার মেশিনের পাইপে হাওয়া দিয়ে এক কিশোরকে হত্যা করা হলো। বগুড়ার কাহালু পুলিশ এই ঘটনায় ওই টাইলস কারখানার এক শ্রমিক রুবেল হোসনেকে (২৫) গ্রেফতার করেছে। কেন সে কিশোর শ্রমিককে এত উচ্চ শক্তির হাওয়া দিয়ে হত্যা করল এ বিষয়ে সে কিছু বলেনি। তবে পুলিশের কাছে সে জানিয়েছে ওই কিশোরের পায়ুপথে হাওয়া দিয়ে সে খেলছিল। তবে এই কথা বিশ্বাস করছে না পুলিশ। এর পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, দুপুরের দিকে কাহালুতে অবস্থিত এবিসি টাইলস কারখানায় কিছু শ্রমিক টাইলসের কাজ করছিল। এ সময় হঠাৎ একটি গাড়িতে করে এক শ্রমিককে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তখন কৌতূহলী লোকজনের প্রশ্নে কারখানার অন্য শ্রমিকরা পায়ুপথে হাওয়া দেয়ার ঘটনা বলে। তখন বিষয়টি প্রচার হয়ে যায়। এএবিসি টাইলস কারখানাটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে। কারখানার মালিক এক সময় বগুড়া শহরে ব্যবসা করতেন। পরে তিনি বিদেশ থেকে যন্ত্র এনে উন্নত মানের টাইলস কারখানা স্থাপন করেন। এই টাইলস কারখানার যে জায়গাটিতে উচ্চ মানের হাওয়ার কমপ্রেসার যন্ত্র আছে সেখানে টাইলস নির্মিত হওয়ার পর ফিনিশিং দেয়া হয়। ফিনিশিং দেয়ার সময় উচ্চ শক্তির হাওয়া প্রয়োজন। এই উচ্চ শক্তির হাওয়া দেয়া হয়েছিল কিশোর রাসেলের পায়ুপথে। গুরুতর আহত রাসেলকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রাসেলের এই অবস্থা দেখে বিস্মিত হয়ে যান। তারা দ্রুত চিকিৎসা দেয়ার একপর্যায়ে কিশোর রাসেল মারা যায়। এই বিষয়ে একজন চিকিৎসক জানান, পায়ুপথ দিয়ে রাসেলের পেটে ও লিভারে উচ্চ চাপে হাওয়া প্রবেশ করে লিভার ফেটে যায়। পেটের ভেতরের অনেক অংশ (নাড়িভুঁড়ি) ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই ধাক্কা হৃৎপিন্ডে গিয়ে ঠেকে। এই অবস্থায় রাসেলকে বাঁচানো যায়নি। রাসেলের বাড়ি ওই কারখানা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বীরকেদার গ্রামে। দরিদ্র পরিবারের রাসেলের মা ওই কারখানার চাকরি করতেন। রাসেলের বাবা আবদুল হান্নান শারীরিক প্রতিবন্ধী। যে কারণে মা চাকরি ছেড়ে দিয়ে ছেলে রাসেলকে ওই কারখানায় নিয়ে গেলে তার শ্রমিকের চাকরি হয়। রাসেলরা দুই ভাই। রাসেল বড়। রাসেলের মৃত্যুর পর মায়ের আহাজারিতে এলাকার লোকজন শোকাতর হয়ে গেছে। প্রতিবন্ধী বাবা প্রায় নির্বাক। পুলিশ জানিয়েছে, এত বড় এই ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।
×