ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাটোরে সম্প্রসারিত হচ্ছে মাছ চাষ ॥ সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নাটোরে সম্প্রসারিত হচ্ছে মাছ চাষ ॥ সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ২৮ সেপ্টেম্বর ॥ নাটোরে দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে মাছ চাষ। মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করায় চাহিদার তুলনায় বেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে এ জেলায়। নাটোরে উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মাছ চাষের পাশাপাশি সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে মাছের পোনা উৎপাদনেও এগিয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের এ জেলা। মাছ চাষ এবং পোনা উৎপাদনে শিক্ষিত বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। পাশাপাশি অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী জেলায় ছোট-বড় প্রায় ২৭ হাজার ২৬৯টি পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে খাস পুকুর রয়েছে সাত হাজার ৫৮টি। এছাড়া বেসরকারী পুকুর রয়েছে ২০ হাজার ২১১টি। এসব পুকুরে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। প্রতি বছর পুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় বর্তমানে ৩৮ হাজার টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার ৩২ হাজার মেট্রিক টন মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের ২০টি জেলায় জীবিতাবস্থায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা সংরক্ষণাগার স্থাপনের দাবি জানান। মৎস্যচাষীরা পুকুর লিজ নিয়ে সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প মাছসহ বিভিন্ন জাতের মাছ বড় করেন। তাদের উৎপাদিত মাছ প্রতিদিন দেড় শ’ থেকে দুই শ’ পিকআপভ্যানে পানির মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ক্রেতারা ফরমালিনমুক্ত মাছ খেতে পারছেন তেমনি লাভবান হচ্ছেন মৎস্যচাষীরা। চাষীদের মতে, সরকারী সহযোগিতা পেলে নাটোর জেলার উৎপাদিত মাছ দিয়ে সারাদেশের আমিষের চাহিদা মেটানো সম্ভব। পুকুর ছাড়াও জেলার ৩১টি নদী ও ১৭টি বিলে মৎস্য অধিদফতরের বিভিন্ন কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন সময়ে পোনা অবমুক্ত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো হয়ে থাকে। এসব নদী ও বিল ছাড়াও মাছ উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারী পর্যায়ে সদরের বনবেলঘরিয়া মৎস্য খামার, বড়াইগ্রাম উপজেলায় কারবালা মৎস্য বীজ উৎপাদন কেন্দ্র এবং বনপাড়া মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার গড়ে উঠেছে। এছাড়া বেসরকারী উদ্যোগে সদর উপজেলার হুগোলবাড়িয়ায় নবীন বহুমুখী মৎস্য চাষী প্রকল্প, বনবেলঘরিয়ায় জিএম মৎস্য বীজ ও পোনা উৎপাদন খামার, একডালায় স্বনির্ভর মৎস্য ও পোনা বীজ উৎপাদন খামার, নারায়ণপুরে সোনালী মৎস বীজ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এসব পোনা উৎপাদন কেন্দ্রে কার্পজাতীয় মাছ যেমন মনোসেক্স তেলাপিয়া, সিলভার, মৃগেলসহ বিভিন্ন মাছের পোনা উৎপাদন করে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। এছাড়া মাছের বড় একটা অংশ যোগান দেয় চলনবিল। চলনবিল মৎস্যসম্পদ এলাকা। চলবিলের সিংড়া অংশে ১৩টি বিল নার্সারির প্রকল্প চলমান রয়েছে। এতে আগামীতে মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে। তাছাড়া তিনটি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে, যেখানে মা মাছ সংরক্ষণ এবং পোনা ছাড়া হয়। চলনবিল মূলত মৎস্য আহরণ এবং সংরক্ষণ এলাকা। চলনবিলের সুস্বাদু মাছকে কেন্দ্র করে চলনবিল তথা নাটোর জেলার সবচেয়ে বড় আড়ত হলো সিংড়া পৌর মৎস্য আড়ত। প্রতিদিন এ আড়ত থেকে প্রচুর মাছ আমদানি এবং রফতানি হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা মাছ কিনতে আসেন এ আড়তে। নাটোরের সফল মাছচাষী ও রেনু পোনা উৎপাদনকারী গোলাম নবী জানান, নাটোরে প্রতি বছর মাছ চাষ ও পোনা উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে।
×