ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধ ও নজরুল বিষয়ে আহমদ রফিকের দুই বই

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধ ও নজরুল বিষয়ে আহমদ রফিকের দুই বই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক জীবনে বহু বই লিখেছেন আহমদ রফিক। এবার শিশু-কিশোরদের জন্য দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন এই ভাষাসংগ্রামী, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক। ছোটদের মননের উপযোগী করে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও নজরুলবিষয়ক দুটি বই। প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ প্রকাশ করেছে তার রচিত ‘ছোটদের মুক্তিযুদ্ধের কথা’ ও ‘কিশোরদের নজরুল’ শীর্ষক দুটি গ্রন্থ। মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো বই দুটির প্রকাশনা উৎসব। একই সঙ্গে সে আয়োজনে উদ্্যাপিত হলো বহুমাত্রিক এই ব্যক্তিত্বের ৮৯তম জন্মদিন। রাজধানীর শুক্রবাদের পূর্ব-পশ্চিম নামের চেইন বুকশপে বই দুটির প্রকাশনা উৎসবের পাশাপাশি উদ্যাপন করা হয় লেখকের জন্মদিন। অন্যপ্রকাশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় ছিল পূর্ব-পশ্চিম। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে নিজের রচিত নতুন দুই বই নিয়ে কথা বলেন আহমদ রফিক। নজরুলগবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, প্রাবন্ধিক-গবেষক মফিদুল হক ও শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, পূর্ব-পশ্চিম পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। আহমদ রফিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের জীবন ছিল অবরুদ্ধ। এক অবরুদ্ধ শহরে জীবন হাতে নিয়ে চলতে হয়েছে। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে স্বদেশ চেতনা জাগ্রত করতেই এ বিষয়ে বই লেখা। এ গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে ছোটরা যেন জানতে পারে জাতির গৌরবময় সেই অধ্যায়। অন্যদিকে নজরুল আমার স্কুল জীবনের প্রিয় কবির বাইরেও ছাত্র জীবনে রাজনীতির দিশারী। রবীন্দ্রনাথকে আমি যেমন বহুমাত্রিক বলি, নজরুলও তাই। রবীন্দ্রনাথের গানের মতো নজরুলের গানকেও আমি তার সৃষ্টিকর্মের সামনে রাখব। তাই নজরুলের জীবনের বিচিত্র ঘটনাবলীকে বইয়ের মাধ্যমে মেলে ধরেছি কিশোরদের জন্য। রফিকুল ইসলাম বলেন, জামাতিরা গোলাম আযমকে ভাষাসৈনিক হিসেবে যখন দাবি করছিল, তখন এই আহমদ রফিকই ভাষাসৈনিককে ‘ভাষাসংগ্রামী’ করে দিয়েছিলেন। ভাষা শহীদদের স্মৃতির স্মারক শহীদ মিনার হলো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিপ্রস্তর। ইতিহাসের সেই অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন আহমদ রফিক। শিশু-কিশোরদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রচনা জাতীয় কর্তব্য। সে সঙ্গে বস্তুনিষ্টভাবে নজরুলের জীবনীকে জানতে হবে। এটি পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেলিনা হোসেন বলেন, তিনি আমাদের ইতিহাসের মানুষ। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধকে তিনি যেভাবে দেখেছেন, তা অতুলনীয়। যে দুইটি বইয়ের মোড়ক আজ উন্মোচিত হলো সেটা বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ছোটদের জন্য লেখা হয়েছে। এটি আমাদের জ্ঞানের জায়গা তৈরি করবে। মফিদুল হক বলেন, ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ অংশীদার আহমদ রফিক। লেখনীর মধ্য দিয়ে তিনি নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। আর এবার শিশু-কিশোরদের জন্য তার লেখা দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে তার জন্মদিন পালন করছি। আমার কাছে মনে হয়, এটি গিনেজ বুকে উঠার মতো ব্যাপার। চিরতরুণ এই মানুষটি বিশাল এক মানবচেতনা নিয়ে কাজ করেন। আলী ইমাম বলেন, আহমদ রফিক জীবনের একটি মুহূর্তও অপচয় করেন না। পড়ছেন, লিখছেন ও গবেষণা করছেন। পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। নিষ্ঠার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজ করে চলেছেন। আবার নজরুলকে নিয়েও তথ্যবহুল অনেক লেখা রয়েছে তার। অনুষ্ঠানে আহমদ রফিককে ফুল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় জাতীয় কবিতা পরিষদ, জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি, অন্যপ্রকাশ, খামখেয়ালী সভা, ঢাকা ইমপেরিয়াল কলেজ, আগামী প্রকাশনী, অনিন্দ্য প্রকাশ, জার্নিম্যান বুকসসহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা। স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সময়ের পরিক্রময় প্রতিষ্ঠার চতুর্থ বছরে পদার্পণ করল স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদ। এ উপলক্ষে পরিষদের পক্ষ থেকে চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বসে এ আয়োজন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক নাসিমা আখতার হোসেন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ ও স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক আশফাকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন পরিষদ সভাপতি স্বাধীনতা বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক কামাল লোহানী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনোয়ার হোসেন খান। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একাত্তরের খরস্রোতা সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বিশেষ করে চরমপত্রটি বাঙালী থেকে অবাঙালী সবার কাছেই ছিল আকর্ষণীয়। এই স্বাধীন বাংলা বেতারের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছেন তারা সবাই গৌরবের অধিকারী। আলোচনার পর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সুরের আশ্রয়ে সাজানো হয় এ পর্ব। গাওয়া হয় বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতারে পরিবেশিত কিছু গান। সম্মেলক কণ্ঠে পরিষদের শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’ ও ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ শিরোনামের দুটি গান। এছাড়াও সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও পরিষদের অন্তর্ভুক্ত প্রজন্মের শিল্পীরা। মেঘ ছুঁয়েছে স্বপ্ন এ্যালবামের প্রকাশনা প্রকাশিত হলো কথাসাহিত্যিক ও গীতিকবি জুলফিয়া ইসলামের লেখা গানের এ্যালবাম ‘মেঘ ছুঁয়েছে স্বপ্ন’। আটটি গানে সাজানো সঙ্গীত সংকলনটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সুবীর নন্দী, রথীন্দ্রনাথ রায়, ভারতের শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য ও জুলফিয়া ইসলাম। সংকলনের সঙ্গীতায়োজন করেছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শাহীন সিকদার ও উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে এ্যালবামটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো লালমাটিয়ার টাইম স্কয়ারের সানরাইজ প্লাজায়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার। আলোচনায় অংশ নেন কবি অসীম সাহা, কবির নাসির আহমেদ এবং দুই সরকার বাংলাদেশের শাহীন সরদার ও কলকাতার উদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি হাসান মাহমুদ।
×