ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বমঞ্চে আবারও লাল সবুজের পতাকা

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিশ্বমঞ্চে আবারও লাল সবুজের পতাকা

বাংলাদেশের তরুণী ইশরাত নাহের ইরিনা দেশের জন্য বয়ে এনেছেন সম্মানজনক এক অর্জন! বিল ও মেলিন্ডা গেটস ইনস্টিটিউট সম্প্রতি ‘120 Under 40: The Nwe Generation of Family Planning Leaders’ পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের এই তরুণী। ইরিনা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন, আজকের ডিপ্রজন্মে থাকছে ইরিনার সাক্ষাতকার নিয়েছেন বেনজির আবরার ডিপ্রজন্ম-আপনার সম্পর্কে জানতে চাই? বিস্তারিত বলুন, কি নিয়ে কিভাবে কাজ করছেন? ইরিনা-আমি পড়াশোনা করেছি ফার্মেসি বিভাগে আর এটাই আমাকে অনেক গবেষণাধর্মী কাজে সুযোগ এনে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়েই গবেষণার কাজ শুরু করি। ধাপে ধাপে স্নাতক শেষ করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল চাকরিতে না গিয়ে, একাডেমিক সেক্টরে চলে আসি, রিসার্চের কাজ শুরু করি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে, যেখানে আমার গবেষণার বিষয় ‘সেক্স এডুকেশন এবং মানসিক স্বাস্থ্য।’ ডিপ্রজন্ম-বিল ও মেলিন্ডা গেটস ইনস্টিটিউটের স্বীকৃতি অনেক বড় অর্জন। কিভাবে পাড়ি দিলেন এ পথ? ইরিনা-আসলে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক এই আয়োজনে আমি যখন আবেদন করি, তখনও বুঝতে পারিনি আমি বিজয়ী হতে পারব। ওই মুহূর্তে আমার প্রজেক্ট সুপারভাইজর আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি বিজয়ী হতে না পারলেও, আমার কাজকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারব যেহেতু নমিনেশন পেয়েছিলাম অনেক আগেই। অনলাইন ভোটিং যখন শুরু হয়েছে, তখন বাংলাদেশকে বিজয়ী করার জন্য অনেকেই ক্যাম্পেন করেছেন এবং আমার কাজের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। জুলাই মাসে টানা ১৫ দিনের অনলাইন ভোটিং শেষে অবশেষে জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তে গত ১২ সেপ্টেম্বর বিল ও মেলিন্ডা গেটস ইনস্টিটিউট সারাবিশ্বের ৪০ জন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। সবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ আমি, সবার সহযোগিতা ছাড়া এই অর্জন সম্ভব হতো না । ডিপ্রজন্ম-বাংলাদেশের মেয়ে পরিচয়টা নিয়ে কতটা গর্বিত? পরিবার, এলাকা সম্পর্কে বলুন– ইরিনা-বাংলাদেশ তো শুধু একটা দেশের নাম না, আমার নিজের অস্তিত্বে¡র নাম, একটা অনুভূতির নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকার সৌভাগ্য হয়নি, তবে সেই সময় আমার দাদাকে কিভাবে নির্যাতন করে রাজাকার রা হত্যা করেছিল সে গল্প আব্বুর মুখে শুনেছি, উনি নিজেও অনেক ছোট ছিলেন অনেক। অনেক দেশের অনেক কিছুই আছে, তবে আমাদের মতো বিজয় দিবস নেই। আর আমার বেড়ে ওঠা সিলেটের শ্রীমঙ্গলে, সেখানেই কেটেছে অনেকগুলো বছর যৌথ পরিবারে। পরিবারে আম্মু-আব্বু-ভাই-বোন-চাচা-চাচি-কাজিন সবাই আছেন, যারা আমাকে সব সময় সব কাজে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী মাসেই বিদেশে পাড়ি জমাব উচ্চ শিক্ষা লাভে, সেখানেও নিজের দেশের কাজকে তুলে ধরতে চাই, দেশে এসে নিজের গবেষণাকে নিজের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই। ডিপ্রজন্ম-বিশ্বমঞ্চে নিজ দেশ প্রতিনিধিত্ব করার অনুভূতি কেমন? ইরিনা-আসলে এই একটা জায়গায় আনন্দের অনুভূতির সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ববোধের জায়গাটা আরও বেড়ে যায়। এতদিন নিজের একক গবেষণার কাজ করেছি, ভুলত্রুটি, ভাল-মন্দ সবকিছুর দায়ভার শুধু আমার নিজের ছিল কিন্তু এখন নিজের দেশকে ভাল কাজের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে তুলে ধরা একটু চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি অনেক বেশি আশাবাদী কারণ, আমরাই তো বাংলাদেশ। অতীতেও বাংলাদেশীরা তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখেছে বিশ্বমঞ্চে এবং আমি বিশ্বাস করে আমরা তরুণরাও নিজের দেশেকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বাস বুকে তুলে ধরতে পারব। ডিপ্রজন্ম-শুনেছি বন্ধ্যত্ব নিয়ে কাজ করেন, একটু বিস্তারিত শুনতে চাই- ইরিনা-আমি মূলত আমার গবেষণার কাজের একটা অংশ হিসেবে পরিবার-পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটা প্রজেক্টের কাজ শুরু করি। কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখালাম, পরিবার-পরিকল্পনা বলতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা শুধু জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকেই বুঝি এবং অনেকেই এটা নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনার খুব গুরুত্ববপূর্ণ। একটা বিষয় হলো বন্ধ্যত্ব এবং মানসিক স্বাস্থ্য- তাই বন্ধ্যত্ব এবং এর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করি পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রজেক্টে। আশা করি, আমাদের দেশের মানুষ একদিন বুঝতে পারবে বন্ধ্যত্ব¡ কোন দুর্বলতা নয়, এটা একটা মেডিক্যাল কন্ডিশন, শুধু এর জন্য মেয়েরা দায়ী নয়, পুরুষ অথবা মহিলাÑ যে কারোর কারণেই বন্ধ্যত্ব¡ হতে পারে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিই হতে পারে অনেক বড় প্রতিকার। এখনও আমাদের দেশে অনেক পরিবারেই সন্তান জন্মদানে অক্ষম মহিলাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ডিপ্রজন্ম-সফলতার পেছনে ভূমিকা যাদের, সফল হওয়ার পেছনে নিজের যে বিষয়টি কাজ করেছে সবচেয়ে বেশি? ইরিনা-আমি নিজেকে সফল মনে করতে নারাজ, কারণ সবেমাত্র যাত্রা শুরু করলাম, আরও অনেক কাজ বাকি, অনেক দূরে এগিয়ে যেতে হবে। তবে আমার পথচলায় আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার বাবা, উনি সমসময় বন্ধুর মতো আমার পাশে থেকে আমাকে সাহায্য করেছেন, কোনদিন কোন কিছুতে না করেননি, আমি যা করতে চেয়েছি আমাকে সব সময় উৎসাহিত করেছেন, আমার জন্য নিরলস চেষ্টা করেছেন সব সময়। তাই আমি যদি একটু ভাল কিছুও করে থাকি জীবনে, সেটার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমার বাবার। আর আমার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল সব সময় আর সেটার পেছনে আছে আমার পরিবার।
×