ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্থগিত হচ্ছে আনু জায়গীরদার ও মশিউর রহমানের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

স্থগিত হচ্ছে আনু জায়গীরদার ও মশিউর রহমানের শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নথির অভাবে স্থগিত হতে যাচ্ছে প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলার আসামি আনু জায়গীরদার এবং মশিউর রহমানের শেয়ার কেলেঙ্কারির বিচারকাজ। উচ্চ আদালতের নির্দেশে নথি পাঠানোর কারণে শেয়ারবাজার বিষয়ক ট্রাইব্যুনালে মামলাটির এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, একই মামলার অপর দুই আসামি এমএ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরীর প্রাপ্ত বেকসুর খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), যাতে এ মামলার নথি উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজার বিষয়ক ট্রাইব্যুনাল পাঠিয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাইব্যুনালটিতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। বিএসইসির প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ মামলায় আপীলের কারণে মামলাটির নথি উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়েছে। কারণ ওখানেও মামলাটি পরিচালনার জন্য নথির প্রয়োজন। এমতাবস্থায় ট্রাইব্যুনালে নথির অভাবে মামলাটির বিচারকার্য বন্ধ হয়ে যাবে। গত ২৩ এপ্রিল শেয়ারবাজারসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর আলী এমএ রউফ চৌধুরী ও সাঈদ এইচ চৌধুরীরকে বেকুসর খালাসের রায় দেন। এর পরে বিএসইসি ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩১ মে উচ্চ আদালতে আপীল করে। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ শেয়ারবাজার বিষয়ক ট্রাইব্যুনালে এসেছে। জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে আপীল সংক্রান্ত একটি নির্দেশ আসে ট্রাইব্যুনালে। একই সঙ্গে মামলার নথি প্রেরণের জন্য ট্রাইব্যুনালকে নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত, যার আলোকে বৃহস্পতিবার পাঠানো হয়েছে। এ মামলার আসামিরা হলেনÑ প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজসহ প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন চেয়ারম্যান এমএ রউফ চৌধুরী, পরিচালক সাঈদ এইচ চৌধুরী ও আনু জায়গীরদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান। তবে এ মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে আসামি মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজ বন্ধ ছিল, যার কারণে শুধুমাত্র এমএ রউফ চৌধুরী, সাঈদ এইচ চৌধুরী ও প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের রায় হয়। এদিকে আনু জায়গীরদার এবং মশিউর রহমানের বিষয়ে চলতি বছরের ২ মে স্থগিতাদেশ শেষ হয়ে যায়, যাতে ট্রাইব্যুনালে এখন এই দুজনের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে। এ মামলায় মশিউর রহমান ও আনু জায়গীরদারের বিচারকাজে দুই দফায় ছয় মাস করে এক বছরের স্থগিতাদেশ দেয় উচ্চ আদালত। প্রথমবার ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল এ বিচারকাজে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে ২৯ নবেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নবেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে। এ সময় এক নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের এক লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল আট কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একই ভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে নয় লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল এক লাখ এক হাজার ৫০০টি। এসব ফরেন ডিভিপির মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনিষ্ট করেছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯-এর ২১ ধারাবলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ-১৯৬৯-এর ১৭ ধারার ই(২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।
×