ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

হেমোডায়ালাইসিস কিডনি রোগীর দোরগোড়ায়

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হেমোডায়ালাইসিস কিডনি রোগীর দোরগোড়ায়

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে ॥ হেমোডায়ালাইসিস এখন কিডনি রোগীর দোরগোড়ায় । ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মাত্র চার শ’ টাকায় হেমোডায়ালাইসিস করা হয়। কাটাছেড়া ছাড়াই ল্যাপ্রোস্কোপি মেশিনে পিত্তথলির পাথরও বের করা হচ্ছে এই হাসপাতালে। বিশেষায়িত সেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে হার্টের রোগীর জন্য সিসিইউ, আইসিইউ, চর্ম ও যৌন, মানসিক রোগসহ চক্ষু রোগের আলাদা আলাদা বিভাগ চালু করা হয়েছে। সংযোজন করা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ লিফট ব্যবস্থা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল এখন স্বাস্থ্য সেবায় মডেল। জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেবার শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে জেলায় স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন হয়েছে। তবে চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কটে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত শহরতলীর রহমতগঞ্জ মহল্লার আলমগীর হোসেন জনকণ্ঠকে জানালেন, ডায়ালাইসিসের জন্য তাকে এনায়েতপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ঢাকায় যেতে হয়েছে। প্রতিটি ডায়ালাইসিসের জন্য তাকে খরচ করতে হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তারপরও রয়েছে যাতায়াতের বিড়ম্বনা। এখন তিনি নিজেই একা এসে মাত্র চার শ’ টাকা খরচ করে হাতের নাগালে স্বাচ্ছন্দে ডায়ালাইসিস করছেন। এতে তিনি মহা খুশি। সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিনই তিনটি মেশিনে কিডনি রোগীর ডায়ালাইসি করা হচ্ছে। কিন্তু ডায়ালাইসিসের জন্য প্রশিক্ষিত সেবিকার অভাব রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রায়গঞ্জ উপজেলার এরশাদ মল্লিক জনকণ্ঠকে জানান, তিনি পেটের ব্যথাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চারদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডাক্তার তাকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। তা খেয়ে এখন মোটামুটি সুস্থ রয়েছেন। তবে হাসপাতালের ডাক্তারা যেসব ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়েছিল তার কিছু ওষুধ হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়েছে। বাকি কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। কারণ হাসপাতালে এসব ওষুধ নাকি সরবরাহ নেই। তিনি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় সন্তুষ্ট। তবে রাতে ওয়ার্ডে কোন ডাক্তার পাওয়া যায় না বলেও তার অভিযোগ রয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাচটিকরি গ্রামের ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত আবুল কালাম জানান, ভর্তি হবার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার তাকে দেখেছেন এবং স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ দিয়েছেন। বাইরে থেকে কোন ওষুধ কিনতে হয়নি। হাসপাতালের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে ২ টা রুটি, ১টা ডিম দেয়া হয়, দুপরে ভাতের সঙ্গে মাংস অথবা মাছ, রাতের খাবারও ভাল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও তুলনামূলক ভাল বলে একাধিক রোগী জানিয়েছেন। হাসপাতালে রক্ত,মল-মূত্র,ইসিজি,এক্স-রেসহ নানা ধরনের পরীক্ষাও হয় সহজে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা আর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হাসপাতালে আগত প্রতিজন রোগী সন্তুষ্ট। তবে সঙ্কট ও সমস্যা রয়েছে অনেক। প্যাথলজি ও রেডিওলজি বিভাগে কনসালট্যান্ট নেই, অর্থোপেডিক গাইনি এবং চক্ষু বিভাগের কনসালট্যান্ট পদ খালি রয়েছে। এ কারণে সেবার মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপক এসব বিভাগের রোগীকে সেবা দিচ্ছেন বলে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম জানান। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ উদয় নারায়ণ মোহন্ত জানান, এক শ’ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে ২৫০ বেডের রোগীর সেবা দেয়া কঠিন। প্যাথলজি ও রেডিওলজি বিভাগে কনসালট্যান্ট নেই, অর্থোপেডিক গাইনি এবং চক্ষু বিভাগের কনসালট্যান্ট পদ খালি রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জনবলসহ মিড লেভেলের চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। যা শীঘ্রই পূরণ হতে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল স্বাস্থ্য সেবায় এ অঞ্চলে মডেল বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
×