ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জমে ওঠার প্রাক্কালেই সাময়িক বিরতির ফাঁদে লীগ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জমে ওঠার প্রাক্কালেই সাময়িক বিরতির ফাঁদে লীগ

রুমেল খান ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবল একটু জমে উঠতে না উঠতেই আবারও বন্ধ হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার টিম বিজেএমসি-শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র লিমিটেডের ম্যাচ দিয়েই শেষ হয় অষ্টম রাউন্ড (৪৮ ম্যাচে গোল হয়েছে ৯৯টি)। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে অনুর্ধ-১৬ টুর্নামেন্ট এবং ১৮ সেপ্টেম্বর সাফ অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্টের জন্য ক্লাবগুলোকে বেশকিছু ফুটবলারকে ছাড়তে হবে। তবে তাদের ছাড়া লীগ খেলতে নারাজ কিছু ক্লাব। এ জন্যই কিছুদিন বিরতি থাকবে প্রিমিয়ার লীগে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পেশাদার লীগ কমিটির সভায় নির্ধারণ করার কথা রয়েছে প্রিমিয়ার লীগের নতুন সূচী। একটি সূত্রে জানা গেছে লীগ ফের মাঠে গড়াতে পারে ১ অক্টোবর থেকে। আট রাউন্ড পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে ১২ দলের মধ্যে মূলত চারটি দলই শিরোপা লড়াইয়ে আছে। এরা হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ জামাল ধানম-ি, সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব এবং ঢাকা আবাহনী। এদের পয়েন্ট হচ্ছে যথাক্রমে ২২, ২০, ১৭ এবং ১৭। এদিকে রেলিগেশনের লড়াইয়েও আপাতত আছে ছয় ক্লাব। এরা হলো মোহামেডান (৮ পয়েন্ট), আরামবাগ (৭), বিজেএমসি (৬), মুক্তিযোদ্ধা (৬), ব্রাদার্স (৫) এবং ফরাশগঞ্জ (৪)। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে আছে ‘লালকুঠি’ খ্যাত ফরাশগঞ্জ। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে তাদের একমাত্র জয়টিই হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর বিরুদ্ধে (১-০)। ব্যক্তিগত গোলদাতার লড়াইটাও হচ্ছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। চট্টগ্রাম আবাহনীর তৌহিদুল আলম সবুজ এবং আরামবাগের নাইজিরিয়ান বুকোলা ওলালেকান দুজনেই করেছেন সর্বাধিক ৬টি করে গোল। ৫টি করে গোল করে যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে শেখ জামালের গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড সলোমন কিং কানফর্ম এবং সাইফের কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড হেম্বার ভ্যালেন্সিয়া। শেখ জামালের মমোদৌ বাও এবং ঢাকা আবাহনীর ল্যান্ডিং ডার্বোয়ে ৪ গোল নিয়ে যুগ্মভাবে আছেন তৃতীয় স্থানে। দুজনেই গাম্বিয়ান। লীগের একমাত্র হ্যাটট্রিকটি করেছেন হেম্বার ভ্যালেন্সিয়া (বিপক্ষ ব্রাদার্স, ২৬ আগস্ট, ফল ৫-০)। সবচেয়ে বেশি গোলের যোগানদাতাদের তালিকায় আছেন এনামুল হক। জামালের এই মিডফিল্ডার এ পর্যন্ত ৪টি গোলের এসিস্ট করেছেন। সাইফের জুয়েল রানাও ৪টি এসিস্ট করে যুগ্মভাবে শীর্ষে। ৩টি এসিস্ট করে তিনে চট্টগ্রাম আবাহনীর জাহিদ হোসেন। সবচেয়ে বেশি কার্ড দেখেছেন যুগ্মভাবে তিনজন। একজন অনীক হোসেন। মোহামেডানের এই ডিফেন্ডার এ পর্যন্ত ৪টি হলুদ এবং ১টি লালকার্ড দেখে মাঠ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একই অবস্থা ফরাশগঞ্জের ফারুক হোসেন এবং মোহাম্মদ উদ্দিন সুজনের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২টি হলুদ ও ১টি লালকার্ড দেখেছেন ব্রাদার্সের আরিফ খান জয় এবং মোহামেডানের ফয়সাল মাহমুদ। তৃতীয় সর্বাধিক ১টি হলুদ ও ১টি লালকার্ড দেখেছেন সাইফের তপু বর্মণ এবং শেখ জামালের এনামুল হক। দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আগে নানা অজুহাতে লীগ পেছাত। এবারও লীগ পেছাল। গত ২৮ জুলাই থেকে লীগ শুরু হয়। যদিও গত ১২ জুনেই মাঠে গড়ানোর কথা ছিল লীগ। লীগ পেছানোর কারণ ছিল সাত ক্লাবের চার আবদার। এগুলো হলো : প্রচ- গরম, সামনে ঈদ, চিকনগুনিয়া জ্বর এবং অনুর্ধ-২৩ দলের ক্যাম্প। যে কোন ফুটবল আসর শুরুর তারিখ দিয়ে সেটা বারবার পরিবর্তন করা বা পিছিয়ে দেয়াটা বাফুফের ঐতিহ্য। এ বছরের শুরুতেই তারা মহাসমারোহে ফুটবলের বর্ষপঞ্জিকা ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সে বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী কোন ফুটবল প্রোগ্রামই ঠিকভাবে করতে পারছে না তারা। ট্রেনের যেমন সিডিউল বিপর্যয় হয়, তেমনি বাফুফেরও হয়েছে ‘ক্যালেন্ডার বিপর্যয়’। অতীতে কখনও না হলেও এবারই প্রথম দেখা গেছে চিকুনগুনিয়ার কারণে লীগ পিছিয়ে গেছে। তবে দেরিতে শুরু হলেও লীগের খেলার মাঠ নিয়ে অনেক সমালোচনা সইতে হয়েছে বাফুফেকে। ভাল খেলার জন্য চাই ভাল মাঠ। আর সেই মাঠই যদি খেলার উপযোগী না হয় তাহলে খেলোয়াড়দের মানের কোন উন্নতি হবে না। আর খেলা যদি বাতিলই হয়ে যায় তাহলে অবস্থা হবে আরও খারাপ। এবারের লীগে মাঠ খেলার অনুপযোগী হওয়ায় একাধিক খেলা বাতিল করার ঘটনাও ঘটেছে। এবারের লীগ শুরুর পর থেকেই বৃষ্টির বাগড়া চলছিল। কাদা হয়ে এমন অবস্থা দাঁড়াত, মনে হতো এটা যেন মাঠ নয়, ধানক্ষেত। কখনও কখনও কোন ম্যাচে মনে হয়েছেÑ এটা ফুটবল হচ্ছে না, হচ্ছে ওয়াটার পোলো! বৃষ্টি না হলে বা রোদ উঠলেও শান্তি নেই। মাঠজুড়ে কাদাগুলো শুকিয়ে শক্ত এবং এবড়ো-থেবড়ো হয়ে যায়। ফলে বল লাফিয়ে ওঠায় ফুটবলারদের সমস্যা হয় বল নিয়ন্ত্রণে। খেলা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে আকাশের ‘কান্না’ শুরু হলে যে ঢাকার অনেক রাস্তাঘাটই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। দুই ঘণ্টার অমন ভারি বর্ষণে নিম্নমানের ড্রেনেজ সিস্টেমের বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না এ নিয়ে সংশয় আগেও ছিল, আছে এখনও। অথচ কমলাপুরে আরেকটি স্টেডিয়াম থাকলেও সেখানে টার্ফে বাফুফে লীগের খেলাগুলো চালিয়ে নিতে পারছে না। কারণ স্পন্সরদের অনীহা। ফলে এক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ওপর দিয়েই বয়ে যায় যত ঝড়। এখানে প্রিমিয়ার লীগ, ফেডারেশন কাপ, সুপার কাপ, স্বাধীনতা কাপ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবলের ফাইনাল, অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্ট হয়ে থাকে। তাছাড়া খেলা ছাড়াও এখানে হয়ে থাকে কনসার্টও। ফলে মাঠের বারোটা বেজে যায়। মাঠটির যে বেহাল দশা, এরজন্য অনায়াসেই দায়ী করা যায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি)। কারণ মাঠটি তাদের। নিয়ম অনুযায়ী তাদেরই মাঠ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। কিন্তু সেটি তারা করে না। ফলে বাফুফেও মাঠটিকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছে না। কেননা এই স্টেডিয়ামে মাত্রাতিরিক্ত ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়া, পানি নিষ্কাষণে দুরবস্থার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমে যাওয়া, মাঠ অসমতল হওয়ায় বল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা এবং শক্ত মাটিতে খেলে ফুটবলারদের ইনজুরিতে পড়া... এসব সমস্যা অনেক পুরনো। এ জন্যই বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ একবার বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘এটা একটা রাবিশ ফিল্ড।’ এখন দেখার বিষয় এই রাবিশ ফিল্ডকে সজীব করে কবে থেকে আবারও খেলা শুরু হয়।
×