ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নবজাতক ও প্রসূতিসহ ১৫ নিখোঁজ

শরীয়তপুরে পদ্মার স্রোতে ডুবে গেছে নোঙ্গর করা তিন লঞ্চ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শরীয়তপুরে পদ্মার স্রোতে ডুবে গেছে নোঙ্গর করা তিন লঞ্চ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ১১ সেপ্টেম্বর ॥ পদ্মা নদীর প্রবল ভাঙ্গন ও তীব্র স্রোতের তোড়ে সোমবার সকালে নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা লঞ্চঘাটে নোঙ্গর করে থাকা তিনটি লঞ্চ একই সঙ্গে ডুবে গেছে। এ ঘটনায় পাঁচ দিনের নবজাতকসহ তিন যাত্রী এবং তিন লঞ্চের ১২ জন স্টাফ নিখোঁজ হয়েছে। নিখোঁজরা হলো- লঞ্চের যাত্রী নড়িয়া উপজেলার লোনসিং গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী পারভীন বেগম (২৮), পাঁচ দিনের নবজাতক একটি মেয়েশিশু ও তার শাশুড়ি ফখরুন্নেছা বেগম এবং তিন লঞ্চের ১২ স্টাফ। নিখোঁজ স্টাফরা হলোÑ রবীন সিকদার, লিটন শেখ, মানিক সরদার, বশির, রফিক, জাকির, পলাশ, সজল তালুকদার, শাহ আলম ও সালাউদ্দিন। তিন যাত্রী ও ১২ স্টাফ নিখোঁজ থাকার তালিকা প্রস্তুত করেছে নড়িয়া থানা পুলিশ। এছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় লোকজন ট্রলার নিয়ে নদী থেকে ছয় স্টাফ ও যাত্রী মোহাম্মদ আলী ফকিরকে উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। পরে স্টাফদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেছে। মোহাম্মদ আলীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবা আক্তার। স্থানীয় লোকজন ও নড়িয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, ডুবে যাওয়া লঞ্চ তিনটির মধ্যে এমভি মহানগর ও এমভি মৌচাক ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে নড়িয়ার ওয়াপদা ঘাটের উদ্দেশে রাতে ছেড়ে আসে। ভোর ৫টায় এ দুটো লঞ্চ ওয়াপদা ঘাটে নোঙ্গর করে এবং যাত্রীরা নেমে যায়। অন্ধকার থাকায় নবজাতক শিশু নিয়ে একটি পরিবার নামার অপেক্ষা করতে থাকে। এমভি নড়িয়া-২ ওয়াপদা ঘাটে আগে থেকেই বাঁধা ছিল। এ সময় হঠাৎ পদ্মাপাড়ের একটি বিরাট অংশ নদীতে ভেঙ্গে পড়ে এবং পানির তোড়ে দুটো লঞ্চ ঘটনাস্থলেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। অপর লঞ্চটি উল্টে গিয়ে পানিতে ভাসতে থাকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রবিবার রাত ১০টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি মৌচাক লঞ্চটি যাত্রীবোঝাই করে ছেড়ে আসে। ওই লঞ্চে নড়িয়া উপজেলার লোনসিং গ্রামের মোহাম্মদ আলী ফকির, তার প্রসূতি স্ত্রী পারভীন আক্তার (২৮), পাঁচ দিনের নবজাতক মেয়েশিশু এবং তার শাশুড়ি ফকরুন্নেছা যাত্রী ছিল। তারা ঘাটে লঞ্চটি নোঙ্গর করা হলেও ভোরে অন্ধকার থাকায় লঞ্চ থেকে নেমে যাওয়ার জন্য দেরি করছিলেন। তারা যখন লঞ্চ থেকে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এমন সময় লঞ্চটি ডুবে যায়। মোহাম্মদ আলী ফকিরকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা নিখোঁজ রয়েছে। নড়িয়া থানা পুলিশ একই পরিবারের তিনজন ও ১২ জন লঞ্চ স্টাফ নিখোঁজের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। ওয়াপদা লঞ্চঘাটে নিখোঁজদের স্বজন ও উৎসুক জনতার ভিড় বাড়ছে। ইতোমধ্যে শরীয়তপুর নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও নিখোঁজদের উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যয় নামে বিআইডাব্লিউটিএ’র একটি উদ্ধারকারী জাহাজ, ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল এবং খুলনা থেকে নৌবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও নিখোঁজদের উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধারের কোন ফলাফল জানা যায়নি। বিআইডাব্লিউটিএ’র পরিচালক কমোডর মোজাম্মেল হোসেন, চাঁদপুর পোর্টের উপ-পরিচালক মাহামুদুল হাসানসহ জেলা প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন বলে নড়িয়া থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। নৌ পুলিশের একটি দল ও ফায়ার সার্ভিস ইতোমধ্যে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। আমরা ১৫ নিখোঁজের নাম জানতে পেরেছি। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনা থেকে বিআইডাব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল ইতোমধ্যে শরীয়তপুরে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবা আক্তার বলেন, ফায়ার সার্ভিস, নৌ পুলিশ, নৌবাহিনী ও বিআইডাব্লিউটিএ’র ডুবুরি দল ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও নিখোঁজ থাকা লোকদের উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ঘটনাস্থলে মেডিক্যাল টিম রয়েছে। এ ঘটনা তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
×