ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের ভালবাসা

৩৫ কিমি হেঁটে রোহিঙ্গা আয়ুব এখন উখিয়ায়

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৩৫ কিমি হেঁটে রোহিঙ্গা আয়ুব এখন উখিয়ায়

বিকাশ চৌধুরী, উখিয়া থেকে ফিরে ॥ জন্মদাতা পিতা-মাতার প্রতি কতটুকু ভালবাসা, মায়ামমতা থাকলে ঝুড়িতে বহন করে ৩৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে এক দেশ থেকে অন্যদেশ পাড়ি দিতে পারে। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের আকিয়াব এলাকার মোহাম্মদ আয়ুব (২৭)। লাখ টাকার বিনিময়ে কেউ এ কাজটুকু করবে না। পৃথিবীতে এমন দৃষ্টান্তও নেই। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন ও গুলির আঘাত থেকে রক্ষা করতে অকৃত্রিম ভালবাসার পুত্র আয়ুব অন্ধ পিতা মোঃ আলী (৯৬) ও অন্ধ মাতা ফাতেমা বেগম (৮৭) কে ঝুড়িতে বহন করে কক্সবাজার জেলার উখিয়া কুতুপালং এলাকায় নিয়ে এসেছেন। পিতা-মাতা হয়ত আর কিছুদিন পরেই এই ধরাধম ত্যাগ করবেন। যে ভূমির আলো-বাতাসে যুগের পর যুগ কাটিয়েছেন সেখান থেকে আসতে চাননি আয়ুবের পিতা-মাতা। তাই তারা নিজের বসতভূমিতেই মরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতাময়ী পিতা-মাতাকে ভালবাসার পুত্র আয়ুব এভাবে মরতে দেয়নি। অনেক বুঝিয়ে তাদের দুজনকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার জন্য রাজি করার পর গত ৫ সেপ্টেম্বর ২৭ বছরের যুবক আয়ুব দুটি ঝুড়ি করে কাঁধের ওপর ভার করে নিয়ে আসেন পিতা-মাতাকে। রাস্তা, জমি, জঙ্গল, নদী পার হয়ে ৫ দিন পর গত শনিবার কক্সবাজারের উখিয়ায় পৌঁছেছেন। ৫ দিনে আয়ুব পিতা-মাতাকে নিয়ে না খেয়ে অনেক স্থানে রাত কেটেছেন। দুই রাতে মিয়ানমারের জঙ্গলের মধ্যেও অবস্থান করতে হয় তাদের। জঙ্গলে মিয়ানমারের নরপশু ছাড়াও হিং¯্র প্রাণীর ভয়ই ছিল। সব কিছুকে উপেক্ষা করে মরণ বাজি রেখে আয়ুব বাংলাদেশে ঢুকেন। বর্তমানে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় প্রায় তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা জানে না তাদের শেষ ঠিকানা কোথায়? প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী এলেও তা পর্যাপ্ত নয়। যার কারণে অনেকে ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছে না। একাহারে, অর্ধাহারে তাদের জীবন চলছে। সোমবার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে রোহিঙ্গা আয়ুব এসব তথ্য জানান। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা আয়ুব কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন গোষ্ঠীরা তাদের বাড়িঘর জ¦ালিয়ে দিয়েছে। সেখানে থাকা-খাওয়ার কোন ব্যবস্থাই নেই। বেঁচে থাকার জন্য ও জীবনের নিরাপত্তা না থাকায় নিরুপায় হয়ে সবার মতো তাকেও চলে আসতে হয় এখানে। ঝুড়িতে পিতা-মাতাকে বহন করার লোমহর্ষক ছবিটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে আলোচনার ঝড় ওঠে। পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) বদিউল আলম, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সিরাজুল ইসলাম মাস্টার, আশিষ তালুকদার, আলমগীর খাঁন। তারা প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ ও বিভিন্ন খাদ্য বিতরণ করেন।
×