ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টিতে কাঁদায় একাকার, শুকনায় ধুলায় অন্ধকার

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বৃষ্টিতে কাঁদায় একাকার, শুকনায় ধুলায় অন্ধকার

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ৩৫ কিলোমিটার অংশের বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের কারণে যানচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। নাকাল হচ্ছেন চালক, যাত্রী ও পথচারীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানচলাচলের কারণে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। সূত্রমতে, ঈদের পূর্বে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে সওজ বিভাগ থেকে মহাসড়কের এসব গর্ত ইট ও বালুদিয়ে কোনমতে জোড়াতালি দেয়া হলেও তা স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টি হলে কাঁদায় একাকার ও শুকনায় ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায় পুরো মহাসড়ক। এতে করে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত কয়েকদিনের প্রখর রোদে মহাসড়কের গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে উজিরপুরের জয়শ্রী পর্যন্ত অংশে ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনের শুকনায় মহাসড়কের ফুটপাত দিয়ে চলতে গিয়ে ধুলার জন্য নাক ও মুখ চেঁপে ধরে চলাচল করতে হচ্ছে। তারা আরও জানান, কিছুদিন পরপর নামেমাত্র ইট ও বালি দিয়ে মহাসড়কের গর্ত মেরামত করা হলেও সামান্য বৃষ্টিতে সেগুলো উঠে পুরনো রূপে (খানাখন্দে) ফিরে আসে পুরো মহাসড়ক। পুরো ৩৫ কিলোমিটার সড়কের ঢালাই উঠে গেছে গত ৭/৮ মাস পূর্বে। ফলে বৃষ্টি হলে রাস্তা হয় কাদার পুকুর আর শুকনায় ধুলায় অন্ধকার। সরজমিনে মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা, ইল্লা, বার্থী, কটকস্থল, নীলখোলা, টরকী, গৌরনদী, আশোকাঠী, হ্যালিপ্যাড, কাছেমাবাদ, বেজহার, মাহিলাড়া, বাটাজোর, উজিরপুর উপজেলার বামরাইল, সানুহার ও জয়শ্রী এলাকায় দেখা গেছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়তই বিকল হচ্ছে যানবাহন। যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগে দ্বিগুণ। গৌরনদী হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে ভারি যানবাহন চলাচল করার সময় প্রায়ই সড়কে দেবে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের পূর্বে মহসড়কের বেহাল দশার অংশ সংস্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে ধর্মঘটের আল্টিমেটাম দিয়েছিল জেলা বাস মালিক সমিতি। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে, ঈদের পর অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।মালিক সমিতির সভাপতি আবতাব হোসেন জানান, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি মহাসড়কের সংস্কার কাজ শুরু করা না হয় তাহলে বরিশালের সড়ক ভবন ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। সূত্রে জানা গেছে, প্রায় বছরখানেক পূর্বে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দুই পাশে ছয় ফুট বৃদ্ধিসহ মেরামতের দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ সম্পন্নের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স ও এমএসএএমপি জেভি লিমিটেড। কার্যাদেশ পাওয়ার প্রায় এক মাস পর মহাসড়কের নগরীর কাশিপুর থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত মেরামত এবং বর্ধিতকরণ কার্যক্রম শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নগরীর কাশিপুর থেকে রহমতপুর পর্যন্ত একাংশের কাজ সম্পন্ন করা হলেও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়া উজিরপুরের জয়শ্রী থেকে গৌরনদীর ভুরঘাটা পর্যন্ত মহাসড়কের দুইপাশ খুড়ে নামেমাত্র কাজ করে ফেলে রাখা হয়। এরপর থেকেই অতিবর্ষণে পুরো মহাসড়ক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে এখন যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কের দুইপাশ বর্ধিতকরণ কাজ শুরু করা হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের জুলাই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়নি। এ বিষয়ে বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান, বৃষ্টির কারণে বিটুমিন দিয়ে টেকসই সংস্কার করা যাচ্ছে না। তবে প্রায় প্রতিদিনই সাময়িক মেরামত চলছে। তিনি আরও জানান, পুরো রোদ পেলেই মহাসড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। ঈশ্বরদীতে চলাচলঅযোগ্য স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী থেকে জানান, এবারের বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে ঈশ্বরদী এলাকার বিভিন্ন রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলজিইডির প্রায় ৪শ’ কিঃ মিটার, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১শ’ কিঃ মিটার এবং পৌরসভার ১শ’ কিঃ মিটার মিলে প্রায় ৬শ’ কিঃ মিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টির পানি জমে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পানির চাপে কিছু রাস্তা এমনভাবে ধসে গেছে যে, সে সব রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা মানুষের হেঁটে চলাচলও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আইকে রোড থেকে বড়ইচরা হয়ে নতুন হাট মোড় পর্যন্ত এলজিইডির কার্পেটিং রাস্তাটির মাঝে সাহাপুর বালু খাদের কাছে পানির চাপে প্রায় ৩০ ফুট ধসে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এলাকার হাজার হাজার মানুষের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। গালর্স স্কুল এ্যান্ড কলেজ মোড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি মেরামত না করায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় প্রায় প্রতিদিনই এখানে ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে। বিকল্প সড়ক না থাকায় মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। বাবুপাড়া বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ ও সড়ক জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা এটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। ত্রিশালে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল স্টাফ রিপোর্টার ময়মসিংহ থেকে জানান, ত্রিশাল বালিপাড়া সড়কের ইট সুরকি উঠে গিয়ে সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দের। সামান্য বৃষ্টিতে এসব খানাখন্দে জমে থাকছে হাঁটু সমান পানি। বর্ষায় খানাখন্দে জমে থাকা পানি আর কাদাজলের একাকার অবস্থায় মাড়িয়ে যাত্রীদের পৌঁছাতে হচ্ছে গন্তব্যে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এই সড়কে যাতায়াত করতে গিয়ে যাত্রী ও পথচারীদের অসহনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। প্রায়ই অটোরিক্সা উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কটির বেহাল দশার কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে যাত্রীবাহী বাস চলাচল। অটোরিক্সাসহ যেসব হালকা যান ঝুঁকি নিয়ে চলছে তাতে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। স্থানীয়দের অভিযোগ, অতিরিক্ত বালু বোঝাই ট্রাক যাতায়াতের কারণেই সড়কটির এই দশা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান জানান, ঈদের আগে সড়কের খানাখন্দে ইট ও বালি ফেলে কিছুটা ভরাট করে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। সড়কটির উন্নয়নে বরাদ্দ চেয়ে আগামী একনেক সভাতে তোলা হবে বলেও জানান এই নির্বাহী প্রকৌশলী। স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশাল উপজেলা সদর হয়ে বালিপাড়া দিয়ে সওজের এই সড়কটি গফরগাঁও গিয়ে মিশেছে। ত্রিশাল উপজেলা সড়ক থেকে বালিপাড়া পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ এখন ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন ধরে মেরামত ও সংস্কার কাজ না করায় ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দের অংশ বেহালদশায় রূপ নিয়েছে।
×