ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে সেনা মোতায়েনসহ ১০ দফা সুপারিশ ইসলামী ফ্রন্টের

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নির্বাচনে সেনা মোতায়েনসহ ১০ দফা সুপারিশ ইসলামী ফ্রন্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ ১০ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। একই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধান বাতিলের সুপারিশ করেছে। রবিবার সকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলের পক্ষ থেকে এ সুপারিশালা তুলে ধরা হয়। অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংলাপে ১৫ দফা সুপারিশালা তুলে ধরা হয়েছে। রবিবার ইসির সঙ্গে পৃথক সংলাপে তারা এসব সুপারিশ তুলে ধরে। বেলা ১১টায় আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের ষষ্ঠতলার সম্মেলনকক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আল্লামা এমএ মান্নানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশগ্রহণ করে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মাওলানা এমএ মতিন জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১০ দফা সুপারিশ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইসির অধীনে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে রাখা, নির্বাচনী বিতর্কের ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা বাতিলের সুপারিশ রয়েছে। তিনি বলেন, মহিলাদের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নির্বাহী কমিটিতে সীমিত কোটায় না রেখে প্রত্যেক দলের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন করে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হোক। বিদ্যমান নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে দলের কমিটির প্রত্যেক স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। ইসির সঙ্গে সংলাপে ইসলামী ফ্রন্টের দেয়া প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- যথাসময়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য বিদ্যমান আইনী কাঠামোর সম্পূর্ণটাই বাংলায় করা, বিদ্যামান আইনী কাঠামো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করা, বিদেশে অবস্থানরত প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া, নারীদের প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নির্বাহী কমিটিতে নির্দিষ্ট সীমিত কোটায় না রেখে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের অঙ্গ কিংবা সহযোগী সংগঠন গঠন করে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া। নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী নিয়োগ করা, বিদ্যমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন এনে প্রার্থীভিত্তিক নির্বাচনের পরিবর্তে সারাদেশে দল ও প্রতীকভিত্তিক নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক দল থেকে সাংসদ নিয়োগ দিতে পারে, সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে সংসদীয় এলাকার বিদ্যমান প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষক টিম গঠন, নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনা, নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের প্রকাশ্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বিষয়ে সম্মুখ বিতর্কের ব্যবস্থা করা। এদিকে, বিকেল তিনটায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসে ইসি। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোঃ ইউনুছ আহমাদের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ সংলাপে অংশগ্রহণ করে। এ সময় দলের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য না হলে নির্বাচন কমিশনকে আইনের আওতায় এনে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানানো হয়। ইসিকে আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেয় দলটি। সেই সঙ্গে নির্বাচনের একদিন আগে কেন্দ্রে কেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানান তারা। এছাড়াও দলটির পক্ষ থেকে ১৫ দফা সুপারিশমালা কমিশনের কাছে তুলে ধরা হয়। দলটির অন্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ সংসদ সদস্য থাকাবস্থায় কেউ যেন নির্বাচন করতে না পারেন সেজন্য সংসদ ভেঙ্গে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল, নির্বাচনী জামানত ১০ হাজার টাকা করা, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতি প্রণয়নে আইন, নির্বাচনী ব্যয় কমানো, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি। এর মধ্যে নির্বাচনকালীন স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনার দাবিও জানানো হয়। রবিবারের সংলাপে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। এ সময় অন্যান্য কমিশনার, ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আগামীকাল মঙ্গলবার আরও দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বিকেলে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে বসবে ইসি। ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে কল্যাণ পার্টি ও বিকেলে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে।
×