ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

তমার গানে মুগ্ধ শ্রোতা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

তমার গানে মুগ্ধ শ্রোতা

গৌতম পাণ্ডে ॥ মিলনায়তনজুড়ে ধ্বনিত হচ্ছে ‘আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি, ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে’, ‘এবার অবগুণ্ঠন খোল’, ‘দূরে কোথাও দূরে দূরে’ সহ রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন পর্যায়ের গান। শ্রোতারা নিবিড় চিত্তে শুনছেন সেসব গান আর নিজেরা যেন রবীন্দ্রগানের গভীরে মগ্ন হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। রবীন্দ্রসঙ্গীতের আবেদন চিরকালীন। কবিগুরুর সুর ও বাণী যে স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরি করে, তার তুলনা নেই। ছায়ানটের শিক্ষক ও জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তানজীনা তমা যেন নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিলেন সেই কথা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে সুরে উন্মাতাল গানে জয় করে নিলেন রাজধানীর শ্রোতার হৃদয়। জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত রবীন্দ্রসঙ্গীত সন্ধ্যায় শুক্রবার ছুটির দিনে অনন্য কণ্ঠমাধুরীতে প্রতিশ্রুতিশীল এ শিল্পী মাতালেন অসংখ্য সঙ্গীতানুরাগীদের। রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর গতকাল সন্ধ্যায় আয়োজন করে তানজীনা তমার একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শিল্পী প্রায় দেড় ঘণ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন অঙ্গের গান পরিবেশন করেন। পাশাপাশি তিনি গেয়ে শোনান অতুপ্রসাদ সেন, রজনীকান্ত সেন ও দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ গীতিকবির গান। তানজীনা তমার সুরেলা শব্দসুরধ্বনিতে সিক্ত হতে গতকাল বিকেল থেকেই সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে জড়ো হয় সঙ্গীতপিপাসুরা। রাজধানীর শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সঙ্গীত অঙ্গনের বিশিষ্টজন ছাড়াও এসেছিলেন নানা শ্রেণীর দর্শকশ্রোতা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় গোটা মিলনায়তন। দর্শকশ্রোতার প্রতীক্ষার সেই প্রহর শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টায়। মঞ্চে আসেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে দুই বাংলায় আলোড়ন তোলা শিল্পী তমা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিল্পী তানজীনা তমা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন তাঁর গুরু ওয়াহিদুল হক ও সন্জীদা খাতুনকে। এরপর অনবদ্য কণ্ঠের মধুর শব্দধ্বনি তুলে তানজীনা তমা গাইলেন কবিগুরুর ‘আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে/নিদ্রাবিহীন গগনতলে’ গানটি। ততক্ষণে শ্রোতার হৃদয়তন্ত্রীতে বিস্তৃত হয়েছে তাঁর সুরের মায়াজাল। এরপর যেন বয়ে গেল শুধুই মুগ্ধতার অপার অনুভূতি। সুর আর স্বরের খেলায় ছড়িয়ে দিলেন আচ্ছন্নতার অনাবিল আবেশ। তমা বুঝিয়ে দিলেন প্রমাণ করে দিলেন তাঁর কণ্ঠের অপূর্ব মাহাত্ম। তার আগে উপস্থিত দর্শকশ্রোতার মাঝে শিল্পী তানজীনা তমা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক ড. চঞ্চল খান। তিনি বলেন, তমা স্বতন্ত্র কণ্ঠশৈলী ও গায়কীর জন্য ইতোমধ্যে সুধী মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর যে কোন শ্রোতার হৃদয়ে প্রশান্তি দেবে, তৈরি করবে স্বর্গীয় আনন্দ। অনুষ্ঠানে শিল্পী তানজীনা তমাকে তবলায় সহযোগিতা করেন ইফতেখার হোসেন ডলার, কীবোর্ডে বিনোদ রায় এবং গিটারে নাসির হোসেন। সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও পরিচয় পর্ব শেষে শুরু হয় সুরের খেলা। প্রতিটি গানের আগে শিল্পী তুলে ধরেন সেই গানের পটভূমি। কথা ও সুরের আসর হয়ে ওঠে জমজমাট। প্রতিটি গান শেষে বিপুল করতালি দিয়ে শিল্পীকে অভিনন্দন জানান সমঝদার সঙ্গীতপ্রেমীরা। তারপর তানজীনা তমা একে একে গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানা অঙ্গের গান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজা-রানী’ নাটকের গান কাহারবা-দাদরা তালে শিল্পী গেয়ে শোনান, ‘আমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি,/তুমি অবসরমত বাসিয়ো।/নিশিদিন হেথায় বসে আছি,/তোমার যখন মনে পড়ে আসিয়ো।’ তারপর শিল্পী একে একে পরিবেশন করেনÑ ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে’, ‘এবার অবগুণ্ঠন খোল’, ‘দূরে কোথাও দূরে দূরে’ ইত্যাদি রবীন্দ্রসঙ্গীত। কবিগুরুর বিচিত্র, প্রেম, পূজা, স্বদেশসহ নানা পর্বের ১৫টি গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন তিনি। প্রতিটি গান শেষে মুর্মুহু করতালি দিয়ে মিলনায়তন ভর্তি দর্শকশ্রোতারা অভিনন্দন জানান এ শিল্পীকে। শুধু রবীন্দ্রনাথের গান নয়, শিল্পী গেয়ে শোনান অতুলপ্রসাদ সেনের কালজয়ী গান ‘মেঘেরা দলবেঁধে যায় কোন দেশে’। মধুর কণ্ঠে গেয়ে শোনান ডিএল রায়ের ‘যাচ্ছে ভেসে সাদা সাদা’ এবং রজনীকান্ত সেনের ‘ধীরে সমীরে চঞ্চল নীরে’ ইত্যাদি গান।
×