ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষিতে উচ্চশিক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কৃষিতে উচ্চশিক্ষা

কৃষিই দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অর্থনীতির একটি বিরাট অংশ হওয়ায় কৃষি খাতের মানোন্নয়নে গবেষণা ও মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল। এক সময় খুব অল্পসংখ্যক মানুষই কৃষি নিয়ে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা বা কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতেন। এক সময় মানুষের ধারণা ছিল মাঠে ফসল ফলানো, পরিচর্যা, বিপণন ইত্যাদি হচ্ছে কৃষি। কিন্তু বর্তমানে এর আমূল পরিবর্তন ঘটেছে, মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন এসেছে। এখন ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীই কৃষিবিদ হতে চাচ্ছেন বা কৃষিকে সবার উর্ধস্থানে রাখছেন। কারণ এ কৃষিবিদ বা কৃষিবিজ্ঞানীদের কল্যাণেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তারপর দেশের যে সকল সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক পর্যায়ে চার বছর মেয়াদী বিএসসি (অনার্স) কৃষি পড়ানো হয় সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করা। দেশের চারটি পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করা যায়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এ্যান্ড টেকনোলজি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কৃষি নিয়ে পড়াশোনা করা যায়। কৃষিতে রয়েছে উচ্চ ক্যারিয়ার গড়ার হাতছানি। সরকারী এবং বেসরকারীসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃষিবিদদের যথেষ্ট কাজের সুযোগ রয়েছে। কৃষিতে স্নাতক শেষ করে বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (বিসিএস) পরীক্ষায় সাধারণ ও টেকনিক্যাল কোঠায় আবেদন করার যোগ্যাতা থাকায় দেশের সকল কর্মক্ষেত্রে যোগদানের রয়েছে সূবর্ণ সুযোগ। কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিসিএস টেকনিক্যালে পাস করার মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, জেলা সিড সার্টিফিকেশন অফিসার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, সরকারী কলেজগুলোতে কৃষি বিষয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার, বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন, রেশম উন্নয়ন বোর্ড, মসলা-গম গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদিতে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন অধিদফতর, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান। এ রকম অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বিষয়ক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড), যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক বিষয়ক উন্নয়ক সংস্থা (ডিএফআইডি), ডেনমার্কের বৈদেশিক বিষয়ক উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডা, সুইডেন ও কানাডার সিডা, উইনরক ইন্টারন্যাশনাল, প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন, ওয়ার্ল্ড ফিম, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), আন্তর্জাতিক সার গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইএফডিসি) ও অক্সফাম জিবির মতোপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে। ব্র্যাক, স্কয়ার, এগ্রোভেট, লালতীর, ন্যাশনাল এগ্রো কেয়ার, প্রশিকা, আশা, এসিআই, কৃষিবিদ গ্রুপ, এ্যাকশন এইড, কেয়ার বাংলাদেশের মতো বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও উচ্চ বেতনে চাকরি পাওয়া সম্ভব। বিদেশেও কৃষিবিদদের জন্য রয়েছে বিশাল সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মান, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, মালয়েশিয়াতে প্রতি বছর বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনে যাচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী । ¦ কামরুল হাসান শাকিম
×