ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঈদ উদ্যাপন শেষ হলো। গত শনিবার ছিল কোরবানির ঈদ। এরপর বেশ কয়েকদিন গত হয়েছে। সরকারী ছুটি শেষে সোমবার থেকে খুলেছে অফিস-আদালত। অবশ্য ঈদের ছুটি টেনে লম্বা করা পুরনো রেওয়াজ। টানা তিনদিনের ছুটির সঙ্গে এবারও যোগ হয়েছে বাড়তি কয়েকদিন। ঈদের পরও তাই ঈদের রেশ। বহু মানুষ গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়েছিলেন। তাদের অল্পই ফিরেছে। ঢাকা তাই ফাঁকা এখনও। রাস্তায় তেমন যানজট নেই। অনেক দূরের পথ মুহূর্তেই পাড়ি দেয়া যাচ্ছে। এই সুযোগ দারুণ কাজে লাগাচ্ছেন রাজধানীবাসী। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকার অলিগলি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পার্ক উদ্যান খোলা মাঠ বিনোদন কেন্দ্রÑসর্বত্রই উৎসবের আমেজ। আর ঘরে চলছে খাওয়া-দাওয়া। ফ্রিজভর্তি মাংস। সুস্বাদু রেসিপি তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু যে ত্যাগের মহিমায় কোরবানি, তার কতটা রপ্ত করা গেল? সেক্রিফাইস করার মানসিকতা আমাদের তৈরি হয়েছে কি? বনের পশু জবাই করা সহজ। ধর্মীয় রীতি মেনে সেটি সবাই করেছেন। কিন্তু মনে যে পশুর বাস, তাকে কি বধ করা গেছে? এই প্রশ্ন অনেকেই আর নিজেকে করবেন না। করছেন না। কিন্তু করা খুব জরুরী। তবেই স্বার্থক হবে কোরবানি ঈদ। ঈদে এবার সরব ছিল ঢাকার মঞ্চ। বিরল ঘটনা। প্রথমবারের মতো ঘটলো। ঈদের আগের দিন ১ সেপ্টেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়ে গিয়েছিল নাটবাঙলা উৎসব। ব্যতিক্রমী উৎসবে প্রতিদিন দুটি করে প্রদর্শনী। কিন্তু নাটক একটি-ই। মঞ্চায়নের নতুন সময়। বিকেল ৪টা ও রাত ৮ টা। ভাবা যায়? আগে কেউ ভাবেননি। তবে এ পর্যায়ে এসে যারা ভেবেছেন তারা দারুণ সফল। কোন প্রদর্শনী দর্শক শূন্য যায়নি। বরং নীরবে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। ঈদের মতো উৎসবের মাঝে একই নাটকের দুটি করে শো। প্রতিদিন। এবং বিপুল আগ্রহ নিয়ে দেখছেন দর্শক। সম্ভব হয়েছে হচ্ছে হয়তো এই জন্য, নাটকটির নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ। বহু বিখ্যাত নাটকের নির্দেশক তিনি। নাট্য তাত্ত্বিক ও অধ্যাপক। দীর্ঘকাল পর ‘রিজওয়ান’ নাটকটি নিয়ে ঢাকার মঞ্চে ফিরেছেন তিনি। কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত মার্কিন কবি আগা শহিদ আলির ‘দ্য কান্ট্রি উইদাউট আ পোস্ট অফিস’ অবলম্বনে এই নাটক। ভাষান্তর করেছেন ঋদ্ধিবেশ ভট্টাচার্য্য। নাট্যকার অভিষেক মজুমদার। গল্পটি কাশ্মীরের। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে যে হত্যা খুন বৈষম্য চলমান আছে, তার সঙ্গে খুব সহজেই মিলে যায়। অসহায় নির্যাতিত মানুষের জীবনের গল্প হয়ে ওঠে ‘রিজওয়ান।’ মঞ্চের খুব চেনা ভাষা নয়। সংলাপ শব্দ আলোর উপযুক্ত ব্যবহার। যথেষ্ট জটিল এ্যাক্রোবেটিক ফর্ম। অভূতপূর্ব উপস্থাপনা। এভাবে অনন্য সাধারণ নাট্যভাষা নির্মাণ করেন সৈয়দ জামিল। কল্পনা দিয়ে অনেক কিছুকে গড়ে নেন। বিমূর্ত থেকে যায় অনেক কিছু। পরীক্ষণ থিয়েটার হলের প্রতিটি কোন ব্যবহার করেন তিনি। মঞ্চের অংশ করে নেন এমনকি দর্শককে। অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংখ্যা অনেক। সকলেই সর্বোচ্চ ভালটা দেয়ার চেষ্টা করছেন। চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে তাদের যে পরিশ্রম, দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিতাস জিয়া। তার বোনের চরিত্রে মহসিনা আক্তার। দুইজনের অভিনয় নয়, যেন আত্মনিবেদন। দেখে মুগ্ধ হতে হয়। শ্রদ্ধা জাগে। দশদিনের আলোচিত উৎসব রবিবার শেষ হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি আরও বড় হয়েছে। আরও সামনে এসেছে। মায়ানমারে হত্যা ও নির্মম নির্যাতনের শিকার নারী-পুরুষ শিশুরা ছুটে আসছে বাংলাদেশে। এত এত মানুষ! স্রোতের মতো আসছে। জাতিসংঘের হিসাবে গত কয়েকদিনে মায়ানমারের সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ১ লক্ষ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা। এখন বলতে গেলে সমস্যাটি বাংলাদেশের। এ নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার মানুষও মিয়ানমারের হতভাগ্য মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল। সমবেদনা জানাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতাও তো ভুলে থাকা যাচ্ছে না। সচেতন নাগরিকদের আশঙ্কাÑ রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক বড় বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ। নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশটি আরও নতুন আরও জটিল সমস্যায় নিমজ্জিত হতে পারে। কারও কারও মতে, সরকার পুরো বিষয়টি ভালোভাবে মনিটরিং করতে পারছে না। সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। বিজিবির সদস্যরা ন্যায় নীতির বোধ থেকে সিদ্ধান্ত নেবেন? নাকি নিজেদের যে দায়িত্ব সেটি কঠোরভাবে পালন করবেন? ক্লিয়ার কোন ম্যাসেজ তাদেও চোখে মুখে নেই। কাজে নেই। ওইসব এলাকার জনগণও খুব একটা সচেতন বলা যাবে না। সুদূরপ্রসারী কোন চিন্তা নেই তাদেরও। এ অবস্থায় বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকে যায় বৈকি!
×