ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিনেছেন কম দামে

ঈদের পর কোথাও জমে ওঠেনি চামড়ার কেনাবেচা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

 ঈদের পর কোথাও জমে ওঠেনি চামড়ার কেনাবেচা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার অনেকটাই কম দামে চামড়া কিনেছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। মূলত লবণের দাম বেশি থাকায় ও ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া চামড়ার দাম কম থাকায় মুনাফা বড় অঙ্কের লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। এদিকে মঙ্গলবার ঈদ পরবর্তী হাটে দেশের কোথাও জমে উঠেনি চামড়ার কেনাবেচা। এদিকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর প্রায় ৮০টি ট্যানারিতে কাঁচা চামড়ার মজুত হচ্ছে। এসব ট্যানারি খুব শীঘ্রই কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে যাবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা নির্ধারিত দামে প্রতি বর্গফুট ৫০-৫৫ টাকা দরে কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এক্ষেত্রে চামড়ার মান নিয়ে আড়তদাররা প্রশ্ন তুলেছেন। আনাড়ি কসাই দিয়ে চামড়া তোলায় অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ তাদের। মৌসুমি বিক্রেতারা বলছেন, হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকরা এবার চামড়া কিনতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সরকার ছাগলের চামড়ার জন্য প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় প্রতিটি চামড়ার জন্য ১০০ থেকে ১২০ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু ট্যানারি মালিকরা পুরো চামড়ার জন্য ৩০ থেকে ৫০ টাকার বেশি দিতে চাইছেন না। বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজী টিপু সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর চামড়া এসে গেছে। কিন্তু লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে সঙ্কট তৈরি হতে পারে। লবণের অভাবে চামড়া পচে যেতে পারে। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। এর দায়ভার তাদেরই নিতে হবে। রাজশাহীতে কারসাজি কওে চামড়ার দাম কমানো হয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে এবার কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দরে! অভিযোগ উঠেছে, এবার ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছে। নানা অজুহাত ও ছলচাতুরি করে নামমাত্র মূল্যে চামড়া কেনার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করেছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। রাজশাহীর চামড়া বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহীতে গরুর যে চামড়া দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সে মাপের চামড়া এবার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর গত বছর যে চামড়া এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এবার ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে খাসির চামড়া এবার মাত্র ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। ভেড়ার চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ৫০ টাকায়। কোরবানির চামড়া সাধারণত মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা হয়। মসজিদ-মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিই চামড়া বিক্রি করে থাকে। শহরে কোরবানিদাতারাই চামড়া বিক্রি করে সে টাকা দুস্থদের মাঝে বিতরণ করে দেন। পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় প্রায় সবাই এবার কম দামেই চামড়া বিক্রি করেছেন। এদিকে ঈদের দিন দুপুরের আগে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বেশি দরে চামড়া কিনতে শুরু করেছিলেন। কেউ কেউ কিনেছেনও। কিন্তু পরবর্তীতে তারাও আর বেশি দরে চামড়া কেনেননি। দুপুরের পর মৌসুমি আর প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দামের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য হয়নি। তবে দুপুরের আগে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী একটু বেশি দরে চামড়া কিনেছেন, তারা গুনেছেন লোকসান। কয়েকজন কোরবানিদাতা জানান, বেশি সময় ধরে রাখলে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বাধ্য হয়েই অল্পমূল্যে চামড়া বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা সামশুল করিম বলেন, ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া তিনি বিক্রি করেছেন মাত্র ৪শ’ টাকায়। তার অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম কমিয়েছেন। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ। তিনি বলেন, হাজারিবাগ থেকে চামড়া কারখানাগুলো গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। এখনও সাভারে স্থানান্তরিত কারখানাগুলোর নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়নি। ফলে কোরবানির পশুর সব চামড়া সেখানে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার মতো জায়গা ও ব্যবস্থা হয়নি। এ কারণে এবার তাদের চামড়া কেনার আগ্রহ ছিল কম। আর চাহিদা কমায় কমেছে দাম। নওগাঁয় পানির দামে চামড়া কিনেছেন ব্যবসায়ীরা নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পানির দামে চামড়া কিনেছেন। এখানকার ব্যবসায়ীরা চামড়া বেশি দামে না কিনলে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বেশি দাম হওয়ায় চামড়া পাচার হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। অপরদিকে চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা কোন সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছেন না। তারা উন্মুক্ত অবস্থায় চামড়া কিনছেন। তারা আরও জানান, ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি দামেই চামড়া কিনছেন তারা। বেশি দামে না কিনলে চামড়া ভারতে পাচার হবে বলে তাদেরও আশঙ্কা। প্রতি বছর ঈদ-উল আযহার দিনে কোরবানির পশুর চামড়ার বিশাল বাজার বসে নওগাঁয়। শহরের বিভিন্ন এলাকা ও গ্রামাঞ্চল থেকে চামড়া কিনে এনে বিক্রির জন্য ভিড় করে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিগত বছরের মতো এবারে চামড়ার দাম ট্যানারি মালিকরা নির্ধারণ করে দেয়ায় নওগাঁয় চামড়া কিনে লোকসানের মুখে পড়েছে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। শিকারপুর গ্রামের আশরাফ আলী, দুবলহাটীর সেলিম, হোটেলপট্টি মহল্লার ইকবাল হোসেন বলেন, গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতি গরুর চামড়া ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা করে কিনে এনে নওগাঁ শহরে বিক্রি করছে ৩শ’ থেকে ৮শ’ টাকা, খাসির চামড়া ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা করে কিনে এনে ২০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছে। নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এ অবস্থার সৃষ্টি করেছেন বলে তাদের অভিযোগ। নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রুপের সভাপতি মোঃ মোমতাজ হোসেন জানান, প্রতিবছর তিনি কোরবানিতে চামড়া কিনেন প্রায় পঞ্চাশ হাজার পিস। এর মধ্যে গরু প্রায় ৪০ হাজার এবং অন্যান্য ১০ হাজার চামড়া। তারা কোন সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছেন না দাবি করে বলেন, তারা সরকার ও ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে চামড়া কিনছেন। সরকার ও ট্যানারি মালিকদের রেট ঢাকা শহরের বাইরে ৪০-৪৫ টাকা প্রতি বর্গফুট। অথচ তারা কিনছেন ৫০-৫৫ টাকায়। লাইসেন্সধারী চামড়া ব্যবসায়ীরাও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, ভারতের বাজারে চামড়ার দাম বেশি আর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া দাম অনেক কম হওয়ায় পাচার হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। পাচার যাতে না হয় সেজন্য সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। চামড়া শিল্পকে টিকে রাখা এবং চামড়া ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারি ও ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া চামড়ার মূল্য অবিলম্বে পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা। গাইবান্ধায় ট্যানারি মালিকদেও বেঁধে দেয়া চামড়ার দাম কম এ বছর চামড়ার চাহিদামতো মূল্য না থাকায় বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধার সাত উপজেলার খুচরা পাইকার ও ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতের পর স্বল্পমূল্যে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। লবণের দাম বেশি থাকায় ও ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেয়া চামড়ার দাম কম থাকায় এ বছর তারা ঘাটতি সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল জোব্বার জানান, ঈদের দিন ও পরের দিন বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে তিনি ৪৫০টি গরু ও ১২০টি খাসির চামড়া কিনেছেন। প্রতি গরুর চামড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকায় কিনেছে সে। এছাড়া খাসির চামড়া ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকায় কিনেছে। এসব চামড়া ঢাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা দেখেছে। তারা যে দর হাঁকছেন, সে দরে চামড়া বিক্রি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হতে পারে বলে সে মনে করছে। তবে ওই মূল্যেই অনেকে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি জানায়, আজ বুধবার সকাল থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তর চামড়ার হাট বসবে। প্রতি বছর ঈদ-উল আযহার পরের বুধবার রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক ঘেঁষে এ হাট বসে। এখানে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলা ছাড়াও জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা আসে। এই হাটের অপেক্ষায় আছে সে। পলাশবাড়ী চামড়া হাটের সাধারণ স¤পাদক মিনু ম-ল জানান, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতের জন্য লবণ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু লবণ নিয়ে করা হয় সিন্ডিকেট। কোরবানির ঈদে জেলা থেকে অনন্ত ৫ কোটি টাকার চামড়া ক্রয় করেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার চামড়ার মূল্য কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, এবার কি পরিমাণ চামড়া ক্রয়-বিক্রয় হবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে সময় থাকতে চামড়া ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ দিতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। তা না হলে প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পথে বসতে হতে পারে। জমে উঠেনি রাজারহাট চামড়ার বাজার খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম যশোরের রাজারহাট চামড়ার বাজার জমেনি। মঙ্গলবার ঈদ পরবর্তী প্রথম হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের তেমন সমাগম ঘটেনি। একই সঙ্গে দাম নিয়েও হতাশ ব্যবসায়ীরা। ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিযোগিতার কারণে তারা বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে চড়া দামে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু হাটে এসে সেই মূল্য মিলছে না। ফলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। এজন্য চামড়ার দাম পুনর্নির্ধারণের দাবি তাদের। ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার প্রথম হাটে নির্ধারিত দামের চেয়ে সামান্য বেশি দামে পশুর চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। তবে তাতেও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ মাঠ পর্যায় থেকে তাদের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় চামড়া সংগ্রহ করতে হয়েছে। একই সঙ্গে লবণের দামও বেড়েছে। চামড়া পাইকারি বিক্রি করতে এসে আসল বাঁচানো যাচ্ছে না। গরুর চামড়া প্রতি ২০০-৩০০ টাকা ও ছাগলের চামড়ায় ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে পাইকাররা বলছেন, ঝুঁকি নিয়ে তারা ট্যানারি শিল্প সমিতি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া ক্রয় করছেন। পরে ট্যানারি মালিকরা দাম না বাড়ালে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে তাদেরও। মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজারহাট চামড়ার হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার তেমন হাঁকডাক নেই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগম কম, তাই তুলনামূলক চামড়ার আমদানিও কম। হাটে চামড়া নিয়ে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চোখে মুখেও হতাশার ছাপ। হাটের পাইকাররা জানান, মঙ্গলবার ঈদ পরবর্তী প্রথম হাট হওয়ায় কোরবানির বেশিরভাগ চামড়া এদিন হাটে আসেনি। অনেকেই বাজার যাচাই করার জন্য অল্প সংখ্যক চামড়া নিয়ে হাটে এসেছেন। তাই পরবর্তী হাট আগামী শনিবারে রাজারহাট জমজমাট হয়ে উঠবে। আরেকজন পাইকারি ব্যবসায়ী পারভেজ আলম বলেন, প্রথম হাট হওয়ায় এদিন বাজারে চামড়ার আমদানি কম। তবে শনিবারের হাট জমজমাট হবে বলে তিনি আশাবাদী। যদিও হাটে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় এদিন চামড়া বেচাকেনা হচ্ছে। রাজারহাটে চামড়া নিয়ে আসা মাগুরার সীমাখালির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চাঁন বিশ্বাস জানান, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় পশুর চামড়া কিনতে হয়েছে। কিন্তু বাজারে এসে দেখছি মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নেই। তারা চামড়া সংরক্ষণ করছেন। আমরা বাজারে এসে ধরা খেয়েছি। চামড়ার দাম কম। কেনা দামের চেয়ে ২০০-৩০০ টাকা কম দামে গরুর চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া লবণের দাম ঈদের পরপরই বেড়েছে। তাই সব খরচও বেড়েছে। এবার এনজিও থেকে ১ লাখ টাকা লোন (ঋণ) নিয়ে চামড়া কিনেছি। বাজার দরের যে অবস্থা তাতে পুঁজি বাঁচবে বলে মনে হচ্ছে না। যশোর সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রাম থেকে চামড়া বিক্রি করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গোপাল দাস জানান, গ্রামে গ্রামে ঘুরে কোরবানির গরুর ৪০টি ও ছাগলের ৪০টি চামড়া সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যেকটি গরু চামড়া ১৪০০-১৬০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১০০-১৫০ টাকায় কিনেছেন। কিন্তু হাটে বিক্রি করতে এসে তিনি হতাশ। কেনা দামেও বিক্রি হচ্ছে না। গরুর চামড়ায় ২০০ টাকা আর ছাগলের চামড়ায় ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয়েছে। যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ঈদ-উল আযহা পরবর্তী প্রথম হাটে চামড়া কম উঠেছে। তবে এদিন নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় চামড়া বেচাকেনা হয়েছে। আগামী শনিবার দ্বিতীয় হাটবারে রাজারহাট জমজমাট হয়ে উঠবে বলেও আশাবাদী তিনি। পুঁজি হারানোর আতঙ্কে মাগুরার চামড়া ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাগুরার চামড়া ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। এছাড়া অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দাম থেকে বেশি দামে চামড়া ক্রয় করে পুঁজি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। সঙ্গে রয়েছে পুঁজি সঙ্কট। জানা গেছে, মাগুরা জেলার ৪টি উপজেলা সদর, শ্রীপুর, মহম্মদপুর ও শালিখায় ঈদ-উল আযহায় আনুমানিক ৪০ হাজার গরু এবং ২০ হাজার খাসি কোরবানি হয়েছে। পুঁজি সঙ্কট ও লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাগুরার চামড়া ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে। ৫শ’/৬শ’ টাকা বস্তা লবণের দাম ১১শ’ টাকা হওয়ায় চামড়া ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় ছোট ব্যবসায়ীরা পুঁজির অভাবে ভালভাবে চামড়া ক্রয় করতে পারেনি। এদিকে নির্ধারিত দাম থেকে বেশি দামে ক্রয় করে অনেক মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
×