ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯০ ভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ

নতুন ইতিহাস গড়ল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নতুন ইতিহাস গড়ল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘোষিত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ৯০ ভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণের মধ্য দিয়ে কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এক নতুন ইতিহাস গড়ল ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশন। এ সময়ের মধ্যে ২ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গাড়িগুলো মোট ৪ হাজার ৬শ’ ৮৬টি ট্রিপ দিয়ে কোরবানির পশুর মোট ২২ হাজার ২শ’ ৭০ টন বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়। এর আগে ঢাকা সিটিতে পশুর হাটের ও জবাইকৃত কোরবানির পশুর বর্জ্য এত কম সময়ে অপসারণ করতে দেখা যায়নি। গত ঈদে পশুর বর্জ্য অপসারণের সময় ছিল গড়ে ৩৬ ঘণ্টা। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ঈদের পরদিন রবিবার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ভবনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে যৌথভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ হয়ে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দুই সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য অপসারণ কাজের বিস্তারিত তুলে ধরেন সাঈদ খোকন। মেয়র বলেন, ঈদের দিন দুপুর থেকে প্রতিশ্রুত পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯০ ভাগ বর্জ্য আমরা অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। যা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে কম সময়। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণে কোরবানির পশুর হাট এবং কোরবানি করা পশুর ১৪ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ওই বর্জ্য সরাতে তিন হাজার ‘ট্রিপ’ দিতে হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের গাড়িগুলোর। অপরদিকে ডিএনসিসি এলাকায় বর্জ্য জমে প্রায় আট হাজার ২শ’ ৭০ টন। যা সরাতে ১ হাজার ৬শ’ ৮৬টি ‘ট্রিপের’ প্রয়োজন হয় বলে জানান মেয়র। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির সব বর্জ্য অপসারণে সফল হয়েছেন দাবি করে সাঈদ খোকন বলেন, আমরা বলেছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করব। আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। এছাড়া ঈদ পরবর্তী দুইদিন যেসব পশু কোরবানি দেয়া হবে তাদের বর্জ্যও সঙ্গে সঙ্গেই সরানোর কাজ করবে আমাদের কর্মীরা। মেয়র বলেন, আমাদের লোকজন সব সময় মাঠে আছে। কোথাও এরকম থাকলে আমাদের জানান, আবর্জনা সরানো হবে। নির্দিষ্ট সময় শেষে কোন এলাকার বর্জ্য অপসারণে দেরি হলে সিটি কর্পোরেশনের হটলাইন ০৯৬১১০০০৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দেন তিনি। রবিবার ঢাকার নিউ ইস্কাটন, মোহাম্মদপুর, বসিলা, আগারগাঁও, শ্যামলী, আদাবর, ধানম-িসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর বর্জ্য প্রায় সবখানেই অপসারণ করা হয়েছে। তবে কয়েকটি এলাকার নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে নতুন করে কোরবানি হওয়ায় নতুন বর্জ্য জমেছে। যা অপসারণের জন্য কাজ করছে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। মোহাম্মদপুরের বসিলা হাটের ইজারাদার শাহ আলম হোসেন জীবন জনকণ্ঠকে জানান, স্থানীয় কাউন্সিলরের সহায়তায় ঈদের দিনই সিটি কর্পোরেশনের লোকজন পশুর হাটের আবর্জনা সরিয়ে ফেলেছে। এখন হাটের বাঁশ সরানোর কাজ চলছে। ঈদের আগে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এবার ঢাকায় প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশুর বর্জ্য সরিয়ে নিতে দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নকর্মী কাজ করেন। যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ দূষণ এড়াতে এবার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ৬শ’ ২৫টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ৫শ’ ৪৯টি স্থান পশু কোরবানির জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। তবে বরাবরের মতই এ বছরও নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে নগরজুড়ে রাস্তা, বাড়ির গ্যারেজ, খোলা মাঠ ও অলিগলিতে পশু জবাইয়ের দৃশ্য দেখা গেছে। এ বিষয়ে উত্তর সিটির মোহাম্মদপুর ৩৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার তারেকুজ্জামান রাজীব জনকণ্ঠকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা পুরো মোহাম্মদপুরে কোথাও আবর্জনা জমা রাখতে দেইনি। এমনকি ঈদের পরদিন যেসব পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে সেসব পশুর বর্জ্যও আমরা সঙ্গে সঙ্গেই অপসারণ করেছি। যা সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে এই প্রথম। আমরা হাটের আবর্জনা ও চাটাইসহ সবকিছুই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সরাতে সক্ষম হয়েছি। সকল এলাকাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আবর্জজনামুক্ত। নির্দিষ্ট স্থানসহ সকল কোরবানির স্থানেই দুর্গন্ধ এড়াতে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে ও পানি ঢেলে পরিস্কার করতে ডিএনসিসির পরিচ্ছন্ন কর্মী ও যানবাহন নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছি। দুপুরে মেয়রের সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে প্রধান সড়কগুলোতে আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়নি। তবে কয়েকটি এলাকায় গলির পাশে তখনও কোরবানির পশুর বর্জ্য পড়ে ছিল। তখনও পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আবর্জনা এনে সিটি কর্পোরেশনের ভাগাড়ে ফেলছিলেন। কুড়িল, জোয়ারসাহারা, বনানী, গুলশান ও বাড্ডার প্রধান সড়কগুলো ঘুরে রবিবার বিকেলে কোরবানির পশুর বর্জ্য দেখা যায়নি। তবে বনশ্রী, রামপুরার বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে, বিভিন্ন খালি প্লটে তখনও কিছু বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিকেলে মেরাদিয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যানে করে আবর্জনা এনে রামপুরা- ডেমরা সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। আবর্জনার স্তূপ জমে আছে ও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে বিকেলের পর সেখান থেকে সকল বর্জ্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে মেরাদিয়া হাট থেকে বাঁশের খুঁটি সরিয়ে নেয়া হলেও আবর্জনা রয়ে গেছে। এগুলো সপ্তাহখানেক সময় লেগে যেতে পারে। একইসঙ্গে বিকেলে দক্ষিণ বনশ্রীর প্রধান সড়কেই আবর্জনার স্তূপ দেখা গেলেও রাতে তা সরানো হয়। এলাকাবাসী জানায়, মূলত ময়লার কন্টেইনার দিতে দেরি করায় আবর্জনা এনে রাস্তায় রাখতে বাধ্য হয় সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা। এই এলাকার নির্ধারিত কন্টেইনার ট্রাক নষ্ট হওয়ায় এই সমস্যা হয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে মাদারটেক অতীশ দীপঙ্কর সড়কের কোথাও আবর্জনা দেখা যায়নি। কিন্তু মাদারটেক, নন্দীপাড়া ঘুরে বিভিন্ন স্থানে কোরবানির বর্জ্য জমে থাকতে দেখা গেছে। যা পরে সরানো হয়। শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠে অস্থায়ী হাটের বাঁশের খুঁটি সরানো হলেও আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়নি। এলাকার রেলওয়ে কলোনির বিভিন্ন ভবনের সামনেও হাটের গরু রাখা হয়েছিল, সেখানে সৃষ্ট পরিষ্কার করা হয়নি। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই প্রধান সড়কের আবর্জনা সরিয়ে নেয়া হয়।
×