ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ছুটি পাননি সানজিদা-মারজিয়ারা

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ঈদে ছুটি পাননি সানজিদা-মারজিয়ারা

রুমেল খান ॥ ব্যক্তির চেয়ে দল, দলের চেয়ে দেশ বড়। আর সে কারণেই এবার ঈদের ছুটিতে নিজেদের গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ করা হয়নি বাংলাদেশ জাতীয় অনুর্ধ-১৬ মহিলা ফুটবলারদের। আবেগের চেয়ে পেশাদারিত্ব বড়। আর কদিন পরেই এশিয়ার সেরা আট দলের অংশগ্রহণে ‘এএফসি অ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে’র মূলপর্বের খেলা শুরু হবে থাইল্যান্ডের চনবুুরিতে। তাতে প্রথমবারের মতো খেলবে বাংলাদেশ দল। এই অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে ফিটনেস ধরে রাখা এবং ইনজুরিমুক্ত থাকার কোন বিকল্প নেই। আর তাই সেই ঝুঁকির পথে হাঁটেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তারা সানজিদা-মারজিয়া-কৃষ্ণাদের ঈদের কোন ছুটি দেয়নি। ফলে এই কিশোরী ফুটবলারদের এবারের ঈদ পালন করতে হয়েছে বাফুফে ভবনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পেই। এই আসরে গ্রুপ বি’তে পড়েছে বাংলাদেশ। তাদের সঙ্গে আছে জাপান, উত্তর কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। উত্তর কোরিয়া তো বর্তমান চাম্পিয়নই। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার শক্তিমত্তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বলা যায় ‘ডেথ’ গ্রুপেই পড়েছে বেঙ্গল টাইগ্রেস দল। তারপরও হারার আগেই হারতে নারাজ তারা। তাই তাদের প্রস্তুতিতে কোন ঘাটতি রাখতে চায় না টিম ম্যানেজমেন্ট। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর, চীন ও জাপানে গিয়ে প্রচুর প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে কৃষ্ণবাহিনী। চনবুরিতে বাংলাদেশের গ্রুপ ম্যাচগুলো হলো যথাক্রমে ১১ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া, ১৪ সেপ্টেম্বর জাপান ও ১৭ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তহুরাদের অবশ্য নতুন কিছু নয় বাফুফে ভবনে ঈদ উদযাপন করাটা। এর আগেও দলের প্রয়োজনেও দেশের স্বার্থে ঈদে বাড়ি যায়নি তারা। এ প্রসঙ্গে ডিফেন্ডার শামসুন নাহার জানায়, ‘এবারের ঈদটা পরিবারের সঙ্গে করা হয়নি। তাই একটু তো মন খারাপই। তবে এটাকে বড় করে দেখছি না। এখানে আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে আছি। এখানেই আমাদের আরেকটা পরিবার হয়ে গেছে।’ স্ট্রাইকার তহুরা খাতুনের অনুভূতি, ‘এখানে আমাদের কোচরা আছেন। তারা আমাদের বাবার মতোই। তাছাড়া তাদের সঙ্গে কিরণ ম্যাডামও সবসময় আমাদের সঙ্গে ঈদ করেন। বাসায় গেলেও ভাল লাগে, এখানেও ভাল লাগে।’ দু’দিন একটু বিশ্রাম নিয়ে ঈদের পরদিন থেকেই আবারও অনুশীলনে নেমে পড়েছে ছোটনবাহিনী। ঈদের আমেজ কাটিয়ে আসরে ভাল করার দায়িত্বটাই এখন তাদের মাথায়। কঠিন দলগুলোর বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে সানজিদারা। প্রস্তুতি সম্পর্কে শামসু নাহারের ভাষ্য, ‘কোরিয়ার বিপক্ষে খেলেছি। তাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি। ভালভাবে অনুশীলন করছি যাতে মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে পারি।’ তহুরার অভিমত, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভাল হচ্ছে। বিদেশী দলগুলোর সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলেছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে শতভাগ দিয়ে ভাল কিছু করা।’ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জানানÑ থাইল্যান্ডে লড়াই করার প্রায় সব রকমের প্রস্তুতি শেষ। এখন কাজ চলছে ফুটবলারদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধির, ‘আমরা যাদের সঙ্গে খেলব তারা হচ্ছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, এক নম্বর, দুই নম্বর বা সাত নম্বর। আমাদের মেয়েরা অনেক উন্নতি করেছে। চায়না, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এই সমস্ত দেশের সঙ্গে খেলায় তাদের মানসিকতা আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে।’ সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে তাম্রপদক অর্জন। এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার চ্যাম্পিয়ন। একবার তৃতীয় হওয়া এবং ফেয়ার প্লে ট্রফি লাভ। এরপর অনুর্ধ-১৬ আসরের বাছাইপর্বেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূলপর্বে উন্নীত। প্রতিটি সাফল্যের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে গোলাম রব্বানী ছোটনের নামটি। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের দলের যিনি গর্বিত কোচ। চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার আগে স্বীয় নৈপুণ্য ও সক্ষমতা বাড়াতে এবং নিজের অবস্থান ও ভুলত্রুটি শোধরাতে আরও কিছু পরীক্ষা দিতে হয়। ছোটনের শিষ্যরা তেমনই পরীক্ষা দিয়েছে গত কয়েকমাস ধরে, বিভিন্ন দেশে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য মূলপর্বের আসরে শীর্ষ তিন দলের মধ্যে থাকতে পারলে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৮ সালের ফিফা অনুর্ধ-১৭ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারবে বাংলাদেশের মেয়েরা। এই থাইল্যাল্ড পর্বে অবতীর্ণ হওয়ার আগে নিজেদের যাচাই ও শাণিত করতেই এবারের ঈদে নিজেদের গ্রামে না গিয়ে বাফুফে ভবনেই ঈদ করেছে মারিয়া-আনাইরা। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের ইতিহাস খুব বেশিদিনের নয়। বাংলাদেশের পুরুষ ও মহিলা ফুটবলের সময়সীমার ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেই ইংরেজ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আমল ... চর্চার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে পুরুষ ফুটবলই। সে তুলনায় মহিলা ফুটবলের চর্চার ইতিহাস একযুগও হয়নি। অথচ যদি বলা হয় সাম্প্রতিক সময়ে কোন্ ফুটবলের উন্নতির ধাপ সবচেয়ে উঁচুতে, তাহলে সচেতন ফুটবলপ্রেমীরা একবাক্যে বলে দেবেন- মহিলা ফুটবল। হ্যাঁ, ঠিক তাই। মাত্র কয়েক বছর আগেও এদেশের মহিলা ফুটবল নিয়ে হাসাহাসি হতো বিস্তর, অথচ আজ তাদের নিয়ে সুনীল স্বপ্ন দেখে এদেশের ফুটবলমোদীরা। আগে সাতক্ষীরা, যশোর, রাঙামাটি ছাড়া আর কোন জেলা থেকে মেয়েরা খেলতে আসতো না। আর এখন কমপক্ষে ২৫ জেলা থেকে মেয়েরা আসে খেলতে। এ থেকেই বোঝা যায় ৪-৫ বছর ধরেই দেশে মহিলা ফুটবলের ধীরে ধীরে বিস্তার ঘটছে।
×