ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী গরুতে সয়লাব চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ আগস্ট ২০১৭

দেশী গরুতে সয়লাব চট্টগ্রাম

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অন্যবারের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে গরুকে মোটাতাজাকরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করছে ব্যবসায়ীরা। কারণ সাগরিকা পশুর বাজারে প্রকাশ্যে মোটাতাজাকরণ ও মেয়াদী মোটাকরণ ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। বাজার কমিটি যেমন এ অসাধুদের বাধা প্রয়োগ করছে না তেমনি পুলিশ প্রশাসনও নিশ্চুপ। ওষুধের ফেরিওয়ালারাও অসাধুদের সহযোগিতায় একেবারে বাজারের ভেতরে প্রকাশ্যে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছে মানবদেহের ক্ষতিকারক ওষুধ। এদিকে চাঁদা দাবি ও খুঁটি বাণিজ্যের কারণে গরু ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাচ্ছে। পাহাড়তলী থানা পুলিশকে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলেও কাজ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, গরুকে জোর করে খাওয়ানো হচ্ছে মোটাতাজাকরণ ওষুধ। এর মধ্যে রয়েছে জাইমোভেট, কিটো-এ-ভেট, ফাস্ট ভেটসহ নানা প্রকারের মোটা তাজাকরণ ও মেয়াদী ওষুধ। এসব ওষুধ পানিতে মিশিয়ে বাঁশের চৌঙ্গ, মগ, বোতল ও পাইপ দিয়ে পশুর গলায় ও পেটে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব ওষুধ প্রয়োগের ফলে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় পশুর মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এমনকি পশুর ডাকও বন্ধ হয়ে যায় এমন মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম জেলা আঞ্চলিক পশু সম্পদ অধিদফতরের এক ডাক্তার। এদিকে কোরবানি ঈদের বাকি আর মাত্র দুদিন। কিন্তু এখনও পশুর হাট জমতে শুরু করেনি চট্টগ্রামে। তবে আজ থেকে পুরোদমে সরগরম হবে সাগরিকা ও বিবিরহাটসহ চট্টগ্রামের ১২টি পশুর বাজার। কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এমনকি এবার কুমিল্লা থেকেও গরু ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে যোগান দেয়া হয়েছে। এবার উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে দেশীয় গরু চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে সয়লাব হয়ে গেছে। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ দুটি পশুর হাটকে কেন্দ্র করে যোগান দিয়ে থাকে। এদিকে নগরীর স্টিলমিল অস্থায়ী পশুর বাজার অনেক বেশি জমে উঠেছে গত শুক্রবার থেকে। এদিকে পশুর হাটের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল টিমও কাজ করছে। জাল টাকার নোট শনাক্ত করতে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ বা শাখায় স্ক্যানিং মেশিন সংরক্ষণ করা হয়েছে হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধে। রূপগঞ্জে ক্রেতা কম নিজস¦ সংবাদদাতা রূপগঞ্জ থেকে জানান, ‘টেহা খরচ কইরা গরুর দাম পাই না, ভারতের গরু আয়োনে দেশী গরুর দাম কয় কম, না বেইচা বাড়িতে লইয়া যাইতেগা মন চায়’- কথাগুলো বলছিলেন কৃষক সিরাজ মিয়া। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের ইটালিয়ান সিটির বালুর মাঠের অস্থায়ী পশুর হাটে মঙ্গলবার সকালে সিরাজ মিয়া তার পালন করা দুটি ষাঁড় উঠিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলেন। ইটালিয়ান সিটির বালুর মাঠের অস্থায়ী পশুর হাটের ইজারাদার হাবিবুর রহমান মিল্টন জানান, কোরবানির ঈদের আর মাত্র চার দিন বাকি। হাটে তেমন ক্রেতা নেই। পর্যাপ্তসংখ্যক গরু-ছাগল উঠলেও বেচাকেনার ভাব ভাল দেখছেন না তারা। তবে এ হাটে উপজেলার চারিতালুক, ভোলাব, পুবেরগাঁও, বাসুন্দা, পাইশকা, ডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকার কৃষকদের পালন করা গরু-ছাগল উঠেছে। কৃষকরা অতিরিক্ত খরচ করে মুনাফার উদ্দেশ্যে কোরবানির জন্য গরু-ছাগল পালন করেছেন। মেহেরপুরে বাড়তি টোল সংবাদদাতা মেহেরপুর থেকে জানান, জেলার গো-হাটগুলোতে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে ইজারাদারের ইচ্ছামতো খাজনা আদায় করা হচ্ছে। বাধা-বিঘœ ছাড়াই শতকরা দুই টাকা থেকে শুরু করে ৫ টাকা পর্যন্ত খাজনা নেয়া হচ্ছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা ক্ষুব্ধ হলেও কোন প্রতিকার নেই। হাট ইজারাদারদের দাবি- কোন পণ্যের কী পরিমাণ খাজনা আদায় করতে হবে তার কোন তালিকা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়নি। ফলে নিজেরাই মূল্য নির্ধারণ করে খাজনা আদায় করছি। এদিকে দ্রুত খাজনা আদায়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। সারা বছর গবাদি পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা কম থাকে। ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য বিপুল সংখ্যক গরু-ছাগল হাটগুলোতে তোলা হয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়তি খাজনা নিয়ে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন ইজারাদাররা। সদর উপজেলার সবচাইতে বড় ছাগলের হাট বারাদি বাজার। খাজনা আদায়কে কেন্দ্র করে সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদারদের মধ্যে চলে বাকবিত-া। প্রতি হাটেই খাজনা নিয়ে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ইচ্ছামতো খাজনা আদায়ের প্রতিবাদ করলেই ইজারাদারের লোকজন হুমকি দেয়। পেশী শক্তির বলে তারা খাজনা আদায় করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। সরজমিনে বারাদি হাটে গিয়ে ছাগলপ্রতি খাজনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইজারাদার রফিকুল ইসলাম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। খাজনা আদায়ের নীতিমালা আছে কি না এবং বিক্রি দামের কত ভাগ পরিমাণে খাজনা আদায় করতে হবে সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি ইজারাদার। পেশী শক্তি দেখিয়ে সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা দেয়ার অপচেষ্টাও করেন তিনি। অবশ্য ক্যামেরায় তার কথাবার্তা রেকর্ড হচ্ছে বুঝতে পেরে কৌশলে সেখান থেকে সটকে পড়েন। পরে ইজারাদারের এক প্রতিনিধি এসে তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হন। বারাদি ছাগল হাটের ক্রেতা পূর্ব মালসাদহ গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, আমি ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি খাসি কিনেছি। খাজনা দিয়েছি ৭৫০ টাকা। বিক্রেতার কাছ থেকেই ৩৫০ টাকা টাকা খাজনা নিয়েছে। খাজনা কম নিতে বলায় ইজারাদারের আদায়কারীদের ধমক খেয়েছি। তাদের কাছে তো আমরা অসহায়। অবশ্য কয়েক ছাগল ব্যাপারী ইজারাদারদের সুনাম করলেন। বারাদি ছাগল হাটে খাজনা আদায়ের কয়েকটি রসিদ ঘেঁটে দেখা গেছে, শতকরা ৫ শতাংশ হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। আবার বিক্রেতাদের কাছ থেকেও নেয়া হচ্ছে খাজনা। নিয়ানুযায়ী পণ্য কিংবা সম্পদ ক্রেতারাই শুধু হাটের খাজনা পরিশোধ করবেন। লালমনিরহাটে প্রশাসন নীরব নিজস্ব সংবাদদাতা লালমনিহাট থেকে জানান, জেলার পশুর হাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠলেও আদায় করা হচ্ছে বাড়তি খাজনা। হাটগুলো থেকে সপ্তাহে কয়েক হাজার গরু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে স্থানীয় চাহিদা। ক্রেতা বা বিক্রেতার কাছ থেকে টোল বা খাজনা হিসেবে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব জেনেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন নীরব। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ কৃষক ও গরু ব্যবসায়ীরা। গত বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনিবার বিভিন্ন হাট ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্রেতার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩-৪শ’ টাকা আর বিক্রেতার কাছ থেকে নেয়া হয় ২শ’ টাকা গরু যত ছোট হোক, আর যত বড়ই হোক, ৫শ’ টাকা থেকে এক টাকা কম দেয়ার সুযোগ নেই। অতিরিক্ত টোল আদায় করতে গিয়ে অনেক ক্রেতা বা বিক্রেতার সঙ্গে ইজারাদারের লোকজনের ঝগড়া বিবাদও হচ্ছে। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। ইজারাদারের একটি সিন্ডিকেট চক্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে হাটগুলোতে। প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয়।
×