ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

রায় শুনে কেঁদে কেঁদে ক্ষমা চান বিতর্কিত ধর্মগুরু

ধর্ষণের দায়ে ২০ বছর জেল হলো রাম রহিম সিংয়ের

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৯ আগস্ট ২০১৭

ধর্ষণের দায়ে ২০ বছর জেল হলো রাম রহিম সিংয়ের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ভারতের স্বঘোষিত ধর্মীয় গুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ২০ বছরের কারাদ- দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) বিশেষ আদালত। সাজা নিয়ে প্রথমে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হলেও আদালতের কর্মকর্তারা পরে বলেছেন, তাকে দুটো মামলার প্রত্যেকটিতে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একটির সাজার মেয়াদ শেষ হলে আরেকটির সাজা শুরু হবে। সেজন্য রাম রহিম সিংকে ২০ বছর সাজা খাটতে হবে বলে আইন কর্মকর্তারা বলেছেন। ভারতীয় দ-বিধির ৩৭৬/৫০৬ ধারায় তাকে এ দ- দেয়া হয়। ২০০২ সালে দায়ের করা এক মামলায় শুক্রবার তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। খবর বিবিসি, এনডিটিভি ও দ্য হিন্দুর। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যজুড়ে টানটান উত্তেজনা আর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে চ-ীগড়ের পাঁচকুলার বিশেষ আদালত সোমবার এ রায় ঘোষণা করে। রাম রহিমের আইনজীবীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। অভিযোগকারী দুই নারীও উচ্চ আদালতে আরও কঠোর শাস্তির আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) রাম রহিমের যাবজ্জীবন কারাদ-ের জন্য আবেদন করেছিল। সিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তারা রাম রহিমের আরও দীর্ঘমেয়াদী কারাদ-ের আবেদন করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার আদালত রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত ঘোষণা করলে তার আশ্রম ‘ডেরা সাচ্চা সৌদার’ ভক্তরা দুই রাজ্যজুড়ে ব্যাপক তা-ব চালায়। এতে অন্তত ৩৮ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হয়। সোমবার হরিয়ানার রোহতক শহরের সুনারিয়া কারাগারে বিশেষ আদালত বসিয়ে রাম রহিমের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক জগদীপ সিং। নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে এ বিশেষ আদালত গঠন করা হয়। দোষী সাব্যস্ত করার পর রাম রহিম বিশেষ এ কারাগারেই আছেন। আদালতের বিচারক শুনানির শুরুতেই বাদী ও বিবাদী দুই পক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ১০ মিনিট করে সময় দেন। এ সময় রাম রহিমের আইনজীবী দাবি করেন, রাম রহিম একজন সমাজকর্মী। জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি কাজ করেন। তাই তার অপরাধকে যেন বিচারক ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন। একপর্যায়ে রাম রহিমও কেঁদে ফেলেন ও বিচারকের কাছে ‘মুঝে মাফ কর দো’ বলে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে তিনি ডেরার অনুসারীদের আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে সিরসায় দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে ভক্তরা। রায় ঘোষণার জন্য এদিন বিচারককে হেলিকপ্টারে কারাগারের বিশেষ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। রোহতকের শহরতলিতে অবস্থিত ওই কারাগারে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে তিন হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যকে মোতায়েন করা হয়। বন্ধ ছিল হরিয়ানার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। প্রতিবেশী রাজ্য পাঞ্জাবেরও কিছু স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়। উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ ও নৈদারেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। রায় উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোহতকে বড় ধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করে বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। বন্ধ ছিল হরিয়ানার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যে কোন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়া ছিল। পূর্ব সতর্কতা হিসেবে ডেরা সাচ্চা সৌদার জ্যেষ্ঠ সদস্যদের আগেই আটক করা হয়েছিল।
×