ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আজকের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সফলতার বীজ বোনেন বঙ্গবন্ধু’

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২৯ আগস্ট ২০১৭

‘আজকের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সফলতার বীজ বোনেন বঙ্গবন্ধু’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বার্থান্বেষী মহল সব সময়ই বলে বেড়ায়, বঙ্গবন্ধু সফল রাজনীতিবিদ ছিলেন, কিন্তু সফল প্রশাসক ছিলেন না। এটি ডাহা মিথ্যে কথা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে তার সাড়ে তিন বছরের প্রশাসনিক সময়কাল বিশ্লেষণ করলেই তাদের কথার অসারতার প্রমাণ পাওয়া যায়। তখনকার প্রকৃত পরিস্থিতি ও বঙ্গবন্ধুর গৃহীত পদক্ষেপগুলোই প্রমাণ করে, তিনি শুধু সফল রাজনীতিক ও স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেন না, ছিলেন একজন সফল প্রশাসক, স্বপ্ন বাস্তবায়নকারীও। আজকের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সফলতার বীজ বুনেছিলেন তিনিই। সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০১৭’ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজক। পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। বক্তব্য রাখেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও সিনিয়র সচিব প্রফেসর ড. শামসুল আলম, জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির (এনএপিডি) মহাপরিচালক কানিজ ফাতেমা, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ। পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, জাতি গঠনের প্রয়োজনীয় সব বৈশিষ্ট্য থাকলেও এ অঞ্চলের মানুষ হাজার বছর ধরে পরাধীন ছিল। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন জাতি দিয়েছেন। হাজার বছর স্মরণ করলেও বঙ্গবন্ধুর এ ঋণ শোধ করা যাবে না। তাই বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখে গেছেন, সেটি বাস্তবায়নে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে। অনুষ্ঠানে শামসুল আলম বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরার পর মাত্র ১৮ দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেছিলেন। দেশ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা সাজাতে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন নামকরা শিক্ষক-গবেষকদের। স্বাধীনতার পরপর কৃষিই ছিল জিডিপির মূল ভিত্তি। প্রথম বাজেটের ৪৭৭ কোটি টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকারও বেশি তিনি কৃষিতে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। এছাড়াও গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, তুলা উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে ওই সময়কার পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সব দূরদর্শী কাজ করেছেন, যা তার সফল প্রশাসক পরিচয়ের জন্য যথেষ্ট। কেএএস মুরশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। ষাটের দশকের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। এদের মধ্যে আমার বাবা খান সারওয়ার মুরশিদও ছিলেন। আমি তখন ছোট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের আমাদের বাসায় প্রায়ই অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন আলোচনায় বঙ্গবন্ধু আসতেন। এসব আলোচনায় অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ড. কামাল হোসেনসহ আরও অনেকেই থাকতেন। বঙ্গবন্ধু খুব গুরুত্ব দিয়ে তাদের কথা শুনতেন। শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বিষয়ে বঙ্গবন্ধু দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর করা চুক্তিমতেই ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশের ভূখ-ের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ হাজার একর যুক্ত হয়েছে। শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ বলেন, সৃষ্টিকর্তা অসাধারণ একজন মানুষ হিসেবেই তাকে আমাদের মাঝে পাঠিয়েছিলেন। কারণ, বঙ্গবন্ধুর শারীরিক ও মানসিক গঠন সাধারণ বাঙালীদের মতো ছিল না। যদিও বঙ্গবন্ধু নিজেকে সাধারণ বাঙালীদের কাতারে নিয়ে গিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন জাতির জনক হিসেবে।
×