ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

নাইকোর দুর্নীতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৭ আগস্ট ২০১৭

নাইকোর দুর্নীতি

অপরাধকে ঢেকে রাখা যায়নি। শাক দিয়ে যেমন মাছ ঢাকা যায় না আর আগুনও যেমন থাকে না ছাই চাপা, তেমনি নাইকো রিসোর্সের অপকর্মও আর অনুদ্ঘাটিত রইল না। দুর্নীতির ডিপো যে প্রতিষ্ঠানটি তা আবারও প্রমাণিত হলো। কানাডার আদালতে প্রমাণিত হবার পর এবার বাংলাদেশের আদালতেও প্রমাণিত হলো প্রতিষ্ঠানটির দুর্নীতির দুরারোগ্য ব্যাধির কাহিনী। কানাডীয় এই প্রতিষ্ঠানটির অসাধুতা, আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ দুর্নীতির সকল ঘটনা এখন উন্মোচিত হলো। বাংলাদেশে গ্যাস ক্ষেত্রের কাজ পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক পথ ও পন্থা ছেড়ে অস্বাভাবিকতা তথা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিল। ভেবেছিল, পার পেয়ে যাবে অনায়াসে। কিন্তু হা হতোস্মি। সকল কীর্তি তার দিবালোকের মতোই পরিষ্কার এখন। কাহিনীর উভয়পিঠও শুধুই কেলেঙ্কারিতে পরিপূর্ণ। বাপেক্সের সঙ্গে নাইকোর যৌথ উদ্যোগের চুক্তি এবং পেট্রোবাংলার সঙ্গে নাইকোর গ্যাস সরবরাহ ও কেনাবেচার চুক্তির মধ্যে দুর্নীতি প্রশ্রয় পেয়েছিল নিয়েছিল আশ্রয় হাইকোর্ট তাই চুক্তি দুটি বাতিল ঘোষণা করেছে এই মামলার রায়ে। এর আগে কানাডায় একটি আদালতে দায়ের করা মামলায় নাইকো স্বীকার করেছিল যে, বাংলাদেশে কাজ পাবার জন্য ঘুষ প্রদান করেছিল। চুক্তি দুটি করা হয়েছিল দুর্নীতির মাধ্যমে, যা শুরু থেকেই ছিল বাতিলযোগ্য। রায়ে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জের ছাতকের টেংরাটিলায় ২০০৫ সালে বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ আদায় সংক্রান্ত নিম্ন আদালতে চলমান মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নাইকোকে কোন অর্থ প্রদান করা যাবে না। চুক্তি দুটির আওতায় কানাডা ও বাংলাদেশে নাইকোর সব সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে ফেরত যাবে। এছাড়া কুমিল্লার বাঙ্গুরায় নয় নম্বর ব্লকের যে সব সম্পত্তি রয়েছে, তাও জব্দের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অনুকূলে যাবে। বাংলাদেশে নাইকো এখন কেবল কুমিল্লার বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস উত্তোলনের কাজে অংশীদার। এছাড়া ছাতক ও ফেনী গ্যাস ক্ষেত্রের সঙ্গে তারা যুক্ত। তবে ছাতকে গ্যাস উত্তোলনে কূপ খননকালে অগ্নি-দুর্ঘটনায় এটি পরিত্যক্ত হয়। নাইকোর বিরুদ্ধে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালতেও একই অভিযোগে মামলা চলছে। মামলায় শুনানি শেষ হবার পর এখন অপেক্ষা রায়ের জন্য। নাইকোর দুর্নীতির একই অভিযোগ নিয়ে খালেদা জিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা আরেকটি মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে চলমান রয়েছে। বার বার মামলার তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে অভিযুক্তদের বাহানার কারণে। বিএনপি-জামায়াত তথা খালেদা-নিজামীর শাসনকালে নাইকো চার বিলিয়ন ডলারের দুটি চুক্তি করে। এজন্য খালেদার এক মন্ত্রীকেও ঘুষ দেয়া হয়েছিল। এতদিন ধারণা করা হতো অযথাই যে, বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে সরকার কোন চুক্তি করলে তা যতই জনস্বার্থবিরোধী হোক না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। সরকার তা বাতিল করতে পারবে না। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। পেট্রোবাংলা নয় বছর আগে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছিল। নাইকো ফেনী থেকে গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ করলেও ২০০৫ সালে ছাতকে কূপ খনন করতে গিয়ে দু’বার বিস্ফোরণ ঘটায়। খালেদা-নিজামীর প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন ১ লাখ ৯০ হাজার ডলার দামের একটি গাড়ি ও বিদেশ সফরের জন্য নগদ ৫ হাজার ডলার ঘুষ নেয়। ২০০৬ সালে কানাডার পুলিশ বাংলাদেশে এই অভিযোগ তদন্তকালে অবহিত হয় যে, ছাতকে কাজ পাওয়ার জন্য একজন লবিস্টকে ৪০ লাখ ডলার ঘুষ দিতে সম্মত হয় এবং কিছু লেনদেনও হয়। কানাডার আদালতে নাইকো ঘুষ-দুর্নীতির কথা স্বীকারের পর আদালত ৯৪ লাখ ৯৯ হাজার কানাডীয় ডলার জরিমানার দ- দেয় নাইকোকে। নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। তবে মামলার গতি অতি শ্লথ। বেগম জিয়া ও তার পরিষদরা গলা হাঁকতেন, তারা দুর্নীতি করেননি। কিন্তু সে যে মিথ্যাচার, এই রায়েই তা আবার প্রমাণিত।
×