ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৬ আগস্ট ২০১৭

চাঁপাইয়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ শেষ পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ শুরু হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায়। ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৫ ওয়ার্ডে এ পানি সরবরাহ করা হবে। পানি হবে সম্পূর্ণভাবে আর্সেনিক ও আইরন বা লোহামুক্ত। শোধনাগারটি প্রতি ঘণ্টায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি শোধনপূর্বক পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ডের ৭৫ শতাংশ মানুষের জন্য সরবরাহ করা হবে। এটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি প্রতিশ্রুত প্রকল্প। পৌরবাসী মহানন্দা নদী থেকে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনের মাধ্যমে আর্সেনিক ও আইরনমুক্ত পানির সুবিধা পাবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভাকে মডেল পৌরসবায় রূপদানের ঘোষণা প্রদান করেন। যার ধারাবাহিকতায় তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতিকরণে (সেক্টর) প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ড্রেনের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। তার (প্রধানমন্ত্রী) অঙ্গীকার বাস্তবে রূপদানে জেলা শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় মহানন্দা নদীর পানি পরিশোধনের লক্ষ্যে সারফেস ট্রিটমেন্ট প্লাটসহ ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ লাইনের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। তড়িঘড়ি ২০ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিলে তারা বরাদ্দ অর্থ নিয়ে জুয়াখেলা শুরু করেন। আধুনিক পানি শোধনাগার নির্মাণে পৌরসভা হুজরাপুরস্থ মহানন্দা নদীসংলগ্ন প্রায় এক একর জমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল শাখার কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল প্রকল্পটিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে ফেলে কালক্ষেপণ করতে শুরু করে। প্রথমেই যথাসময়ে টেন্ডার হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের পছন্দের এক ঠিকাদার (রাজশাহী) কে কাজ দেয়ার ছক আটতে গিয়ে অনেক দেরি করে ফেলে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের গোচরীভূত হলে উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। তার পরেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ শোধনাগার নির্মাণে সাত বছর পার করার পর আরও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বড় ধরনের থ্রেট ও হুকুম পাবার পর তড়িঘড়ি আগস্টের ১৭, তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম ভাগে উদ্বোধন করেন। যার কারণে বিদ্যুত বিভাগ বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। বিদ্যুত বিভাগের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশল বিভাগ উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করলে বিদ্যুত বিভাগ প্রয়োজনীয় রসদ সংগ্রহ সরবরাহ নিয়ে টানাপোড়নের মধ্যে পড়ে। কারণ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ বিদ্যুতকে কোন ধরনের সময় না দিয়ে ইচ্ছামতো উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ করলে তারা বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের থ্রেটে চাঁপাই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে নিজেদের রক্ষা করতে বাধ্য হন তড়িঘড়ি উদ্বোধনের। যদিও কাজের মাত্রা নিয়ে কোন শঙ্কা ছিল না জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তারা প্রায় সব ধরনের কাজ শেষ করে এনেছিল। তার পরেও তারা দেরি করছিল উদ্বোধনের। আধুনিক পানি শোধনাগার নির্মাণের ফলে সম্প্রসারণ প্রকল্পে ২.১০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন, ৩৫ কিলো সরবরাহ লাইন সহ ১টি ওভার হেড ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে পৌরসভার ২৪৬০ বর্গ কিলোমিটারে ২ লাখ ৩৪ হাজার লোকের বসবাস। তাদের জন্য ২১১০টি হস্তচালিত নলকূপ, ১১১টি তারা পাম্প ও ১৮টি গভীর নলকূপ ছিল। তার মধ্যে আর্সেনিকসহ নানা কারণে ১১টি গভীর নলকূপ বন্ধ ছিল বা আছে। মাত্র ৭টি গভীর নলকূপ দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করার পরেও অর্ধেক মানুষ সুপেয় বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত ছিল। বছরের ছয় মাস খাবার পানি নিয়ে হাহাকার ছিল এ পৌরসভায়। ৪২২৪টি পানি গৃহ সংযোগ থাকলেও কেউ পানি না পাওয়ার কারণে এ পানি শোধনাগারের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের দিন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বিশ্বাস ঘোষণা দেন শুধু চাঁপাই পৌরসভা নয় সমগ্র সদর উপজেলায় খুব শীঘ্রই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আশা পোষণ করে বলেন এ সরকারের মেয়াদের মধ্যে এ কাজ শুরু করা হবে। এ দিকে পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম জানান খুব শীঘ্রই আরও কয়েক হাজার নতুন কানেকশন দেয়া হবে পৌর এলাকার বাসাবাড়িতে।
×