ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যৌতুকের দাবি মেটাতে না পেরে গৃহবধূর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৫ আগস্ট ২০১৭

যৌতুকের দাবি মেটাতে না পেরে গৃহবধূর আত্মহত্যা

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর, ২৪ আগস্ট ॥ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে কিশোরী হোসনেয়ারার প্রেমের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তার ওপর শুরু হয় যৌতুকের চাপ ও নির্যাতন। স্বামী, শাশুড়ি ও ননদের চরম অপমান, মানসিক যন্ত্রণা, নির্যাতন ও যৌতুকের বলি হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে কিশোরী গৃহবধূ হোসনেয়ারাকে (১৭)। বৃহস্পতিবার দুপুরে হোসনেয়ারার বাড়ি গিয়ে বাবা-মা ও স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে গৃহবধূর করুণ মৃত্যুর কথা। নিহত গৃহবধূ হোসনেয়ারা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়নের চর মার্টিন গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে। নিহতের বাবা আলী হোসেনসহ স্বজনরা জানায়, ২০১৩ সালে কালকিনি ইউনিয়নের চরশামছুদ্দিন গ্রামের মোঃ ছিদ্দিকের ছেলে স্বপনের সঙ্গে হোসনেয়ারার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ২৯ জুন তারা পালিয়ে আদালতে গিয়ে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করে। ওই সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর। তখন সে স্থানীয় তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে যায় হোসনেয়ারা। কিছুদিন যেতে না যেতে শুরু হয় শাশুড়ি, ননদ ও স্বামীর অত্যাচার আর মানসিক যন্ত্রণা। এরই মধ্যে বিদেশ যাওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে স্বামী স্বপন আদায় করে ১লাখ টাকার যৌতুক। দাবি করে আরও একভরি স্বর্ণলঙ্কার। তার শাশুড়ি খাদিজা বেগম, ননদ নাজমা ও আছমা অকারণে প্রায় প্রতিদিন গালমন্দ অমানুষিক যন্ত্রণা দিতে থাকে। খাবার না দেয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। গত মে মাসে হোসনেয়ারার এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে ওই শিশু অবৈধ বলে প্রচার করতে থাকে স্বামী, শাশুড়ি ও ননদরা। দীর্ঘদিন থেকে এমন অপবাদ সইতে না পেরে ১২ আগস্ট শনিবার সে রাগ-অভিমান করে বাবার বাড়িতে চলে আসে। ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে গেলে সে যাবে না বলে জানায়। পরে স্বামী স্বপন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে স্ত্রীকে সুখে রাখার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যায়। ওই রাতে কিশোরী গৃহবধূকে মারধর করে স্বামীসহ শশুরবাড়ির লোকজন। রাতে খাবারও দেয়নি। এসব সইতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে হোসনেয়ারা আগাছানাশক (বিষ বিশেষ) পান করে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে চিকিৎসা করায়নি। পরের দিন ১৬ আগস্ট বুধবার হোসনেয়ারার বাবা আলী হোসেন শ্বশুরবাড়িতে চিকিৎসক নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায়। ২০ আগস্ট তাকে কমলনগর উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয় স্বামী। ভর্তি না করিয়ে কিছু ওষুধ কিনে তাকে ফের বাড়িতে নিয়ে যায়। ওই রাতেই হোসনেয়ারার মৃত্যু হয়। ২১ আগস্ট সকালে পুলিশ খবর পেয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে ২২আগস্ট দাফন করা হয় তাকে। স্বজনরা জানিয়েছেন, মৃতদেহ গোসলের সময় পিঠে ও কোমরের নিচে কালো জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। মা ছকিনা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের মৃত্যুর খবর শোনায়নি। পাশের বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে গিয়ে দেখি মেয়েকে লেপ দিয়ে ঢেকে রেখেছে। এ সময় স্বামী ও ননদরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। চার মাস বয়সী নাতিকে লুকিয়ে রাখে। বাবা আলী হোসেন বলেন, আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এ মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করব। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। এ ব্যাপারে জানতে স্বামী স্বপন ও শাশুড়ি বিবি খাদেজার মোবাইলে একাধিকবার কল করেও ফোন বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঘটনার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন পলাতক থাকায় তাদের আটক করে জিজ্ঞাসা করা সম্ভব হয়নি।
×