ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকর দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৪ আগস্ট ২০১৭

নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকর দাবি

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় আপীল বিভাগের ডেথ রেফারেন্সেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নুর হোসেন, র‌্যাবের চাকরিচ্যুত অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এমএম রানাসহ ১৫ আসামির মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। ১১ আসামিকে মৃত্যুদ- থেকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয় এবং ৯ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও বহাল রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ, আইনজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দ্রুত এ রায় কার্যকর করে নারায়ণগঞ্জকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি জানান। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাত খুন মামলার নিম্ন আদালতের যে রায়টি হয়েছিল উচ্চ আদালতেও সেটি গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি। কারণ, যারা সাত খুন মামলার সঙ্গে জড়িত সেই তারা শুধু হত্যাই করেনি, আমাদের সমাজকেও কুলষিত করেছে। তারা মাদক ব্যবসায়ী, তারা মানুষ খুনের ব্যবসা করেছে। তারা নদী দখল করেছে, নদীর মাটি বিক্রি করেছে। এসব বিষয়ে তারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আমি মনে করি নি¤œ আদালতের রায়টিই উচ্চ আদালতে বহাল রাখা দরকার ছিল এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ ধরনের রায় হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। সাত খুনের প্রধান প্রধান যে আসামি তাদের ফাঁসির আদেশ বহাল আছে। আমরা অতিদ্রুত এ রায় কার্যকর করার দাবি জানাই। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাত খুন মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, সাত খুনের পর থেকেই আলোচিত এই হত্যাকা-ের বিচারের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে আন্দোলন করেছি। দীর্ঘদিন আইনী লড়াই চালিয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম নি¤œ আদালতে যে ২৬ জনের মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল সেই রায় বহাল থাকবে। কিন্তু তারপরও বিচার বিভাগের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা ও পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। বিচার বিভাগ যে রায় দিয়েছে সেই রায়ের প্রতিও আমাদের সম্মান রয়েছে। তবে আরও বেশি খুশি হতাম যদি ২৬ জনের ফাঁসির দ- বহাল থাকত। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, এ রায় আমাদের প্রত্যাশিত রায়। কেউ আইনের উর্ধে নয়। নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। আপীল মামলার এ রায় থেকে দায়মুক্তি ঘটল। নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি হত্যা মামলার বিচার আমরা চাই। যেমন সাত খুনের রায় আমরা পেয়েছি। এভাবেই শান্তির নারায়ণগঞ্জ গড়ে উঠতে পারে, যেখানে আইনের শাসন থাকবে। তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির প্রতি আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী কৃতজ্ঞ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুত করে আপীল ও ডেথ রেফারেন্সে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হলো। তেমনইভাবে আপীল ডিভিশনে যদি আসামিরা আপীল করে এটাকেও সর্বোচ্চ ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করে রায়টাকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। মিজমিজি পাইনাদী রেকমত আলী হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও নিহত নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এমএ মতিন বলেন, সাত খুন মামলায় মূল আসামিদের মৃত্যুদ- হয়েছে। রায়টি দ্রুত কার্যকর করা হোক। দ্রুত রায়টি কার্যকর করা হলে অপরাধীরা বুঝতে পারবে এ সরকারের আমলেও বড় বড় বিচার আগেও হয়েছে এখনও হচ্ছে। সাত খুনে নিহত অসহায় ৫ পরিবারের প্রতিক্রিয়া নিহত তাজুল ইসলামের ছোট ভাই রাজু আহমেদ জানান, সাত খুনে শুধু সাত ব্যক্তিকেই খুন করা হয়নি। সাতটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কারণ, এই সাতজনই ছিল পরিবারে একমাত্র উপার্জন ব্যক্তি। রাজু রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন জানান, সাত খুনের রায়ে ডেথ রেফারেন্স ও ্আপীল বিভাগের রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কারণ, নি¤œ আদালত সেই নুর হোসেনের সহযোগীদের ফাঁসির দ- দিয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে নুর হোসেনের সহযোগীদের যাবজ্জীবন কারদ- হয়েছে। এই কারণে আমি কিছুটা হতাশ। কারণ নুর হোসেনের সহযোগীরা জেলে বসে ষড়যন্ত্র করবে। তাই আমাদের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমি খুশি। তিনি উচ্চ আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানিয়ে বলেন, যাতে আমার জীবদ্দশায় ছেলে হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর দেখে যেতে পারি। মরে গেলে যেন আত্মা শান্তি পায়। নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের প্রাইভেটকার চালক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শামসুন নাহার নূপুর বলেন, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি, দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হবে। দ্রুত এ রায় কার্যকর হলে আমরা সাতটি পরিবার খুশি হব। সাত খুনে আমাদের সাতটি পবিারকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের নিহত গাড়িচালক ইব্রাহিমের স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, আমরা এ রায়ে খুশি হয়েছি। এখন চাই আমরা দ্রুত রায় কার্যকর হোক। আমার স্বামীকে তারা হত্যা করে আমাদের একেবারে নিঃস্ব করে দিয়েছে।
×